তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন
২৯ এপ্রিল ২০১৩কোল-গেট কেলেঙ্কারি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো সিবিআই-এর তদন্ত রিপোর্ট প্রথমে আদালতে পেশ করতে হবে এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট৷ কিন্তু তা অগ্রাহ্য করে আইনমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এবং কয়লা মন্ত্রকের আমলাদের চাপে খসড়া রিপোর্ট প্রথমে তাদের দেখানো হয় এবং তারপর রিপোর্ট চূড়ান্ত করা হয়৷ সুপ্রুম কোর্টকে দেয়া এক হলফনামায় একথা স্বয়ং স্বীকার করেছেন সিবিআই-এর পরিচালক৷ সবথেকে বড় কথা, যে কয়লা মন্ত্রকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তদন্ত রিপোর্ট সেই মন্ত্রকের আমলাদের আগেভাগে দেখানো ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে এক প্রহসনে পরিণত করেছে৷
এই হলফনামা সরকারকে ফেলেছে দারুণ অস্বস্তিতে৷ এবিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট কী অবস্থান নেয় সকলের চোখ এখন সে দিকে৷ অন্যদিকে সিবিআই-এর হলফনামা বিজেপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলির হাতে তুলে দিয়েছে মোক্ষম হাতিয়ার৷ কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো যে স্বাধীন বা নিরপেক্ষ নয়, সরকারের হাতের পুতুল - বিরোধীদের এই অভিযোগ আরো জোরেশোরে উঠেছে৷
দাবি উঠেছে খসড়া রিপোর্ট এবং চূড়ান্ত রিপোর্ট দুটিই প্রকাশ করতে হবে যাতে খতিয়ে দেখা যায় কোনো কারচুপি হয়েছে কিনা৷ পাশাপাশি অবিলম্বে আইনমন্ত্রীর ইস্তফা দাবি করা হয়েছে৷ না হলে সংসদ চলতে দেয়া হবে না৷ প্রধানমন্ত্রী অবশ্য আইনমন্ত্রীর ইস্তফার দাবি নাকচ করে বলেছেন বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন৷
টু-জি স্পেকট্রাম বণ্টনের দুর্নীতির তদন্তে গঠিত সিবিআই এবং যৌথ সংসদীয় কমিটির কংগ্রেস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধেও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠে৷ বিশ্লেষকরা অবশ্য মনে করেন, এটা কোনো নতুন ঘটনা নয়৷ সব শাসক দলই কোনো না কোনোভাবে সিবিআইকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করে থাকে৷ তবে কালির ছিটাটা কংগ্রেস সরকারের গায়ে বেশি৷ রাজনৈতিক স্বার্থে সমাজবাদী পার্টির নেতা মুলায়েম সিং, বিএসপি নেত্রী মায়াবতী বা জগমোহন রেড্ডিকে সিবিআই জুজু দেখিয়ে বশে রাখতে পেরেছে মনমোহন সিং সরকার৷
সিবিআই-এর তদন্তের অভিমুখ স্থির হয় কেন্দ্রের রাজনৈতিক স্বার্থের মুখ চেয়ে, এমনটাই অভিযোগ৷সেজন্যই কী সিবিআইকে লোকাযুক্তের অধীনে আনতে আপত্তি করেছিল সরকার? সিবিআই-এর শীর্ষ কর্তারা অবসর গ্রহণের পর যাতে লোভনীয় পদে পুনর্বাসিত হয়, তারজন্য তাঁরাও সরকারকে বাঁচাতে চেষ্টা করে৷ সিবিআই-এর অবসরপ্রাপ্ত এক অধিকর্তাকে সম্প্রতি নাগাল্যান্ডের রাজ্যপাল করা হয়৷ আদালত তাই অবসর পরবর্তীকালে এই ধরণের নিয়োগ বন্ধ করার সুপারিশ করেন৷ না হলে জাতীয় জীবনের নৈতিকতা ও স্বচ্ছতা থাকে না মনে করেন সমাজ বিজ্ঞানীরা৷