1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কলকাতার নতুন মেয়র ফিরহাদ হাকিম

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়
২৩ নভেম্বর ২০১৮

ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে কাজের ক্ষতি হচ্ছে৷ তাই সরে যেতে হলো কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে৷ তাঁর জায়গায় এলেন ফিরহাদ হাকিম৷

https://p.dw.com/p/38mjm
কলকাতার নবনিযুক্ত মেয়র পশ্চিমবঙ্গের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমছবি: picture-alliance/ZumaPress

শোভন চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়ে কলকাতার নতুন মেয়র নিযুক্ত হলেন পশ্চিমবঙ্গের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম৷ ডেপুটি মেয়র হলেন কাউন্সিলর অতীন ঘোষ৷ বৃহস্পতিবার কলকাতা পুরসভায়, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তৃণমূল কংগ্রেস দল এই সিদ্ধান্ত নিলো এবং মুখ্যমন্ত্রীই সেকথা জনসমক্ষে ঘোষণা করলেন৷ মমতার একেবারে ঘনিষ্ঠ বৃত্তের অন্যতম, অভিজ্ঞ এবং জনপ্রিয় রাজনীতিক ফিরহাদ ওরফে ববি হাকিমের এই নির্বাচন খুব একটা অপ্রত্যাশিত ছিল না৷

এর আগে শোভন চট্টোপাধ্যায় যখন মেয়র হয়েছিলেন, তখন তাঁর নির্বাচনও একই যুক্তি মেনে হয়েছিল, যে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবথেকে আস্থাভাজনদের একজন ছিলেন৷ এবং আক্ষরিক অর্থেই তৃণমূল নেত্রীর কাছের লোক, যাঁদেরকে নেত্রী নিজের ভাই বলেই মনে করেন৷ ভ্রাতৃদ্বিতীয়ায় নিজের সহোদর ভাইদের সঙ্গে এক সারিতে বসিয়ে ভাইফোঁটা দেন৷ বেশিদিন আগের কথা নয়, কলকাতায় একটি নবনির্মিত সুইমিং পুলের উদ্বোধনে গিয়ে, নেহাতই রসিকতা করে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ঠেলে পুলের জলে ফেলে দিয়েছিলেন মমতা৷ সব খবরের কাগজে ছাপা হয়েছিল সেই ছবি৷

এবারও শোভনকে জলেই ফেললেন মমতা, তবে হাসতে হাসতে নয়, বেদম চটে গিয়ে৷ শোভনের হাতে ছিল দুটি মন্ত্রিত্ব৷ সে দুটিই কার্যত কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাঁর হাত থেকে৷ কলকাতার মেয়রের পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়েছে৷ এবং এই আচমকা ঘটনার আগে, প্রকাশ্য মঞ্চে ক্রুদ্ধ মমতাকে তিরস্কার করতে দেখা গেছে শোভনকে৷ মন্ত্রিত্ব, মেয়রের পদ, সব হারিয়ে শোভন আপাতত জলেই পড়েছেন৷ এমনকি নিজের পুরসভার আসনটিও এখন ববি হাকিমকে ছেড়ে দিতে চান অভিমানী শোভন৷ যেহেতু পুর আইন অনুযায়ী পুরসভার যে কোনো একটি আসনে জিতে কাউন্সিলর হয়ে আসতে হবে বিধায়ক ববি হাকিমকে৷

তবে মমতা যতটা ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন শোভনের ওপর, নতুন মেয়রের নাম ঘোষণার সময় মনে হলো, সেই রাগ চলে গিয়ে তিনি অনেকটাই নরম হয়েছেন৷ আর শোভনও দল ছাড়ার প্রশ্নে সরাসরি ‘‌না'‌ বলে টিভিতে বলেছেন, তাঁর জীবনে নিজের মা-বাবার পরেই ‘‌দিদি'‌ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্থান৷ মমতাও বলেছেন, দলের কোনো বিরোধ নেই শোভনের সঙ্গে৷ কিন্তু শোভন ব্যক্তিগত সমস্যায় এখন বিব্রত৷ তাই তাঁকে দায়িত্ব থেকে আপাতত অব্যাহতি দেওয়া হলো৷

Sovan Chatterjee
শোভন চট্টোপাধ্যায়, কলকাতার সাবেক মেয়রছবি: picture-alliance/Pacific Press/S. Paul

