পরিবেশ রক্ষা
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ভিয়েতনামের উত্তর দিকে অবস্থিত হা লঙ বে গঠিত হয় আজ থেকে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বছর আগে৷ ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কো একে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণা করে৷ কিন্তু গত ২০ বছর ধরে সেখানকার পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে৷
হা লঙ বে যে রাজ্যে অবস্থিত সেই কোয়াং নিন আরও একটি কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ৷ সেখানে রয়েছে কয়লাখনি৷ ভিয়েতনাম সহ চীনের প্রয়োজনীয় জ্বালানির উৎস হলো এই কয়লাখনিগুলো৷ আর ভিয়েতনামের মোট কয়লাখনির প্রায় ৯৫ ভাগেরই অবস্থান এই কোয়াং নিন রাজ্যে৷
সমস্যাটা সেখানেই৷ কয়লাখনি থেকে কয়লা আহরণ, সেখান থেকে খোলা ট্রাকে করে বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা নিয়ে যাওয়া এবং কয়লা আহরণের পর যে বর্জ্য থাকে সেগুলো পরিশোধন না করেই পার্শ্ববর্তী নদীতে ফেলে দেয়া এসব কারণে হা লঙ বে দিন দিন দূষিত হয়ে পড়ছে৷
এছাড়া অনেক পর্যটক যাওয়ার কারণে তাদের ব্যবহৃত বর্জ্যও পড়ে থাকছে হা লঙ বে এলাকায়৷ আবার পর্যটক বেশি হওয়ার কারণে ভিয়েতনামের অন্যান্য অঞ্চল থেকে অনেক লোক জীবিকার তাগিদে ভিড় জমাচ্ছেন সেখানে৷ ফলে বেড়ে যাচ্ছে জনসংখ্যা৷
ক্যানাডার পরিবেশ বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসা টেকনোলজিস বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় কোয়াং নিন রাজ্য সরকারের জন্য সম্প্রতি একটি জরিপ পরিচালনা করেছে৷ তাতে বলা হয়েছে যে, দ্রুত নগরায়ন, কয়লাখনি ও ক্রমবর্ধমান পর্যটন শিল্পের জন্য হা লঙ বে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷
কয়লাখনির কারণে কোয়াং নিন রাজ্যের প্রধান শহর কাম ফা'র রাস্তাঘাট, বাড়িঘর এখন প্রায় সময়ই কয়লার ময়লায় ঢাকা থাকে৷ এমনকি মাঝেমধ্যে সেখানকার খাবার দাবারেও ময়লার উপস্থিতি টের পাওয়া যায়৷
কয়লাখনি থেকে যে অপরিশোধিত পানি বের হয়ে বে'তে ছড়িয়ে পড়ে তাতে উচ্চহারে লোহা, ম্যাঙ্গানিজ ও অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান থাকে যা বে'র পানি দূষিত করে ফেলে৷ এই দূষিত পানিতে কোনো গাছ, প্রাণী বা মাছ টিকে থাকতে পারে না, বলে জানান জার্মানির খনি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কোম্পানি এলএমবিভি'র কর্মকর্তা মিশায়েল ইলিং৷
এই দূষিত পানি শোধন করতেই এগিয়ে এসেছে জার্মানির শিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রণালয়৷ তাদের অর্থায়নে তৈরি হয়েছে একটি পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট৷ দুই মাস আগে এই প্ল্যান্টটি চালু হয়েছে৷ সেখানে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৮০০ ঘনমিটার পানি বিশুদ্ধ করা হয়৷ এগুলো হলো সেই পানি যা এতদিন কয়লাখনি থেকে সরাসরি গিয়ে পড়তো হা লঙ বে'তে৷ ফলে দূষিত হতো সেখানকার পানি৷ এখন এই প্ল্যান্টের মাধ্যমে দূষিত পানিকে বিশুদ্ধ করে তারপর বে'তে ছেড়ে দেয়া হয়৷
তবে সব কয়লাখনির পানি বিশুদ্ধ করতে বর্তমানের পরিচালিত প্ল্যান্টটির কর্মক্ষমতা তিনগুন বাড়ানো প্রয়োজন৷ সে লক্ষ্যে এ বছর থেকেই কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে৷
জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে শুধু প্ল্যান্টটি তৈরি করেই দেয়া হয়নি, সেই সঙ্গে ভিয়েতনামের প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীরা যেন প্ল্যান্টটি ঠিকমতো চালাতে পারেন সেজন্য জার্মান প্রকৌশলীরা তাদের প্রশিক্ষণও দিয়েছেন৷
এদিকে শুধু পানি বিশুদ্ধকরণ করাই নয়, হা লঙ বে'র পরিবেশ ঠিক রাখতে স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করে যাচ্ছেন ভিয়েতনামের নাগরিক কুয়েন ভু৷ এ লক্ষ্যে তিনি গত শতকের নব্বইয়ের দশকে ‘এডুকেশন ফর নেচার ভিয়েতনাম' বা ইএনভি নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন৷ এই সংস্থার মাধ্যমে বেতারে পরিবেশ সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়৷ এছাড়া সংস্থার কর্মীরা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লেকচার দিয়ে থাকেন৷
এসব উদ্যোগ গ্রহণের কারণে গত ১০ বছরে ভিয়েতনামের মানুষের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে বলে ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন ভু৷