1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেন সমাজের বিপক্ষে মুসলিমরা?

গ্রেহেম লুকাস২২ মার্চ ২০১৬

প্রথমবারের মতো না হলেও, ব্রাসেলসের হামলা কিছু কঠিন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, যার উত্তর পশ্চিমা বিশ্বকে অবশ্যই দিতে হবে৷ এ সব প্রশ্নের উত্তরে দরকার আত্ম-অনুসন্ধান, লিখেছেন ডয়চে ভেলের গ্রেহেম লুকাস৷

https://p.dw.com/p/1IHSB
গ্রিসের একটি দ্বীপে শরণার্থীরা

তরুণ মুসলমানরা কেন তাদের সমাজের বিপক্ষে দাঁড়াচ্ছে এবং ঠান্ডা মাথায় স্বদেশিদের হত্যা করছে? ইউরোপে জঙ্গি গোষ্ঠী আল-কায়দার ইন্ধনে হামলার শুরুর পর থেকেই এ সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি আমরা৷ এখনও হামলা অব্যাহত আছে৷ তবে এখন মাঠে হাজির তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট' বা আইএস-এর অনুসারীরা৷ ব্রাসেলস বিমানবন্দর, মোলেনবেক সাবওয়ে স্টেশন এবং নভেম্বরের প্যারিস হামলার পর প্রশ্নটির উত্তর জানা জরুরি হয়ে পড়েছে৷ আর এরকম প্রাণহানি থামাতে চাইলে ইউরোপীয় সমাজকে দ্রুত কার্যকর কিছু করতে হবে৷ তবে অল্পতে সমস্যা সমাধানের কোনো উপায় আছে বলে মনে হয় না৷

একটা গুরুত্বপূর্ণ ‘ফ্যাক্টর' হচ্ছে, তরুণ মুসলমানদের ইউরোপের সমাজের সঙ্গে একাত্ম করতে ইউরোপীয়দের ব্যর্থতা৷ অবশ্যই এটার দু'টো দিক রয়েছে৷ অনেক অভিবাসী, তা তারা যে ধর্মেরই হোন না কেন, ইউরোপের মূল সমাজের সঙ্গে একাত্ম হতে খুব কমই আগ্রহ দেখিয়েছেন৷ তারা বরং সমাজের মূলধারা থেকে নিজেদের দূরে রেখেছেন৷ তারা ব্রাসেলসের মোলেনবেকের মতো মহল্লায় দলবেধে বাস করছেন, যেখানে প্যারিস হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আবদেসালাম থাকতেন৷ ফ্রান্স, ব্রিটেন আর জার্মানিতেও এরকম অভিবাসীদের মহল্লার গড়ে উঠছে, যা সবাই দেখছেন৷

সমাজের মধ্যে বিভেদের এক মূল কারণ অভিবাসীদের যে দেশটি তারা আছেন, সেদেশের ভাষা আয়ত্ত্ব করতে না পারা৷ ফলে তারা যে দেশে আছেন সেদেশের মূলধারার সঙ্গে পুরোপুরি সম্পৃক্ত হতে পারেন না৷ আর এটা এক মৌলিক সমস্যার সৃষ্টি করে৷ অভিবাসী পরিবারের সন্তানরা যেদেশে আছেন সেদেশের শিক্ষাব্যবস্থার পুরোপুরি সুবিধা নিতে পারেন না, কেননা সাফল্যের জন্য যতটা ভাষা তাদের শেখা দরকার, ততটা তারা আয়ত্ত্বে আনতে পারেন না৷

