মিয়ানমারে ব্যবসা করতে চায় বিশ্বব্যাংক!
৪ আগস্ট ২০২১বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বব্যাংক মিয়ানমারে এখন ব্যবসা দেখছে, তারা মানবতা দেখছে না, গণহত্যা দেখছে না। তারা মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে স্বস্তিতে রেখে ব্যবসার পথ খুলতে চাইছে, কিন্তু তা বাংলাদেশ গ্রহণ করবে না।
মিয়ানমারে নির্যাতন ও গণহত্যার শিকার হয়ে যে বোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টার মধ্যেই বিশ্বব্যাংক নতুন এক প্রস্তাব দিয়েছে। সেই প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, কাজ, চলাফেরা, জমি কেনা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্পৃক্ত হওয়াসহ সব ধরনের আইনি অধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘‘এই প্রস্তাব আমরা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছি।’’
বাংলাদেশ মনে করে, রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত নেয়ার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।
শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের কুতুপালং এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে পরিণত হয়েছে। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত আসা আট লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন সেখানে।
বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, ভাসানচর ও কক্সবাজারেরগুলোসহ ৩৫টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এখন ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর বসবাস। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের বয়সই ১৮ বছরের নীচে। আর এই ১১ লাখের মধ্যে সাত লাখ মিয়ানমার থেকে আসেন ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হামলা ও নির্যাতনের মুখে।
মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেয়ার চুক্তি করে ২০১৮ সালে৷ বাংলাদেশ এ পর্যন্ত মোট ছয় লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা পাঠালেও এখন পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গাকে তারা ফেরত নেয়নি। আর সামারিক জান্তা ক্ষমতা দখল করার পর সেই চুক্তি নিয়ে নতুন করে আর কোনো কথাও হয়নি।
মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহিদুল হক বিশ্বব্যাংকের এই প্রস্তাবকে ‘ফানি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ''ওখানে কিছু কথিত বিশেষজ্ঞ আছে, যারা মাঝেমধ্যে এরকম উদ্ভট কিছু প্রস্তাব দেয়। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঠিকভাবেই এর জবাব দিয়েছেন।’’
তিনি মনে করেন, ‘‘বিশ্বব্যাংক যা বলছে তা মানলে পুরো বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়বে। তুরস্কে গিয়ে দেখেন হাজার হাজার শরণার্থী রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা যখন ভারতে শরণার্থী হয়ে গিয়েছি, আমরা কি স্বাধীনভাবে ক্যাম্পের বাইরে যেতে পেরেছি?’’
তার মতে, বিশ্বব্যাংকের এই প্রস্তাবকে তেমন গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই, তারা হয়ত রোহিঙ্গা শরণর্থীদের শিক্ষাসহ কিছু সুযোগ -সুবিধার কথা বলছে। তারা পুরোপুরি ইন্টিগ্রেশনের কথা বলছে না। সেটা সম্ভবও নয়।
তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, বিশ্বব্যাংক মিয়ানমারে ব্যাবসা দেখেছে। তাই তারা রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর চেয়ে বাংলাদেশেই সুবিধা দিতে চায়, যাতে মিয়ানমারের সামরিক সরকার স্বস্তি পায়।
তিনি বলেন, ‘‘চীনসহ অনেক দেশই এখন মিয়ানমারে ব্যবসা দেখছে। বিশ্বব্যাংকও এখন সেই ব্যবসার অংশীদার হতে চায়। নানা দেশের সাথে তাদের যে চুক্তি হয়, এর মাধ্যমে সেই চুক্তিতে তারা সুবিধা নিতে চায়।’’
তিনি আরো বলেন,‘‘পশ্চিমা দেশগুলো এরইমধ্যে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে অনাগ্রহী হতে শুরু করেছে। প্রচারণা শুরু হয়েছে রোহিঙ্গারা এখানেই (বাংলাদেশে) ভালো থাকবে। আর এই বিশ্বব্যাংক তাদেরই ব্যাংক আসলে। তাই তাদের ব্যবসা বাণিজ্যই দেখছে।’’
তিনি মনে করেন, ‘‘আগের সেই দিন নেই। পদ্মাসেতু নিয়েই তারা কিছু করতে পারেনি, আর এখন কী করবে? তাদের কোনো চাপ বা প্রস্তাবে সায় দেবে না বাংলাদেশ৷’’
তার মতে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি তাদের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে সঠিক কাজ করেছেন।
গত বছরের ডিসেম্বরের ছবিঘর দেখুন...