যুক্তি আবেগ ও একজন সাকিব আল হাসান
১ নভেম্বর ২০১৯কিন্তু জুয়াড়ির যোগাযোগের তথ্য গোপনে যে শাস্তি তাকে আইসিসি সাকিবকে দিয়েছে, এ নিয়ে খুব বেশি কিছু করার নেই বলে মনে করছেন কালের কণ্ঠের উপসম্পাদক ও ক্রীড়া সাংবাদিক মোস্তফা মামুন৷
সাকিবের শাস্তি ঘোষণার পর থেকেই এ নিয়ে উত্তাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম৷ পাল্লা দিয়ে উত্তপ্ত গণমাধ্যমও৷ বিশেষ করে ভারত সফর, ক্রিকেটারদের ধর্মঘট এবং বিসিবি সভাপতির নানা বক্তব্যের পরপরই ঘোষণা আসা, সব মিলিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে জন্ম দিয়েছে নানা অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতার৷
সাকিব কী আসলেই অন্যায় করেছেন? তিনি তো জুয়াড়ির কাছ থেকে টাকা নেননি, ম্যাচের কোনো তথ্য জুয়াড়িকে দিয়েছেন, মেলেনি এমন প্রমাণও৷ তাহলে শুধু একটা ‘ভুলের' কারণে এতো বড় শাস্তি সাকিবভক্তরা মেনে নিতে পারছেন না৷ তবে দেশের ক্রিকেটের উত্থান ও বিস্তারপর্বের সাক্ষী মোস্তফা মামুন মনে করছেন, এক্ষেত্রে আসলে বেশি বা কম হিসেব করার কোনো অবকাশ নেই৷ বরং সাকিবকে দুই বছরের সাজা দেয়া হলেও শুধু শুরুতেই সব স্বীকার করায় তার শাস্তি এক বছর স্থগিত করা হয়েছে৷
তিনি বলেন, ‘‘যেহেতু এটা ছয় মাস ধরে চলেছে এবং তিনটা ইনসিডেন্ট, ফলে আইসিসি তার আইনের জায়গা থেকে দেখেছে৷ অনেককে এক্ষেত্রে সরাসরি দুই বছর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেয়া হয়, যেমন সনৎ জয়সুরিয়া৷ তিনি অবশ্য শুরুতে স্বীকার করেননি৷ ফলে, এটাকে আমরা যদি নৈর্ব্যক্তিকভাবে দেখি তাহলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই৷ বরং সাকিব যাতে এক বছর পর আবার ফিরতে পারেন, সে ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে৷''
বিসিবির সঙ্গে সাকিবের দ্বন্দ্বের কথা চিন্তা করে অনেকে দায় চাপাচ্ছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটির ওপরও৷ ধারণা করছেন, ধর্মঘটের শাস্তিই এটি কিনা৷ কিন্তু আইন বলছে, কোনো দেশের বোর্ডের আসলে এই সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ বা, আকসুর কাজে প্রভাব খাটানোর ক্ষমতা নেই৷ মোস্তফা মামুনও মনে করেন, এক্ষেত্রে বিসিবিকে তদন্তের বিষয়ে জানানোর কোনো বাধ্যবাধকতা আকসুর বা আইসিসির নেই৷ বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বোর্ডকে এসবের বাইরেই রাখা হয়৷
প্রশ্ন উঠেছে নিষেধাজ্ঞা জানানোর টাইমিং নিয়েও৷ মোস্তফা মামুন মনে করেন, আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে বিসিবি আগে থেকেই বিষয়টা জানতো৷ ‘‘তদন্ত চলছে সেটা বিসিবি জানতো, কিন্তু স্পেসিফিক এটা যে সাকিব সেটা তারা সম্ভবত জানতো না৷ তাছাড়া এক ধরনের চিন্তাও থাকার কথা, ভারডিক্ট (রায়) কবে হবে৷ আইসিসি সম্ভবত বলেছিল একটু দেরি হবে৷ কিন্তু আমি যতোদূর জানতে পেরেছি, একটা ভার্সন অনুসারে সাকিবই আইসিসিকে অনুরোধ করেছিলেন যাতে ভারত সফরের মাঝখানে এমন রায় না হয়৷''
ভারত সফরে সাকিব না থাকায় বাংলাদেশের যেমন ক্ষতি হয়েছে, ভারতেরও বড় ক্ষতি হয়েছে বলে মনে কেরন এ সাংবাদিক৷ সাকিবের ব্র্যান্ড ভ্যালুর কারণে সফর আকর্ষণীয় হলে বরং আয়োজক দেশ হিসেবে ভারতও কম লাভবান হতো না বলে মনে করেন তিনি৷
‘আন্দোলনের শাস্তিস্বরূপ সাকিবের নিষেধাজ্ঞা এসেছে', এমন মন্তব্য একেবারেই মানতে নারাজ এই ক্রীড়া সাংবাদিক৷ তবে ধর্মঘট বা অন্যান্য কারণে খেলোয়াড় ও বিসিবির মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি না হলে বিষয়টা নিয়ে দুই পক্ষ আরো আন্তরিকভাবে কাজ করতে পারতো বলে মনে করেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘ধর্মঘটের কারণে হয়তো আন্তরিকতার ঘাটতি ছিল৷ এখন যেটা হয়েছে বিসিবি একেবারেই আনুষ্ঠানিক যে অবস্থান নেয়া যায়, সেটিই ঘোষণা করেছে৷ অন্যসময় হলে হয়তো সাকিবও একটি আগে বিসিবিকে জানাতো, বিসিবিও আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা সাকিবকে সহায়তা করা বা ইনফরমাল চ্যানেলে নানা ধরনের সহযোগিতার চেষ্টা করতো৷''
যোগাযোগের ঘাটতির কথা উঠে এসেছে বাংলাদেশের বিসিবি এবং ভারতের বিসিসিআই-এর মধ্যেও৷ আইপিএলের একটি ম্যাচের আগে জুয়াড়ির সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগের যে ঘটনাটি উঠে এসেছে, সেটি নিয়ে বিসিসিআই-এর সঙ্গে যোগোযোগ করে আইসিসি৷ ফলে বিসিবির সঙ্গে ভালো যোগাযোগ থাকলে অনানুষ্ঠানিকভাবেও সাকিবের বিরুদ্ধে তদন্তের বিষয়টি বিসিবির অনেক আগেই জেনে যাওয়ার কথা৷ এক্ষেত্রে বিসিবির কূটনৈতিক ব্যর্থতা দেখছেন মোস্তফা মামুন৷
তবে মামুন মনে করেন, খেলোয়াড় একবার অপরাধ স্বীকার করে নিলে তারপর আসলে আর বোর্ডের তেমন কিছু করার থাকে না৷ বরং তখন সাকিবকে এখন কিভাবে ফিরতে সহযোগিতা করা যায়, সে চেষ্টাই এখন করতে হবে৷ আইসিসিকে সব সহযোগিতা করলে বেশকিছু ক্ষেত্রে সাজা কমানোর উদাহরণও রয়েছে৷ ফলে আগামী বছর ‘টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন সাকিব', এমন প্রত্যাশা একেবারেই অমূলক নাও হতে পারে৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