1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে 'এক দেশ এক ভোট' কি সত্যিই হবে?

২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সারাদেশে একসঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের লক্ষ্যে আর এক ধাপ এগোল ভারত সরকার। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাব অনুমোদিত।

https://p.dw.com/p/4kpS1
কাশ্মীরে ভোট দেয়ার পর কালির দাগ দেখাচ্ছেন ভোটদাতারা।
দেশজুড়ে লোকসভা ও বিধানসভা নিরক্বাচন একসঙ্গে করার প্রস্তাবে অনুমোদন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার। ছবি: AB Rauoof Ganie/DW

সাবেক রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। 'এক দেশ এক ভোটের' সম্ভাবনা খতিয়ে দেখে সুপারিশ জানানোর ভার ছিল এই কমিটির উপর। এই কমিটি যে সুপারিশ দিয়েছিল, বুধবার তাতে সিলমোহর দিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা।

সুপারিশে সম্মতি

কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী প্রথম দফায় লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভাগুলির নির্বাচনএকসঙ্গে হবে। দ্বিতীয় দফায় ভোট গ্রহণ করা হবে পুরসভা ও পঞ্চায়েতে। প্রথম ও দ্বিতীয় দফার মধ্যে সর্বাধিক ব্যবধান হতে পারে ১০০ দিনের। সব নির্বাচনের জন্য একটি ভোটার তালিকা নির্ধারিত করার সুপারিশ মেনে নিয়েছে কেন্দ্র।

এই পদক্ষেপ অনুযায়ী ২০২৯ সালে যে লোকসভা নির্বাচন হওয়ার কথা, তার সঙ্গে রাজ্যগুলির বিধানসভা নির্বাচন সেরে ফেলতে হবে। কিন্তু ২০২৯ সালে লোকসভার মেয়াদ শেষ হলেও সব রাজ্য বিধানসভার মেয়াদ ফুরোবে না। 

পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট হবে ২০২৬ সালে। পাঁচ বছর পর ২০৩১ সালে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। অন্যান্য অনেক রাজ্যের ক্ষেত্রে একই সমস্যা রয়েছে। সেক্ষেত্রে কীভাবে পাঁচ বছর পর একযোগে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন দেশজুড়ে সম্পন্ন হবে, তা স্পষ্ট করতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার।

মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, "সরকার দেশ জুড়ে এ বিষয়ে মতৈক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নেবে, সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এরপর শুরু হবে সুপারিশ বাস্তবায়নের আইনি প্রক্রিয়া। তার দায়িত্ব দেয়া হবে একটি বিশেষ কমিটিকে।" তবে ২০২৯-এ সব রাজ্যের বিধানসভার মেয়াদ না ফুরোলে কী একত্রে ভোট হবে, এই প্রশ্নের সদুত্তর বৈষ্ণব দিতে পারেননি

পক্ষে বিপক্ষে

মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কিছু পরেই এক্স হ্যান্ডেলে নিজের মত জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি লেখেন, "দেশের গণতন্ত্রকে আরো মজবুত ও সকলের অংশগ্রহণের পক্ষে অনুকূল করে তোলার লক্ষ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।"

সাবেক রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বাধীন কমিটি ৪৭টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেছিল। এ নিয়ে আগেই আপত্তি জানিয়েছে ১৫টি দল। এর মধ্যে রয়েছে কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে বলেছেন, "সরকারের এই পদক্ষেপ সংবিধান, গণতন্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরোধী। দেশের জনতা একে সমর্থন করবে না। এর মাধ্যমে আসল সমস্যা থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা করা হয়েছে।" তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েনের বক্তব্য, "এটা গণতন্ত্র বিরোধী বিজেপির একটা চমক। এর আগে বিজেপি যেমন ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এটাও সেরকমই একটা উদ্যোগ।"

বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শরিকরাও কেন্দ্রের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বলেন, "বিজেপি আগে তাদের নিজেদের সাংগঠনিক স্তরে সব নির্বাচন একসঙ্গে করুক। তারপর দেশের কথা ভাবা যাবে।"

বিরোধীদের প্রশ্ন, কেন্দ্র যেখানে একযোগে ভোট করানোর কথা বলছে, সেখানে হরিয়ানা ও জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে কেন উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা আসনগুলির উপনির্বাচন করা হচ্ছে না?

