1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভয়কে জয় করে বাংলা বর্ষবরণ

১৪ এপ্রিল ২০১৭

অপশক্তির হুমকি ছিল৷ আগাম তৎপরতা ছিল৷ কিন্তু বাঙালি কখনোই অন্ধকারে ভয় পায় না৷ এবারের পহেলা বৈশাখেও তা প্রমাণ হলো৷ নববর্ষের পূণ্য আলোয় অন্ধকার যেন বিদায় নিয়েছে৷ মঙ্গলের জয়ধ্বণি বেজেছে৷

https://p.dw.com/p/2bFSs
Bangladesh feiert Neujahr
ছবি: Picture-Alliance/AP Photo/A.M. Ahad

বাংলা নববর্ষের এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা ছিল নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ৷ ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সারা দেশে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নেওয়া হয়৷ আর হেফাজতে ইসলাম ও আরো কিছু মৌলবাদী সংগঠন এই মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়৷ তারা একে ‘হারাম' বলে ঘোষণা করে প্রতিহতের কথাও বলে৷

কিন্তু আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে চারুকলা থেকে সকাল ৯টায় এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় মানুষের ঢল নামে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে এই শোভাযাত্রায় অপশক্তি আর সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদকে রুখে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান আহ্বান জানানো হয়৷ বলা হয়, অশুভের বিরুদ্ধে আপোষবিহীন দ্বন্দ্বের কথা৷

‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর' – এই মূল স্লোগানে শোভাযাত্রার শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, ‘‘কুসংস্কার, অন্ধকারাচ্ছন্ন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী যে অপশক্তি আছে, মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে আমরা তাদের নির্মূল কামনা করি৷ সেইসঙ্গে শান্তি সমৃদ্ধি ও সফলতা কামনা করি৷''

Mahbub Jaman - MP3-Stereo

চারুকলা অনুষদের ডিন, অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, ‘‘শোভাযাত্রার সামনের দিকে আছে একটা বড় সূর্যের প্রতিকৃতি৷ অন্ধকারকে পেছনে ফেলে আলোর পথে আহ্বান জানাতে এই সূর্য৷ জঙ্গিবাদ আমাদের অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে চায়৷ সেই কালোর আহ্বান থেকে আলোর দিকে মুখ ফেরাতেই এবারের মূল আহ্বান৷''

আর এবারই ঢাকাসহ বাংলাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়৷ অসংখ্য মানুষ নানা রঙের পোশাক পরে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে অংশ নেন৷ মঙ্গল শোভাযাত্রার র‌্যালির পর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একে একে চলতে থাকে নাচ-গান, বাউল সংগীত, লোকসংগীত, রবীন্দ্রসংগীতের আয়োজন৷ বেসরকারি স্কুল কলেজের চেয়ে সরকারি স্কুল কলেজ অপেক্ষাকৃত বেশি উৎসবমুখর ছিল৷ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বৃহস্পতিবার রাত থেকেই আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করে নিজ উদ্যোগে৷

আর সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রমনা বটমূলে সেতার-সরোদ-তবলার লহরীতে নতুন বাংলা বছরকে বরণ করে নেয়া হয়৷ বাদ্যযন্ত্রের বাজনা পরিবেশন, গান, কবিতা আবৃত্তির পর কথা বলেন ছায়ানটের সভাপতি সানজিদা খাতুন৷ তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে বাংলাদেশের পরিস্থিতির বিষয়ে আমাদের মনে মিশ্র অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে৷ একদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ধর্মীয় সন্ত্রাস দমনের সাফল্য এবং দেশের নানাবিধ উন্নয়ন আমাদের মনে স্বস্তি এনেছে৷ অন্যদিকে ধর্ম ব্যবসায়ীদের সন্ত্রাস সম্পূর্ণ নিমূল হয়নি বলে নিরাপত্তহীনতার বোধ থেকে আমরা মুক্ত হতে পারিনি৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘পাঠ্যপুস্তকের বিষয় নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক বিবেচনা এবং চিরায়ত শিল্প ভাস্কর্যকে ‘মূর্তি' আখ্যা দিয়ে ধ্বংস করার হুমকি দেশের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে৷ এই সংকট থেকে দেশকে উদ্ধার করার দায় আমাদের ওপরও রয়েছে৷''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাহবাগ, সোহরোওয়ার্দি উদ্যান, রমনা, বাংলামোটর, কাকরাইলসহ প্রায় ১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় এবার নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়৷ ঢাকার অন্য এলকার অনুষ্ঠানগুলোতেও ছিল নিরপত্তার বাড়াবাড়ি৷ ফলে উচ্ছ্বাসে কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে৷ ব্যাগ, পানির বোতল কিছুই বহন করতে দেওয়া হয়নি৷ ফলে কেউ কেউ বিরক্ত হয়ে ফিরেও গেছেন৷ তবে এর মধ্যেই বাঙালি তো বটেই, ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশিরাও যোগ দিয়েছেন প্রাণের উৎসবে৷

এবারের বর্ষরণ নিয়ে কথা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৯৮৫ সালে যাঁরা যশোরে প্রথম শুরু করেছিলেন, তাঁদের পথিকৃৎ চারুশিল্পী মাহবুব জামানের সঙ্গে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অপশক্তি সব সময়ই বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে৷ কিন্তু তাদের বাধা আমাদের আরো শক্তি দিয়েছে৷ আমরা দ্বিগুণ শক্তিতে ভয়কে জয় করেছি৷ আসলে ওরা ভীত৷ ওরা নতুন আলোতে ভয় পায়৷''

তিনি বলেন, ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরুর তৃতীয় বছরের নববর্ষ ছিল রোজার মাসে৷ তখন ধর্মীয় জিকির তুলে মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধ করতে চেয়েছিল৷ পারেনি৷ সেই মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন বিশ্বের ঐতিহ্য৷ তারপরও এবার ওরা আবার নতুন করে এটা বন্ধের পাঁয়তারা করে আবারও ব্যর্থ হয়েছে৷ বরং এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা আরো বেশি শানিত, আরো বেশি উজ্জ্বল৷''

মাহবুব জামান আরো বলেন, ‘‘বাঙালির বর্ষবরণ সার্বজনীন এক অনুষ্ঠান৷ এটা মমঙ্গলের৷ এর বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রই টেকেনি, টিকবে না৷''