মোদীর জয়ে চিন্তিত ভারতের মুসলমানেরা
২৮ মে ২০১৯আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রওনক শাহী বিজেপি আবারও ক্ষমতায় আসায় উদ্বিগ্ন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, গতবারের চেয়ে এবার মুসলমানেরা বেশি অরক্ষিত হয়ে পড়বে৷ কী হবে তা বোঝা যাচ্ছে না৷ তবে আমি নিশ্চিত খারাপই হবে৷''
পরিস্থিতি সামলাতে মুসলমানদের রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বেড়ে ওঠার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি৷ এছাড়া অর্থনৈতিকভাবেও শক্তিশালী হতে হবে বলে মনে করছেন রওনক শাহী৷
‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড' আশঙ্কা করছে, মুসলমানদের পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে৷ তাই মুসলমানদের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে সবাইকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়েছে তারা৷
আলীগড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আদিল আলভি বলেন, মুসলমানদের প্রতি বৈরী আচরণের প্রমাণ ইতিমধ্যে দেখা গেছে৷ সম্প্রতি নতুন দিল্লিতে এক মুসলমান ব্যক্তিকে টুপি খুলে ফেলতে এবং হিন্দুদের মতো ‘জয় শ্রীরাম' বলতে বাধ্য করা হয় বলে জানান তিনি৷
এবারের নির্বাচনে মোট ২৭ জন মুসলমান সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন৷ ৪৩৭টি আসনে প্রার্থী দেয়া বিজেপি সাতজন মুসলমান প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিল৷
সাংসদ নির্বাচিত হওয়া ২৭ জন মুসলিম প্রার্থীর একজন আসাদউদ্দিন ওয়েসি৷ তিনি হায়দ্রাবাদের এআইএমআইএম দলের প্রধান৷ এই দলকে তিনি সর্বভারতীয় দলে পরিণত করতে চান৷ ‘‘মুসলমানরা আর কতদিন তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোকে ভোট দেবে? তারা বিজেপিকে হারাতে সমর্থ নয়৷ ফলে আমাদের কৌশলে পরিবর্তন আনতে হবে৷''
তবে হায়দ্রাবাদের মাওলানা আজাদ ন্যাশনাল উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আফরোজ আলম মুসলমানদের নিয়ে গঠিত দলের সাফল্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘মুসলমানদের ২৫টি দল এখনই আছে৷ কিন্তু তারা বড় সাফল্য দেখাতে পারেনি, কারণ, মুসলমানরা মুসলমানদের ভোট দিতে আগ্রহী নয়৷''
আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মোহাম্মদ সাজ্জাদ মনে করেন, মুসলমানদের দল থেকে সংসদে প্রতিনিধি গেলেও তাদের কথা শোনা হবে না৷ ‘‘রাজনৈতিকভাবে মুসলমানরা কিছু করতে পারবে না৷ এটা সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্ত যে, তারা মুসলমানদের সঙ্গে নেবে কিনা,'' বলেন তিনি৷
মোদীর বক্তব্য
নির্বাচনে জয়ের পর মোদী দুটি বক্তব্য দিয়েছেন৷ দুটিতেই তিনি মুসলমানদের আশ্বস্ত করা চেষ্টা করেছেন৷ বিজেপির সদরদপ্তরে দেয়া বক্তব্যে তিনি সংখ্যালঘুদের আস্থা অর্জনে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন৷ এছাড়া সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক কথাবার্তা এড়িয়ে চলতে সাংসদদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷
এদিকে, ভারতে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় সংগঠন জমিয়াত উলামা-ই-হিন্দ (জেইউএইচ) বিপুল জয়ের জন্য মোদীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷ সংখ্যালঘুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের বিষয়ে নজর রাখতে মোদীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জেইউএইচ৷
সুফি মুসলমানদের সবচেয়ে বড় সংগঠন অল ইন্ডিয়া উলেমা অ্যান্ড মাশায়েখ বোর্ডও মোদীকে অভিনন্দন জানিয়েছে৷
ফয়সাল ফরিদ/জেডএইচ