সরকার সবসময় ৫ বছর থাকে না, মাঝপথে ভেঙে যায়: শুভময় মৈত্র

গণতন্ত্রের বিপদ?

প্রধানমন্ত্রী এই পদক্ষেপকে গণতন্ত্রের পক্ষে ইতিবাচক বললেও বিরোধীরা এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও পর্যবেক্ষকদের একাংশ এমনই মতামত দিচ্ছেন।

অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্ম (এডিআর)-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার সঞ্চালক উজ্জয়িনী হালিম বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর এটা পরোক্ষ আঘাত। আঞ্চলিক দলগুলির জন্য খারাপ খবর। মানুষ ভিন্ন ভিন্ন নির্বাচনের সময়, ভিন্ন ইস্যুতে ও ভিন্ন নিরিখে ভোট দেয়, এটা নানা গবেষণা থেকে প্রমাণিত। একসঙ্গে নির্বাচন হলে ভোটারদের একটা দলকে ভোট দেওয়ার প্রবণতা বাড়ে, তাদের ভোটদান একপ্রকার প্রভাবিত হয়।"

সরকার মেয়াদ শেষের আগে পড়ে গেলে কী হবে? রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র বলেন, 

"সরকার সবসময় পাঁচ বছর থাকে না, মাঝপথে ভেঙে যায়। অনাস্থা এলে সরকারের পতন হতে পারে। নতুন নীতিতে মাঝেমধ্যে নির্বাচন হওয়ার বিষয়টিকে কেন্দ্র নিরুৎসাহিত করছে। এটা গণতন্ত্রের পরিসরকে কমিয়ে আনতে পারে বলে বিরোধীরা মনে করছেন।"

ব্যয় উন্নয়ন

শাসক-শিবিরের পক্ষ থেকে দুটি যুক্তি জোরালোভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। প্রথমত, সারা দেশে একযোগে নির্বাচন হলে খরচ অনেকটাই কমবে। আলাদা আলাদা নির্বাচন করার ব্যয় বেশি।

উজ্জয়িনী হালিম বলেন, "বড় দলগুলি নির্বাচনে যে ভাবে সারা দেশে খরচ করতে পারবে, ছোট দল তাদের সামনে কোথায় দাঁড়াবে! নির্বাচনের খরচ কমানোর জন্য দরকার রাজনৈতিক দলগুলির উপর লাগাম টানা। খরচ কমানোর জন্য আরো অনেক পথ অবলম্বন করা যায়, এক দেশ এক নির্বাচনে তা হবে না।"

শাসক শিবিরের দ্বিতীয় জোরালো যুক্তি, একযোগে নির্বাচন উন্নয়নের কাজকে মসৃণ করবে। বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন সময়ে ভোট হলে উন্নয়নের গতি থমকে যেতে পারে নির্বাচনী আচরণবিধির জন্য।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মইদুল ইসলাম ডিডাবলিউকে বলেন, "আলাদা ভোট হলে উন্নয়ন থমকে থাকবে না। ১৯৬৮-২০২৪ পর্যন্ত তো উন্নয়ন হয়েছে, যে সময়ে একসঙ্গে নির্বাচন হয়নি। নয়া নিয়মের ফলে জাতীয় দল বা কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিরোধী এবং আঞ্চলিক দলগুলির তুলনায় বেশি সুবিধা পেতে পারে।"

হালিমের মতে, "আচরণবিধির জন্য উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এই যুক্তি মানা যায় না। যে কোনো রাজ্যের নির্বাচনী ইতিহাস দেখুন, পাঁচ বছরে কতবার ভোট হয়েছে আর তার জন্য উন্নয়নের কাজ কতটা থেমেছে? অন্য সময় উন্নয়নের গতি কি খুব সাবলীল?"

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