মিয়ানমারকে চাপে ফেলতে চায় বাংলাদেশ
২৪ নভেম্বর ২০১৬বৃহস্পতিবার বিকেলে মন্ত্রনালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘এরইমধ্যে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি৷ বুধবার বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড ও মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের আঞ্চলিক কমান্ডার পর্যায়ে একটি বৈঠক হয়েছে৷ এখন বিদেশি কুটনীতিকদের অবহিত করবো৷ তাঁদের আমরা আমাদের অবস্থান জানাবো৷ তাঁরা যাতে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারকে শক্ত চাপ দেয় সেই আহ্বান জানাবো৷'' তবে এ বিষয়ে তিনি আর বিস্তারিত কিছু জানাতে রাজি হননি৷
বাংলাদেশে অনিবন্ধিত মিয়ানমারের নাগরিকদের নিবন্ধন দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘তাঁদের আপাতত উদ্বাস্তু হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে না৷ তবে মিয়ানমারের অনিবন্ধিত নাগরিকদের ওপর একটি জরিপ চালানো হয়েছে এবং সেই জরিপের তথ্য আমাদের কাছে আছে৷''
এখন মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা মুসলমানরা বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেনা জানিয়ে পররাষ্ট্রমমন্ত্রী বলেন, ‘‘তবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা অত্যন্ত দুর্গম হওয়ায় রোহিঙ্গা প্রবেশ ঠেকানো এত সহজ নয়৷ আর কিছু ক্ষেত্রে একান্ত মানবিক কারণে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে৷''
এর আগে বুধবার ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিও মিন্ট থানকে তলব করে ‘চরম উদ্বেগের' কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ এ ব্যাপারে রাষ্ট্রদূতের হাতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক পত্র তুলে দেয়া হয়৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বিপক্ষীয় সচিব কামরুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমরা আমাদের চরম উদ্বেগের কথা জানিয়ে মিয়ানমারের লোকজন যাতে ফেরত যেতে পারে সেই ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছি৷ রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান আশা করছে বাংলাদেশ৷''
একইদিন আরেকটি অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব এম. শহীদুল হক বলেছেন, ‘‘একটি দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে যতটুকু করা দরকার, বাংলাদেশ ততটুকুই করছে৷ রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের জন্য সমস্যার উৎস জানতে হবে৷ এই সমস্যার সমাধান মিয়ানমারকেই করতে হবে৷''
ইউএনএইচসিআর-এর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে কক্সবাজার অঞ্চলের তিনটি ক্যাম্পে ৩২ হাজার রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু রয়েছেন৷ তবে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুর সংখ্যা ওই এলকায় সাড়ে তিন লাখ বলে ধারণা করা হয়৷
অক্টোবর মাস থেকে নতুন করে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানে এ পর্যন্ত ৮৬ জন নিহত হয়েছে বলে জাসিংঘ জানিয়েছে৷
এদিকে বাংলাদেশে ঢুকতে চাওয়া আরো ১৭৭ জন রোহিঙ্গাকে বৃহস্পতিবার ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি৷ এ পর্যন্ত কয়েক দফায় ৭ শতাধিক রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷ তবে নানাভাবে দেড় হাজারের মতো রোহিঙ্গা টেকনাফ এলাকায় ডুকে পড়েছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে৷ আর নৌকায় আসা আরো অনেক রোহিঙ্গা নাফ নদীতে ভাসছে বলে জানাগেছে৷
মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশকে অবশ্যই আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে, কারণ আমাদের প্রতিবেশি দেশ মিয়ানমার এবং সেখানে রোহিঙ্গারা নির্যাতিত হচ্ছে৷ এই চাপ যেন বড় ধরণের চাপ হয়৷ বাংলাদেশের একার পক্ষে এই নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জন্য সবকিছু করা সম্ভব নয়৷ তবে আমরা মুখ ফিরিয়েও থাকতে পারিনা৷ আমাদেরও মানবিক বিষয় দেখতে হবে৷''