বৃদ্ধ নিবাসের জন্য সেবাকর্মী
২৪ মার্চ ২০১৪এই কাজের জন্য নীল-গোলাপি রঙের ডোরা কাটা কেডস জুতা কিনেছেন হুয়োং গো গো৷ কাজের চাপ বেশি থাকলে বৃদ্ধনিবাসের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছোটাছুটি করতে হয় তাঁকে৷ তিনি এই নিবাসের বাসিন্দাদের ধোয়ামোছা করেন, কাপড় পরতে সাহায্য করেন৷ দ্রুত কাজ সেরে এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যেতে হয় তাঁকে৷ দুই একটা কথার আদান-প্রদানের মতো সময়ও থাকে না হাতে৷
‘দ্রুত ও ভালো'
‘দ্রুত ও ভালো' এই হলো জার্মানিতে থাকাকালীন তাঁর মটো৷ জার্মান শেখা ও কাজ করা, এছাড়া আর কোনো কিছু করার সময় নেই৷
হুয়োংকে এক্ষেত্রে ‘পায়োনিয়ার' বা অগ্রগামী বলা যায়৷ ১২০ জন তরুণ ভিয়েতনামিদের সঙ্গে গত বছরের সেপ্টেম্বরে জার্মানিতে এসেছেন তিনি৷ জার্মান অর্থমন্ত্রণালয় ও ভিয়েতনামের শ্রমমন্ত্রণালয়ের একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্পের আওতায় তাঁদের আনা হয়েছে৷ স্টুটগার্ট শহরে তাঁদের ৩৬ জনকে সেবাকর্মী হিসাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে৷ ২০১৬ সাল পর্যন্ত চলবে এই প্রশিক্ষণ৷ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবাকর্মীরা তিন বছর জার্মানিতে কাজ করবেন৷
প্রবীণ নিবাস ‘স্টেনভেল্ডলে' স্টুটগার্ট শহরের এক প্রান্তে বনাঞ্চল ও আঙুর খেতের মধ্যে রোম্যান্টিক এক পরিবেশ অবস্থিত৷ গতাণুগতিক বৃদ্ধাশ্রমের মতো নয় এটি৷
সান্ত্বনার হাত
সকালবেলায় শান্তভাবেই চলছে সবকিছু৷ রেডিওতে হালকা সুরের গান ভেসে আসছে৷ খাবারের জায়গায় পরিচয় হলো ৯১ বছরের মারিয়ার সাথে৷ ‘‘আমি পড়ে গিয়েছি'' অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন তিনি৷ হুয়োং তাঁর কাধে হাত দিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘‘কিছু হবে না৷ আমরা তো আছি আপনার জন্য৷'' তারপর খানিক্ষণ গল্পগুজব হয়৷ বৃদ্ধা জানতেন না কোন দেশ থেকে হুয়োং এসেছেন, বয়স কত ইত্যাদি৷
বৃদ্ধাবাসের বাসিন্দারা অভ্যস্ত যে, সেবক-সেবিকারা বিদেশি উচ্চারণে কথা বলেন৷ এখানকার ৭৫ শতাংশ সেবাকর্মী বিদেশি বংশোদ্ভূত৷ তরুণ ভিয়েতনামিদের পছন্দ করেন সবাই৷ ‘‘তাঁরা এত মিষ্টি৷'' উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন মিসেস শুমাখার৷ মিসেস গ্যার্সট সংযোজন করে বলেন, ‘‘কারো কিছু প্রয়োজন হলে তাঁরা সবসময় সাহায্য করতে প্রস্তুত৷''
ভাষা বড় সমস্যা
হুয়োং ও তাঁর সহকর্মীরা আসার আগে হ্যানয়ে প্রায় ছয়মাস জার্মানির জন্য প্রস্তুতি নেন৷ জার্মান শেখেন এবং ভিডিওতে বৃদ্ধাশ্রম সম্পর্কে একটা ধারণা নেন৷ তাঁর সবাই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবাকর্মী৷ এ জন্য তাঁদের জার্মানিতে প্রশিক্ষণের সময়সীমা কমিয়ে দুই বছর করা হয়েছে৷
‘‘আমাদের রয়েছে শুধু একটি সমস্যা৷ আর তা হলো জার্মান ভাষা৷ হতাশার সুরে বলেন হুয়োং৷ কোনো কোনো দিন এমনও হয়েছে কেউ বার বার কিছু চাইছেন, কিন্তু আমি তা বুঝতে পারছি না৷ তখন মনে হয় আমার জার্মান শিখতে হবে৷ দ্রুত ও ভালো করে৷ সহকর্মী বাখ ট্রান চুয়ান-এরও ভাষা নিয়ে একই সমস্যা৷''
প্রবীণাশ্রমের বাসিন্দারা নীচু স্বরে কথা বলেন৷ তার ওপর আবার আঞ্চলিক সোয়েবিয়ান ভাষায়৷ তাই বুঝতে আরো অসুবিধা হয়৷
ভিয়েতনামে এই তরুণ তরুণীদের পরিবার পরিজনও আশা করে থাকেন৷ আগ্রহভরে জানতে চান, জার্মান ভাষায় কতটা দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছেন তাঁদের সন্তানরা৷
ঘাটতি বৃদ্ধি পাবে
এখনই জার্মানিতে সেবাকর্মীর অভাব প্রকট৷ জার্মান শ্রমমন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে ২০৩০ সাল নাগাদ সংখ্যাটা দুই লক্ষে দাঁড়াতে পারে৷ বিশ্বখ্যাত ব্যার্টেলসমান ফাউন্ডেশনের অনুমান এই সংখ্যা পাঁচ লক্ষও হতে পারে৷ তরুণ জার্মানরা সেবা পেশার প্রতি খুব একটা আগ্রহী নন৷ তাছাড়া ডেমোগ্রাফিক পরিবর্তনের কারণে তরুণ জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে৷ ফলে এক্ষেত্রে সংকট তীব্র হচ্ছে৷
বৃদ্ধাশ্রম ‘স্টেনভেল্ডলে'-র পরিচালক ইয়োখেন মাগের নিশ্চিত যে, বিদেশি কর্মী ছাড়া সেবাক্ষেত্র চালানো সম্ভব নয়৷ এখনই তাঁর বৃদ্ধাশ্রমের জন্য উপযুক্ত সেবাকর্মী পাওয়া সহজ হচ্ছে না৷ তাই তিনি নিজে হাতেই সমস্যার মোকাবেলা করতে চান৷ এপ্রিল মাসের শেষে হ্যানয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর৷ সেখানে নিজেই নানা জায়গায় যোগাযোগ স্থাপন করবেন তিনি৷ খতিয়ে দেখবেন কিভাবে কর্মসূচিটিকে আরো সম্প্রসারিত করা যায়৷ অন্যান্য বৃদ্ধাশ্রমের কর্তৃপক্ষ চীন ও ভারতেও সেবাকর্মী খুঁজছেন৷ ‘‘আমরা আমাদের জন্য ভিয়েতনামকে আবিষ্কার করেছি৷'' বলেন ইয়োখেন মাগের৷ মেকং-এর শিক্ষানবিশদের নিয়ে তিনি খুব সন্তুষ্ট৷