‘যাঁরা ভিআইপি নন, তাঁরাও সুবিধা নিতে ফোন করেন’
১২ মার্চ ২০১৯যানজটের শহর ঢাকা৷ এই শহরে ভিআইপিদের জন্য মাঝেমধ্যেই সবদিক বন্ধ রেখে একদিক দীর্ঘক্ষণ চালু রাখতে হয়৷ ফলে ভোগান্তিতে পড়েন অন্য পথের যাত্রীরা৷ লম্বা যানজট সামলে ভিআইপিদের কীভাবে বিশেষ সুবিধা দেয় পুলিশ? কীভাবেই বা যানজট সামলাচ্ছেন ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা? এসব নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ৷
ডয়চে ভেলে : ঢাকা শহরে তো এখন বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলছে৷ এর ফলে রাস্তাও তো অনেক সংকুচিত হয়েছে৷ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আপনারা কীভাবে করছেন?
মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ: এখনতো ঢাকা শহরে মেট্রোরেল, এমআরটিসহ কয়েকটি উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে৷ এসব কাজের কারণে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার আয়তন কমে গেছে৷ মেট্রোরেলের কারণে বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার মাঝখানে ১১ মিটার জায়গা ছেড়ে দিতে হয়েছে৷ এর ফলে আগে যেখানে ৪ বা ৫ লেনে গাড়ি চলত, সেখানে এখন দুই বা তিন লেনে গাড়ি চলছে৷ এর ফলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কিছুটা সমস্যা তো হচ্ছেই৷ আমরা যেটা করেছি, রাস্তায় আমাদের লোকবল বাড়িয়েছি৷ পাশাপাশি বাস চলাচলে নতুন কিছু ব্যবস্থাপনাও করেছি৷ মিরপুর থেকে যে বাসগুলো আজিমপুর বা মতিঝিল যাচ্ছে তাদের আমরা বিজয় সরণি বা ফার্মগেট দিয়ে যেতে দিচ্ছি না৷ তাদের মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ হয়ে সোজা যেতে হচ্ছে৷ সিসিটিভিও আমরা বাড়িয়েছি৷
একদিকে রাস্তা সংকুচিত, অন্যদিকে ভিআইপিদের জন্য কিছু রাস্তা খালি রাখতে হচ্ছে- এটা কীভাবে আপনারা ম্যানেজ করছেন?
আসলে ভিআইপিদের চলাচলের জন্য আমরা এখন খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি না৷ তবে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য কেউ যদি যান তাহলে তাকে আমরা কিছুটা সুযোগ দিচ্ছি৷ যেমন ধরেন কোনো রাস্তা একদিকে এক মিনিট চলার কথা, সেক্ষেত্রে আমরা ওই ভিআইপির জন্য কিছুটা সময় বেশি ছেড়ে রাখছি৷ কারণ অন্যদিকে যেসব সাধারণ মানুষ আছেন তাদের যেন কষ্ট না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখছি৷ ভিআইপি প্রটেকশন আগেও ছিল, এখনও আছে৷ তবে সংখ্যায় একটু কম বেশি৷ এখন আমরা যেটা চেষ্টা করছি, সবগুলো সংযোগ সড়কে সমান গুরুত্ব দিতে৷ আসলে যেদিকে গাড়ির চাপ একটু বেশি সেদিকে একটু বেশি ছেড়ে, আবার যেদিকে গাড়ির চাপ কম সেদিকে একটু কম ছেড়ে আমরা ট্রাফিক ম্যানেজ করছি৷
ভিআইপিদের চলাচলের সময় রাস্তা বন্ধের কি কোনো আইন আছে?
ভিআইপি চলাচলের সময় কিন্তু আমরা রাস্তা বন্ধ করছি না৷ ভিভিআইপিদের কথা আমি বলছি না৷ বলছি, ভিআইপিদের কথা৷ তাও সব ভিআইপিকে কিন্তু আমরা বিশেষ সুবিধা দিচ্ছি না৷ শুধুমাত্র যাঁরা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সভা, সমাবেশ বা সেমিনারে যাচ্ছেন, শুধু তাঁদের ক্ষেত্রে ওই সড়কটি হয়ত একটু বেশি সময় খোলা রাখছি৷
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী তো ভিভিআইপি, এর বাইরে ভিআইপি কাঁরা?
মন্ত্রী পরিষদে যাঁরা আছেন এবং বিভিন্ন সাংবিধানিক পদে যাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন তাঁরা ভিআইপি৷
ভিআইপিদের চলাচলের সময় বিশেষ সুবিধা দিতে গিয়ে আপনাদের উপর অতিরিক্ত কোনো চাপ পড়ে কি?