পশ্চিমা সমাজের চাকুরিব্যবস্থা প্রকৃতিগতভাবেই কর্মক্ষমতা নির্ভর৷ চাকুরিদাতারা সেসব প্রার্থীদের গুরুত্ব দেন যাদের ভালো শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে এবং কঠোর পরিশ্রম ও প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের অংশীদার হতে আগ্রহী৷ ফলে যারা স্কুলে খারাপ ফলাফল করছেন কিংবা লেখাপড়া শেষ করছেন না তারা ডারউইনীয় নীতি অনুসারে বাদ পড়ে যাচ্ছেন৷ আর এটাই পুঁজিবাদী সমাজের ধরন৷ অভিবাসী সমাজের অনেক তরুণ ছেলে-মেয়েই কম-বেতনের চাকুরি করেন কিংবা বেকার থাকায় নিন্দিত হন৷ কেউ কেউ একপর্যায়ে বেকারভাতা নির্ভর জীবনযাপনের অভ্যস্ত হয়ে পড়েন৷ আর এ সব ঘটে তাদের বেলায় যারা সমাজের মূলধারায় ভিড়তে পারেন না৷

গ্রেহেম লুকাসের ছবি
গ্রেহেম লুকাস, ডয়চে ভেলে

এরকম পরিস্থিতিতে পরা তরুণরা যদি তখন ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের খপ্পরে পড়েন তখন পরিস্থিতিটা কেমন হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়৷ উগ্র ইসলামপন্থি মতাদর্শ হচ্ছে সর্বগ্রাসী৷ ইসলামের বিকৃত ব্যাখ্যা দেয়া উগ্রপন্থিরা তাদের মতাদর্শের সঙ্গে পশ্চিমের উদার নীতিতে বিশ্বাসী সমাজের সংঘাত দেখতে পায়৷ ফলে তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট'-এর মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো পশ্চিমা অবিশ্বাসীদের উপর সন্ত্রাসী হামলাকে প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেয়৷

জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং বেলজিয়ামের মতো পশ্চিমা দেশগুলোর সবাই দেখেছে কিভাবে অসন্তুষ্ট তরুণ মুসলমানরা আইএস-এ যোগ দিতে সিরিয়া যাচ্ছে৷ তারা বিশ্বাস করে ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী মানুষদের হত্যা করার মাধ্যমে তারা এক আজগুবি খেলাফত প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে পারবে, যা আসলে মারাত্মক ভুল ধারণা৷ তারাও এটাও মনে করে, সেখান থেকে ফিরে এসেছে ইউরোপে হামলার মাধ্যমে তারা মধ্যপ্রাচ্য এবং অন্যান্য জায়গায় ‘ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদের' প্রতিশোধ নিতে পারবে৷ আর এটাই আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি৷

আমরা অবশ্যই নিশ্চিত থাকতে পারে যে, পশ্চিমা সমাজগুলো নিরাপত্তা বাড়িয়ে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করবে৷ ইউরোপে পুলিশের পেছনে খরচও ব্যাপক বাড়ানোর আশা আমরা করতে পারি৷ এগুলো ঠিক এবং দরকার৷ নিরাপত্তা আমাদের অধিকার৷ তবে আমাদের আরো কিছু করা উচিত, এবং দ্রুত৷ অভিবাসীদের, তা তারা যে ধর্মেরই হোক না কেন, সমাজের মূলধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে আরো উদ্যোগী হতে হবে৷ কেননা, আমাদের অর্থনীতির ভালোর জন্য তাদের দরকার৷ আমাদের আরো নিশ্চিত করতে হবে যে, তারা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এবং চাকুরিক্ষেত্রে সমান অধিকার পাচ্ছে৷ আর এ জন্য ব্যাপক বিনিয়োগ এবং নতুনভাবে ভাবতে হবে৷ আমরা সেটা না করলে অসন্তুষ্ট মুসলিম তরুণদের সংখ্যা আরো বাড়বে, যাদের কাজে লাগিয়ে উগ্রপন্থিরা আমাদের উদার সমাজে হামলার মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা ধ্বংস করতে চাইবে৷ আর তাতে সকলেরই ক্ষতি৷

বন্ধু, আপনি কি গ্রেহেম লুকাসের সঙ্গে একমত? আপনার মন্তব্য জানান, নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান