সংকটে মিশর
৮ ডিসেম্বর ২০১২এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে লক্ষ লক্ষ মিশরীয় বিক্ষোভ দেখিয়ে যাচ্ছেন, প্রেসিডেন্ট মুর্সির স্বীয় ক্ষমতা বাড়ানোর অনুশাসন এবং নতুন সংবিধানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রদর্শন করছেন৷ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট শেষমেষ মুখ খুললেন বটে, কিন্তু তিনি যেটুকু আপোশের মনোভাব দেখালেন, তা আন্দোলনকারীদের প্রত্যাশা থেকে অনেক কম৷ কাজেই মুর্সির ভাষণের স্বল্প পরেই আবার প্রেসিডেন্টের প্রসাদের সামনে ‘‘নিপাত যাও!'' এবং ‘‘খুনি! খুনি!'' ধ্বনি শোনা গেল৷
মুর্সি আন্দোলনকারীদের সাবধান করে দিলেন, অর্থনীতির ক্ষতি না ঘটলে, সম্পত্তির হানি না হলে এবং যানবাহন অব্যাহত থাকলে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে তাঁর আপত্তি নেই৷ নয়ত পুলিশ কড়া পদক্ষেপ নেবে৷ আন্দোলনকারীরা মুর্সির বক্তব্য বুঝেছে এবং তাদের নিজেদের অবস্থান ঠিক করে নিয়েছে, যেমন করিম আল-বেহাইরি:
‘‘আমাদের ওর রাষ্ট্রপতিত্বের অন্ত ঘটাতে হবে৷ আমরা যদি ওর শাসনের অন্ত না ঘটাতে পারি, তবে আমরা মরবো৷ ও মিশরকে বদলে একটা নতুন ইরান করতে চায়৷''
মুর্সি তাঁর ভাষণে সব বিরোধীদলকে শনিবার আলাপ-আলোচনার জন্য প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷ তবে সংবিধান সংক্রান্ত গণভোট পিছিয়ে দিতে কিংবা বাতিল করতে তিনি রাজি নন৷ আর তাঁর বিতর্কিত অনুশাসনের যে একটিমাত্র সূত্র সম্পর্কে তিনি আলোচনা করতে রাজি, সেটি হলো যে, প্রেসিডেন্ট এককভাবে কোনোরকমের আলোচনা ছাড়াই ‘‘বিপ্লব, দেশের ঐক্য এবং জাতীয় নিরাপত্তা'' বজায় রাখার জন্য ‘‘যাবতীয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ'' গ্রহণ করতে পারবেন৷
বিরোধীপক্ষ বিগত কয়েকদিন ধরে বারংবার বলেছে, মুর্সিকে তাঁর গোটা অনুশাসনটাই প্রত্যাহার করতে হবে৷ ওদিকে আল-বেহাইরি'র মতো আন্দোলনকারীদের জন্য রাজনৈতিক আপোশের দিন ফুরিয়েছে: ‘‘ও'সব ঘটার আগে আমরা কোনোভাবে একমত হতে পারতাম, কিন্তু এখন আর তা সম্ভব নয়৷ মুর্সির আর কোনো অধিকার নেই৷ ওর থাকার আর কোনো কারণ নেই৷''
মুর্সির নতুন প্রস্তাব মূলত আরো সময় পাবার প্রচেষ্টা, বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা৷ কেননা পরিস্থিতি আরো চরমে উঠলে আগামী সপ্তাহের গণভোট বিপন্ন হতে পারে৷ বিরোধীদের প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে এক সাবেক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী আব্দেল মোনাইম আবুল ফতু ইতিমধ্যেই মুর্সিকে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের সামনে ঘটনাবলীর জন্য দায়ী করেছেন৷ এখন প্রশ্ন হল, প্রধান বিরোধী দল, মোহাম্মেদ আল-বারাদাই'এর জাতীয় ত্রাণ ফ্রন্ট কি বলবে৷ এখানেও রাজপথের মনোভাবটা শোনার মতো৷ করিম আল-বেহাইরি'র বক্তব্য:
‘‘আমি মনে করি, বারাদাই একজন ভালো মানুষ, কিন্তু তাঁর রাজপথের জনতার সঙ্গে থাকা চাই৷ কেউ যদি নিজের অফিসে বসে থেকে টেলিভিশনে উদয় হতে চায় – ভালো কথা৷ কিন্তু তা'হলে এ কথা বোলো না যে তুমি বিপ্লবের হয়ে কথা বলছ!''
ঠিক যেন সেই কথা শুনেই ন্যাশনাল স্যালভেশন ফ্রন্ট এবার ঘোষণা করেছে, তারা মুর্সির ডাকা সংলাপে অংশগ্রহণ করবে না৷ মোহাম্মেদ আল-বারাদাই স্বয়ং একটি টুইটার বার্তায় বলেছেন: ‘‘আমি সব জাতীয় গোষ্ঠীর প্রতি এই সংলাপে অংশগ্রহণ না করার আহ্বান জানাচ্ছি, কেননা এ কোনো বাস্তবিক সংলাপ নয়৷ আমরা এমন সংলাপের পক্ষে, যা গায়ের জোরি এবং পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে নয়৷''