ভিআইপি তো সব দেশেই চলাচল করেন৷ এখানেও করেন৷ তাঁরা তো চলাচল করবেনই৷ আমি যদি আপনাকে অনেক আগের কথা বলি, তাহলে তখন আমরা ভিআইপিদের একটু বেশি সুবিধা দিতে কোনো রাস্তা হয়ত বেশি সময় ক্লিয়ার রাখতাম৷ তখন সাধারণ মানুষের চলাচলে হয়ত কিছুটা সমস্যা হতো৷ কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এই কাজটা আমরা করছি না৷ আমাদের কর্তৃপক্ষের কিন্তু নির্দেশনা আছে, সাধারণ মানুষের সমস্যা করে ভিআইপিদের বাড়তি কোনো সুবিধা দেওয়া যাবে না৷ সেটা দিতে গেলে ঢাকা শহরের ট্রাফিকের যে অবস্থা তাতে সব সময়ই ট্রাফিক থাকেই৷ আর সব ভিআইপিকে বাড়তি সুবিধা দিতে গেলে এটা আরো বেড়ে যায়৷ এই কারণে এখন আমরা সেটা করছি না৷
আপনি যাদের ভিআইপি বললেন এর বাইরেও তো অনেক মানুষ রাস্তায় বিশেষ সুবিধা নিতে চান? তাদের কীভাবে আপনারা সামলান?
ভিআইপি ছাড়া আরো অনেকেই আমাদের কাছে এই ধরনের সুবিধা চান৷ এমন ফোনতো আমাদের কাছে আসেই৷ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ অনেকেই এমন সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেন৷ এই ধরনের ব্যক্তিদের সঙ্গে যাঁরা থাকেন তাঁরা অনেক সময় আমাদের ফোন করেন৷ কিন্তু এখন রাস্তার যে অবস্থা তাতে তাঁদের বিশেষ সুবিধা দিতে গেলে আরো ট্রাফিক বেড়ে যায়৷ ফলে আমরা তাঁদের বিশেষ সুবিধা দিতে পারি না৷ রিকোয়েস্ট আসে ঠিক, কিন্তু সেভাবে গুরুত্ব দিতে আমরা পারি না৷
ভিআইপি সংস্কৃতিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
ভিআইপি যারা রাস্তায় চলাফেরা করেন তাঁরা যদি সাধারণ মানুষের মতো চলাফেরা করেন তাহলে তো সমস্যা নেই৷ আর যদি কোনো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আমাদের সহযোগিতা নেন সেই বিষয়টি আমি পজেটিভলি দেখি৷ গত কয়েকবছরে এই সংস্কৃতির অনেক উন্নতি হয়েছে৷ কিছুদিন আগেও যে সংস্কৃতি ছিল উলটোপথে চলা বা রাস্তা ক্লিয়ার করা সেই ধরনের সংস্কৃতি গত কয়েক বছরে আমরা পর্যায়ক্রমে উন্নতি করেছি৷ এমনকি আইন না মানার যে সংস্কৃতি ছিল, তার অনেক উন্নতি হয়েছে৷
কয়েকদিন আগেই একটা গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহর যানজটের শীর্ষে৷ এর মধ্যে চলছে উন্নয়নমূলক কাজ৷ সামনের দিনে পরিস্থিতি কীভাবে সামলাবেন?
ঢাকা শহরে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ রাস্তা কম৷ এখন যে রাস্তা আছে সেটা প্রায় ৮ ভাগ৷ একটি আদর্শ শহরে অন্তত ২৫ ভাগ রাস্তা থাকতে হবে৷ এমনকি ১৫ থেকে ২০ ভাগ থাকলেও সেটা সফলভাবে ম্যানেজ করা যায়৷ কিন্তু আমাদের তো অনেক কম৷ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখেই কিন্তু আমাদের ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট করতে হয়৷ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কারণে আমাদের ট্রাফিক সিগন্যালগুলো কাজ করে না৷ আমরা কিন্তু চেষ্টা করছি, সিগন্যালের মাধ্যমে এটা ম্যানেজ করতে৷ কিন্তু এখানে হঠাৎ কোনো একদিকে গাড়ির চাপ বেড়ে যায় তখন সিগন্যাল আর কাজ করে না৷ আমরা আমাদের গবেষণা নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছি৷ ঢাকা শহর যানজটের শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম, এটা ঠিক আছে৷ আমরা লোকবল বাড়িয়ে এবং সায়েন্টিফিক ট্রাফিক অপারেশনের মাধ্যমে শহরটাকে সচল রাখার চেষ্টা করছি৷ আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ ট্রাফিক ব্যবস্থাকে সচল রাখা৷ আমি বিশ্বাস করি, উন্নয়নমূলক কাজগুলো শেষ হলে আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে যানজট অনেকাংশেই হ্রাস পাবে৷
সবাই বাড়তি সুবিধা পেতে চান কেন? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