কিন্তু সমস্যা হলো, সেই ব্যক্তিগত সমস্যাই এখন সবথেকে বেশি গুরুত্ব পেয়ে যাচ্ছে সংবাদ মাধ্যমে এবং জনমানসে৷ গত দু'দিন ধরে টিভি সিরিয়াল হার মেনে গেছে শোভনের ব্যক্তিজীবনের কেচ্ছার কাছে৷ মূল চরিত্র তিনজন৷ অবশ্যই শোভন নিজে, তাঁর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়, যাঁর বিরুদ্ধে তিনি বিচ্ছেদের মামলা এনেছেন৷ এবং এই দম্পতির সম্পর্কে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত তৃতীয়জন, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়৷ পেশায় অধ্যাপিকা এবং একসময় টিভি সিরিয়ালের নিয়মিত অভিনেত্রী বৈশাখীই তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে ভাঙনের কারণ, বলছেন শোভনের স্ত্রী রত্না৷

অন্যদিকে শোভন বলছেন, সংসারে ব্যক্তিগত এবং আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে রত্নার অসততার কারণেই তাঁদের সংসার ভেঙেছে এবং সেই দুঃসময়ে বৈশাখী বন্ধু হিসেবে তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন৷ আর বৈশাখী অত্যন্ত ব্যথিত যে, তাঁর পরম শুভানুধ্যায়ী শোভনদা'র পদ এবং মান-সম্মান খোয়া যাচ্ছে শুধুমাত্র বৈশাখীর সামাজিক মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে৷ এই নিয়ে চাপানউতোর চলছেই টিভিতে এবং আমজনতা, বলাই বাহুল্য যে, গোগ্রাসে খাচ্ছে যাবতীয় বিতর্ক৷

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এমন ঘটনা এই প্রথম যে, ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যা এভাবে মন্ত্রিত্ব এবং পদ ছাড়ার কারণ হয়ে দাঁড়াল৷ মুখ্যমন্ত্রী এবং দলনেত্রী মমতা এর আগে প্রকাশ্যেই শোভনকে তিরস্কার করেছেন যে, তাঁর ব্যক্তিজীবন তাঁর দায়িত্ব পালনের পথে অন্তরায় হয়ে যাচ্ছে৷ এমনটা যেন না হয়, একাধিকবার সতর্ক করেছেন মমতা৷ তার পরেও শোভন শুধরোননি, এমনটাই অভিযোগ৷

প্রশান্ত ভট্টাচার্য

‘‌‘‌অতীতে কোনো এই স্তরের লোক, মানে মন্ত্রী, বা মেয়র, এমনকি মিউনিসিপালিটির চেয়ারম্যানও, ওই পর্যায়ের কোনো রাজনৈতিক নেতার বিবাহিত জীবনের সমস্যাগুলো নিয়ে এবং তার সঙ্গে আরেকজনের সাথে সম্পর্ক, এইসব নিয়ে কারো পদ চলে গেছে, বা পদত্যাগ করতে হয়েছে, এরকম ঘটনা ঘটেনি৷'‌'‌ ডয়চে ভেলেকে বললেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক, প্রবীণ সাংবাদিক প্রশান্ত ভট্টাচার্য৷ দীর্ঘ ৪০ বছর তিনি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে রাজনৈতিক সংবাদদাতা এবং পরবর্তীতে বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করেছেন৷ তিনি মনে করতে পারলেন না, এমনকি সর্বভারতীয় ক্ষেত্রেও এমন কিছু কখনো ঘটেছে বলে৷

তবে একটি ঘটনার উল্লেখ প্রশান্ত ভট্টাচার্য করলেন৷ পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের শিল্পমন্ত্রী ছিলেন বিদ্যুৎ গাঙ্গুলি, তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নানা সমস্যায় বিপর্যস্ত ছিল, যে কারণে তাঁকে পার্টি থেকে একাধিকবার সতর্ক করাও হয়েছিল৷ তার বাইরে পশ্চিমবঙ্গে এমন আর নজির নেই৷

তবে টিভি চ্যানেলে তরজা এখনই থামছে না৷ অভিমানী শোভন চট্টোপাধ্যায় এখন কোন পথে পা বাড়ান, সেদিকেও নজর থাকছে সবার৷