উত্তপ্ত মিশর
৪ জুলাই ২০১৩আরব বসন্তের উপহার ভেবে যে সরকারের দিকে বড় আশা নিয়ে তাকিয়েছিল মিশরের মানুষ ছয় মাস না যেতেই তাদের দেখা হয়ে যায় আশাভঙ্গের ইঙ্গিত৷ সরকারের এক বছর পূর্তিতে তাই প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুরসির অপসারণের দাবিতে শুরু হয়েছিল নতুন আন্দোলন৷ তার জেরেই বুধবার সেনাবাহিনী মুরসিকে ব্যর্থ ঘোষণা করে, তাঁকে আটক করে দিয়েছে নতুন নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রয়াসকে বাস্তব রূপ দেয়ার ঘোষণা৷ মুরসি সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত বক্তব্যে জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার৷ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন মিশরের প্রধান বিচারপতি আদলি আল-মনসুর৷
মুরসি সরকারের পতনের খবর জানার পরই মিশর জুড়ে শুরু হয়ে যায় বিরোধীদের উল্লাস৷ মুরসি সমর্থকরাও নেমে আসে রাস্তায়৷ অনেক জায়গায় দু’পক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ চলছে৷ সংঘর্ষে এ পর্যন্ত এক সেনাসদ্যসহ নয় জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷
মুরসি সমর্থকরা সহিংস বিক্ষোভে নামতে পারে ধারণা করে কায়রোসহ মিশরের অনেক শহরের রাস্তায় বুধবারই সশস্ত্র সেনা মোতায়েন করা হয়৷ পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে নিয়ে মুরসির দল মুসলিম ব্রাদারহুডের টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচারও বন্ধ করে দেয় সেনাবাহিনী৷ সর্বশেষ সংবিধানকে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে৷ মুসলিম ব্রাদারহুডের মুখপাত্র গেহাদ এল-হাদ্দাদ বার্তসংস্থা এপিকে জানিয়েছেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর ১২ জন ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগীকে সেনাবাহিনী গৃহবন্দী করেছে৷
সেনাবাহিনীর এমন হস্তক্ষেপ অপ্রত্যাশিত নয়৷ রোববার দেশের ইতিহাসের প্রথম নির্বাচিত সরকারের এক বছর পূর্তির দিনেই মুরসির অপসারণের দাবিতে তাহরির স্কয়ারে সমবেত হয় লাখো মানুষ৷ বলা হচ্ছে, দু’বছর আগে স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের পতনের দাবিতে যে জমায়েত হয়েছিল, রোববারের জমায়েত তাকেও ছাড়িয়ে যায়৷ সেদিনই মুরসিকে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয় সেনাবাহিনী৷ টেলিভিশনে প্রচারিত সেনাবাহিনীর সেই ‘চরমপত্র’-কে শুরুতে আমলে না নিলেও বুধবার জোট সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন মুরসি৷
আরব বসন্তের সুফল মিশর এখনো শুধু একটা নির্বাচনের মধ্যেই দেখেছে৷ কিন্তু তার আগে বা পরের ঘটনায় স্পষ্ট হয়েছে কট্টর ইসলামপন্থীদের সঙ্গে অন্যদের বিরোধ৷ চরম বিরোধের বাতাবরণেই সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ৷ গণতন্ত্রের পথ চলা শুরুর আগেই মিশর দীর্ঘ সেনাশাসনের জালে আটকা পড়ে কিনা – সেটাই এখন দেখার বিষয়৷
এসিবি/এসবি(এপি, এএফপি, ডিপিএ)