ভারতের সংসদ
২৫ এপ্রিল ২০১৩সাম্প্রতিককালে তারই প্রতিফলন ঘটছে ভারতীয় সংসদে৷
সংসদের ভেতরে হৈ হট্টগোল করে অধিবেশন অচল করে রাখাকে সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হামিদ আন্সারি বলেছেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক গুন্ডামি৷’ অধিবেশন চলাকালীন প্রতিদিন সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে নানা ইস্যু নিয়ে বাদানুবাদ, অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ যেন একটা নিত্য নৈমিত্তিক রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রবণতা ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রের মৃত্যুঘণ্টা৷ সাংসদদের স্রেফ প্রচারের আলোয় থাকার নেশা৷ ন্যাশনাল ইলেকশন ওয়াচ ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস সংস্থার এক কর্তাব্যক্তি মনে করেন, অধিবেশন চলাকালীন যেভাবে দিনের পর দিন সংসদ অচল করে রাখা হচ্ছে তা ভারতীয় গণতন্ত্রের লজ্জা৷ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের স্ব-বিরোধীতা৷
২০১২ সালে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি, টু-জি স্পেকট্রাম নিলাম, দুর্নীতি বিরোধী লোকায়ুক্ত গঠন এবং কয়লা ব্লক বণ্টনে অনিয়ম সম্পর্কে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটার জেনারেলের রিপোর্ট নিয়ে হৈ হট্টগোলে নিম্নকক্ষ লোকসভায় কাজ হয় বরাদ্দ সময়ের মাত্র ৫১ শতাংশ আর উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় মাত্র ৬১ শতাংশ৷ গত বছর সংসদের তিনটি অধিবেশন, বাজেট অধিবেশন, বর্ষাকালীন অধিবেশন এবং শীতকালীন অধিবেশনে সরকার ৯৪টি বিল সংসদে পেশ করে আলোচনা ও পাশ করার জন্য৷ পাশ হয় মাত্র ২২টি বিল৷
এ বছরের বাজেট অধিবেশনের প্রথমভাগে সংসদ অচল করা হয় শ্রীলঙ্কার তামিল ইস্যু ও সমাজবাদী পার্টির নেতা মুলায়েম সিং সম্পর্কে কংগ্রেসমন্ত্রী বেনিপ্রসাদের অপমানসূচক মন্থব্য ঘিরে৷ রাজ্যসভায় গুরুত্বপূর্ণ অর্থবিল পাশ করা হয় বিনা আলোচনায়৷
রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হামিদ আন্সারি সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে সাংসদদের সাবধান করে সংসদের ভেতরে উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য সদস্যকে সাসপেন্ড করার নিয়মবিধি সংশোধনের পক্ষে সওয়াল করেন৷ কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলি তাতে সায় দেয়নি৷ কেন দিল না তা সহজেই অনুমেয়৷
সেন্টার ফর স্টাডি অফ ডেভালপমেন্ট সোসাইটির কর্তাব্যক্তির মতে, সংসদে চিৎকার চেঁচামেচি করলে সহজেই মিডিয়ার আলোয় আসা যায়৷ পরে সেটা তাঁদের রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগে৷ কোনো ইস্যুর গভীরে গিয়ে বিতর্কে যোগ দিতে বেশিরভাগ সাংসদের প্রবল অনীহা৷ গভীরে গেলে সংসদীয় বিতর্কটা হয়ে ওঠে প্রণিধানযোগ্য৷ কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সস্তায় নিজেদের প্রচার এনে জননেতার দায়িত্ব পালন করতে চান অনেক সাংসদ৷ রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তাই সংসদের ভেতর থেকে সরাসরি টিভি প্রচার বন্ধের সুপারিশ করেন৷
নাগরিক সমাজের কেউ কেউ মনে করেন, সাংসদরা সংসদে আসেন, কিছু হৈ হট্টগোল করেন, ভাতা নেন, বাড়ি চলে যান৷ আর দরকার মতো সময়ে সময়ে ভাতা বাড়িয়ে নেন৷ অন্যান্য কর্মচারিদের মতো সাংসদদেরও অবসরগ্রহণের বয়সসীমা থাকা উচিত৷ এটা জনগণের অর্থের অপচয়৷ একদিন সংসদ অচল থাকলে দেড় কোটি টাকার মতো করদাতাদের অর্থের অপচয় হয়৷
ভারতে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার এটা একটা বেদনাদায়ক দিক৷ সাংসদ এক সম্মানিত জননেতা, এটা তাঁর পেশা হতে পারেনা৷ সুশীল সমাজ তাই মনে করে, পরিস্থিতি বদলের জন্য দরকার নির্বাচনী বিধির সংস্কার যাতে যোগ্য প্রার্থী আইনসভায় নির্বাচিত হতে পারেন৷