প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ সবাই গুরুত্ব দিয়ে শুনবে?
২৩ মার্চ ২০২০বিশ্বের অন্য সব দেশের মানুষের মতো বাংলাদেশের জনগণও এখন নভেল করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে৷ প্রতিটি দিবস, প্রতিটি রজনীই এখন দুশ্চিন্তার৷ এই পরিস্থিতিতেই মহান স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্যই দিয়েছেন সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের৷
বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে মহান স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম৷ তবে এখন সময়টা খুব খারাপ৷ বিশ্বের প্রতিটি দেশের সরকারের সামনেই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মানুষকে করোনার হাত থেকে বাঁচানো৷ এ বড় কঠিন চ্যালেঞ্জ৷ অনেকেই বলছেন, অন্যরকম এক 'বিশ্বযুদ্ধ' পরিস্থিতি চলছে বিশ্বজুড়ে৷
এই যুদ্ধে সব দেশ, সব মানুষই প্রায় সমান অসহায়৷ কারণ, কেউ জানে না কিভাবে ধ্বংস করা যাবে করোনা ভাইরাস৷ ভ্যাকসিনই এখনো আবিষ্কৃত হয়নি, ধ্বংস করবে কী করে!
তাই বাঁচার উপায় মাত্র দুটো৷ সংক্রমণ এড়ানোর সব ব্যবস্থা করা এবং কেউ সংক্রমিত হয়েছে বা হতে পারে মনে হলে, তাকে আলাদা করে নিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসা করা৷
এসব কাজে বাংলাদেশ যে অনেকাংশে ব্যর্থ তা অস্বীকার করলে সত্যের অপলাপ হবে৷
সংক্রমণ অনেক দেশে অনেক বেশি হয়েছে, মৃতের সংখ্যাও বাংলাদেশি খুব বেশি নয়- এসব বলে লাভ নেই৷ বলার আগে তাকাতে হবে ইটালি, স্পেন, ইরান, জার্মানিসহ করোনার আক্রমণে কাবু এবং প্রায়-কাবু দেশগুলোর দিকে৷
করোনা প্রথম আঘাত হেনেছিল চীনে৷ সংক্রমিতের সংখ্যা, মৃতের সংখ্যা প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছিল সেখানে৷ কোয়ারান্টাইন, হোম কোয়ারান্টাইন, আইসোলেশন, লকডাউন ধাপে ধাপে মানুষকে সবগুলো পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যেতে বাধ্য করেছে তারা৷ সব সীমাবদ্ধতা মাথায় রেখেই নিশ্চিত করেছে চিকিৎসা৷ ফলে চীন এখন প্রায় নিশ্চিন্ত৷
ইটালি শুরুতে একেবারেই চীনকে অনুসরণ করেনি৷ একমাস আগে করোনায় সে দেশে প্রথম ব্যক্তির মৃত্যুর পর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কনটে বলেছিলেন, ‘‘"পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷’’
আসল কাজগুলো ঠিকভাবে না করে শুধু মুখের কথায় করোনাকে কিন্তু বাগে আনা যায়নি৷ মাত্র এক মাসের ব্যবধানে মৃতের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে অনেক দূর এগিয়ে গিয়ে ইটালি এখন ধুঁকছে৷
বৃহত্তর স্বার্থে অনেক সময় ‘‘আগে তিতা, পরে মিঠা’’ নীতি উত্তম। তার চেয়েও উত্তম ‘‘কথা কম, কাজ বেশি’’ নীতি৷ তাতে শৃঙ্খলা থাকে, কার্যসিদ্ধিও হয়৷
কিন্তু বাংলাদেশে প্রায় সব সংকটেই আমরা উল্টো চিত্র দেখি৷ দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে শুরুতে খুব বেশি 'দায়িত্বহীন' কথা শুনতে হয়৷ তাতে অবস্থার আরো অবনতি হয়৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার উপক্রম হলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সক্রিয় হতে হয় প্রধানমন্ত্রীকে৷ একেবারে কাম্য না হলেও বহুবার এমনই হয়েছে৷
করোনা-সংকটেও আমরা একই পরিস্থিতির মুখোমুখি৷ সংক্রমিত এবং মৃতের সংখ্যা বাড়ছে৷ দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসছে শঙ্কিত হবার মতো খবর৷
গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এখন বাস্তবতা মেনে বিজ্ঞানসম্মত সিদ্ধান্ত না নিলে থার্ড স্টেজ, অর্থাৎ সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পর্যায়ে চলে যেতে পারে বাংলাদেশ৷ এত ঘনবসতিপূর্ণ দেশে সেই পরিস্থিতি হলে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে৷
আশা করি, ২৫ শে মার্চের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের আলোকে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেবেন৷ সেখানে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় দেশের আরো কোনো কোনো অঞ্চল লকডাউন করা হবে, নাকি সারাদেশেই চলাচলে কিছুদিনের জন্য বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে - এ এ বিষয়েও সরকারের সিদ্ধান্ত জানার আগ্রহ থাকবে সবার৷ এমন সিদ্ধান্তে কালক্ষেপনেরই চরম মাশুল দিচ্ছে ইতালি৷ দক্ষতা, সমন্বয়হীনতা এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থতার মাশুল আর যেন দিতে না হয় বাংলাদেশকে৷