মঙ্গল গবেষণা
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১২এক্সোমার্স
মঙ্গলগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে, কী নেই - এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য নাসা ও ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা, ইসা যৌথভাবে কাজ করার জন্য ২০০৯ সালে একটি চুক্তি করেছিল৷ পরিকল্পনা ছিল ২০১৬ সালে একটি অর্বিটার আর ২০১৮ সালে একটি রোভার পাঠানোর৷ এর মাধ্যমে মঙ্গলগ্রহে মিথেন গ্যাসের সন্ধান করা হতো৷ এছাড়া সেখান থেকে মাটি এনে গবেষণা করা হত৷ মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা তা জানার জন্য এসব গবেষণা জরুরি ছিল৷ যে প্রকল্পের আওতায় এসব পরিকল্পনা করা হয়েছে তাকে বলা হচ্ছে ‘এক্সোমার্স'৷ এর ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় দু'শো কোটি ডলার, যেটা ভাগাভাগি করে দেয়ার কথা নাসা ও ইসা'র৷ কিন্তু এখন নাসা বলছে, তাদের পক্ষে এই খরচ দেয়া সম্ভব হবে না৷ ফলে বিপদে পড়তে যাচ্ছে ইসা৷
হাল ছাড়ছেনা ইসা
সংস্থার এক মুখপাত্র ফ্রাঙ্কো বোনাকিনা জানিয়েছেন, তারা রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন৷ এছাড়া ইসার সব সদস্য রাষ্ট্রকে আরও অর্থ দেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হবে৷
এদিকে নাসা না থাকায় বেড়ে যাবে প্রকল্পের ব্যয়৷ কেননা ইসা'র তৈরি রোভারকে মঙ্গলগ্রহে অবতরণের জন্য যে ‘ল্যাণ্ডার' প্রয়োজন সেটা রয়েছে শুধুমাত্র নাসার কাছে৷ এখন নাসা না থাকলে এই ল্যাণ্ডারও তৈরি করতে হবে৷ ইসা মুখপাত্র বোনাকিনা বলছেন, এর ফলে খরচ কী পরিমাণ বাড়বে সেটা আগামী মাসে জানা যাবে৷ এরপর সেটা জানানো হবে ইসার সব সদস্য রাষ্ট্রকে৷ তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়েই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে৷
বোনাকিনার এই বক্তব্যের সাথে সুর মিলিয়েছেন ইটালীয় মহাকাশ সংস্থার প্রেসিডেন্ট এনরিকো সাগেজে৷ তিনি বলছেন, আর্থিক সংকট থাকলেও প্রকল্প বাস্তবায়নে ইটালি সহযোগিতা করে যাবে৷ তিনি বলেন, মঙ্গলে অভিযান চালানোটা গুরুত্বপূর্ণ৷ এবং এজন্য যে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটাও মেনে চলা প্রয়োজন৷
উল্লেখ্য, ইসার সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা ১৯৷
নাসার বাজেট
প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০১৩ সালে নাসার জন্য এক হাজার ৭৭০ কোটি ডলার প্রস্তাব করেছেন৷ বর্তমানের চেয়ে সেটা প্রায় ১০ কোটি ডলার কম৷ নাসার বাজেট সম্পর্কে জানাতে গিয়ে এর প্রশাসক চার্লি বোল্ডেন সাংবাদিকদের বলেন, মঙ্গল অভিযান নিয়ে অন্যভাবে ভাবতে চায় যুক্তরাষ্ট্র৷
নাসার প্রস্তাবিত বাজেটে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস'এর গবেষণা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে তিনশো কোটি ডলার বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে৷ এছাড়া চাঁদ সহ মঙ্গলগ্রহ ও আইএসএস'এর বাইরের অরবিটে বিজ্ঞানীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য ক্যাপসুল ও রকেট তৈরির কাজে প্রায় ৩৯০ কোটি ডলার দেয়া হচ্ছে৷
গত বছর বন্ধ হয়ে যাওয়া স্পেস শাটল কর্মসূচি সমাপ্ত করতে এবং এতে ব্যবহৃত শাটল তিনটিকে জাদুঘরে পাঠানোর জন্য সাড়ে ৭০ কোটি ডলার দেয়া হবে৷
শাটল কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অ্যামেরিকার বিজ্ঞানীদের আইএসএস'এ যাওয়ার জন্য এখন রাশিয়ার সয়ুজ রকেটের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে৷ পাশাপাশি মহাকাশযান বানানোর জন্য বেসরকারি খাতকে সহায়তা করছে নাসা৷ এজন্য এবার ৮৩ কোটি ডলার দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে৷
উল্লেখ্য, মহাকাশ গবেষণার জন্য প্রায় দশ হাজার কোটি ডলার ব্যয়ে আইএসএস নির্মাণ করা হয়েছে৷ এতে যৌথভাবে বিনিয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, রাশিয়া, জাপান ও ক্যানাডা৷
মহাকাশ প্রযুক্তি উন্নয়ন ও গবেষণা খাতে দেয়া হচ্ছে ৭০ কোটি ডলার৷ এছাড়া কেনেডি স্পেস সেন্টারে ‘লঞ্চিং প্যাড' নির্মাণ ও উন্নয়নের জন্য প্রায় ৬২ কোটি ডলারের প্রস্তাব করা হয়েছে৷ শিক্ষাখাতে দশ কোটি আর নাসার দশটি সেন্টার পরিচালনার জন্য ২৮০ কোটি ডলার দেয়া হবে বলে জানা গেছে৷
প্রেসিডেন্ট ওবামার এই বাজেট প্রস্তাবের সমালোচনা করেছে প্ল্যানেটারি সোসাইটি৷ এটি মহাকাশ বিজ্ঞান বিষয়ক একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ৷ এক বিবৃতিতে তারা বলছে, বাজেটে যে বিষয়গুলো প্রাধান্য দেয়া হয়েছে সেটা ভুল পথের নির্দেশ করছে৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক