অঙ্গ নিয়ে অবৈধ ব্যবসা
১২ জানুয়ারি ২০১৪অবৈধ অঙ্গ ব্যবসার পরিধিটা অনেক দীর্ঘ৷ জানা গেছে, বাংলাদেশের দরিদ্র গ্রামবাসীরা তাদের কিডনি বিক্রি করে ১৪০০ থেকে ১৯০০ ইউরোয়৷ মিশরের সিনাই মরুভূমিতে আফ্রিকা থেকে আসা শরণার্থীদের দেহ থেকে অঙ্গ বের করে নেওয়া হয়েছে অচেতন না করেই৷ চীনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মানুষদের কিডনি, ফুসফুস ও হার্ট বের করে নেওয়া হয় দণ্ড কার্যকর হওয়ার পরপরই৷ বলকান অঞ্চলের দেশগুলিতেও এই ধরনের অমানুষিক কার্যকলাপ চলে৷
মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কত সংখ্যক অঙ্গ বের করে নেওয়া হয় তার সঠিক পরিসংখ্যান অবশ্য জানা যায়নি৷ তবে বলা যায় যে, গত কয়েক বছরে সংখ্যাটা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে৷
সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি
‘‘অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে সরবরাহের তুলনায় চাহিদা অনেক বেশি৷ অঙ্গ নিয়ে বাণিজ্য সংঘবদ্ধ অপরাধ, যা দ্রুত বাড়ছে৷'' বলেন মানফ্রেড নোভাক ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে৷
এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের রাশ টেনে ধরতে ইউরোপীয় কাউন্সিল গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে৷ এ ব্যাপারে ইউরোপীয় কাউন্সিলে একটি নীতিমালা পাস করা হয়েছে৷ এবছরই এটা কার্যকর করা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে৷
ইউরোপীয় কাউন্সিল এই মহাদেশের সর্বোচ্চ মানবাধিকার সংস্থা৷ এর আওতায় ৪৭টি দেশ রয়েছে৷ এর মধ্যে ২৮ টি দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত৷ ইউরোপীয় কাউন্সিলের কেন্দ্র অস্ট্রিয়ার স্ট্রাসবুর্গে অবস্থিত৷
ধনী রোগীরা সুযোগটা নেন
চীন, পাকিস্তান বা ভারতের ক্লিনিকগুলিতে বিদেশ থেকে আসা ধনী রোগীরা অর্থের বিনিময়ে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করান৷ সেটা কোন জায়গা থেকে আসছে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন না তাঁরা৷
সাধারণত অঙ্গ ব্যবসায়ী ও বিবেকহীন শৈল্য চিকিৎসকরা এই কাজটি করে থাকেন৷ ভবিষ্যতে তাঁদের শাস্তির মুখে পড়তে হবে৷ তবে যারা অর্থের জন্য অঙ্গ বিক্রি করতে বাধ্য হয়৷ তাদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ উল্লেখ্য দরিদ্র অঙ্গ দাতারা অর্থের একটা ক্ষুদ্র অংশই পেয়ে থাকেন৷
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ভেনৎসেল মিশালস্কি ইউরোপীয় কাউন্সিলের এই উদ্যোগকে আন্তর্জাতিক অঙ্গ ব্যবসার বিরুদ্ধে এক মাইলস্টোন বলে অভিহিত করেন৷
এই নীতিমালা অঙ্গ নিয়ে বাণিজ্যকে দমন করতে পারবে কিনা, তা এখনই বলা যায় না৷ কিন্তু এটা একটা সংকেত বয়ে আনবে৷
আইনের প্রফেসর নোভাক মনে করেন, ‘‘এটি মানুষের মর্যদার ব্যাপার৷ দরিদ্রের অধিকার রক্ষার ব্যাপার৷ এটি একটি প্রতীকী পদক্ষেপ হলেও৷'' এছাড়া যে সব অপরাধী চক্র মানুষজনকে অপহরণ করে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিডনি বের করে নেয়, তাদের এমনিতেই ছেড়ে দেওয়া যায় না৷
অনেক দেশে অবৈধ নয়
অঙ্গ নিয়ে বাণিজ্য অনেক দেশে অবৈধ নয়৷ যেমন ইরান ও চীনে৷ চীন সরকার স্বীকার করেছে যে, মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্তদের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য বের করে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়৷ তবে সরকারের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন ২০১৪ সাল থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের অঙ্গ আর প্রতিস্থাপন করা হবে না৷ মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ নোভাক অবশ্য বাস্তবে এটা কতটা কার্যকর হবে সে ব্যাপারে সন্দিহান৷ চীনের অনেকেই এই ‘ব্যবসার' সঙ্গে সম্পৃক্ত৷ বলা যায় এই ক্ষেত্রে একটা বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানই গড়ে উঠেছে৷ পাহারাদার, পুলিশ, পরিবহণকারী, হাসপাতাল অনেকেই আয় করছে এই ব্যবসা থেকে৷ মাফিয়াদের মতো একটা কাঠামো৷ বিশাল এই দেশটির কেন্দ্রের পক্ষে প্রাদেশিক প্রভাবশালী গভর্নরদের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো কিছু করা সহজ নয়৷