1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারীদের মনোনয়ন দিতে দলগুলোর অনীহা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৪ ডিসেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশে এবারের সংসদ নির্বাচনে দুই দল থেকে শতাধিক নারী মনোনন চাইলেও শেষ পর্যন্ত পেয়েছেন মাত্র ৪৩ জন৷ সংসদে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারীদের প্রতিনিধিত্ব সাত শাতাংশের বেশি নয়৷ সংরক্ষিত ধরলে তা ২০ শতাংশ৷

https://p.dw.com/p/39Rrc
Bangladesch Wahlen 04. Januar 2014
ছবি: ROBERTO SCHMIDT/AFP/Getty Images

আইন আছে প্রত্যেক দলে ৩০ শতাংশ নারী নেতৃত্ব থাকতে হবে৷ আর এটা একটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পাওয়ার অন্যতম শর্ত৷ রাজনৈতিক দলগুলো তাই কাগজে-কলমে বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের কমিটিতে নারী নেতৃত্বের এই সংখ্যা মিলিয়ে দেয়৷ কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন৷ নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে যদি সংসদের কথা ধরা হয়, সেখানে বর্তমান সংসদদে  সরাসরি ভোটে নির্বাচিত নারী সংসদ সদস্য মাত্র পাঁচ শতাংশ৷ তবে সংসদে নারীদের জন্য ৫০টি সংরক্ষিত আসন আছে৷ তাঁরা সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন না৷ তাঁদের নির্বাচন করা হয় রাজনৈতিক দলগুলোর সংসদে প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে৷ সংরক্ষিত আসনের হিসাব ধরলে সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব ২০ ভাগের মতো৷

সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুয়ায়ী, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে একশ'রও বেশি নারী  নির্বাচনে সরাসরি প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়নপত্র কেনেন৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপি থেকে ২৫ জন এবং আওয়ামী লীগ থেকে ১৮ জন দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন৷ বিএনপি'র একক নারী প্রার্থী অবশ্য হাতে গোনা৷ তাই নারী প্রার্থীদের এসব মনোনয়নও চূড়ান্ত নয়৷ কতজন নারী শেষ পর্যন্ত সরাসরি দলীয় মনোনয়ন পান তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত৷ ওইদিন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন৷ ওই দিনই দলগুলো চিঠি দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে তাদের চূড়ান্ত মনোনীত প্রার্থীর নাম দিয়ে প্রতীক দেয়ার আবেদন জানাবে৷

‘রাজনৈতিক দলগুলোই নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে আন্তরিক নয়’

স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৭৩ সালে৷ ওই সংদদে কোনো নারী সংসদ সদস্য সরাসরি ভোটে নির্বাচত হননি৷১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে দু'জন নারী সরাসরি ভোটে সংসদ সদস্য  নির্বাচিত হন৷ ১৯৮৬ সালে পাঁচ জন, ১৯৮৮ সালে চার জন, ১৯৯১ সালে তিন জন, ১৯৯৬ সালে আট জন, ২০০১ সালে সাত জন, ২০০৮ সালে ২১ জন এবং ২০১৪ সালে ২২ জন নারী সংসদ সদস্য হিসেবে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন৷

জাতীয় সংসদে এখন নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৫০টি৷ প্রথম জাতীয় সংসদে এই সংখ্যা ছিল ১৫৷ এরপর তা বাড়িয়ে করা হয় ৩০টি৷ এখন সংরক্ষিত আসন ৬০টি করে তা অনুপাতিকভাবে ভাগ না করে সরাসরি নির্বাচনের দাবি উঠছে অনেক দিন ধরে৷

গোপালগঞ্জ-১ ( মকসুদপুর-কাশিয়ানি) আসন থেকে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী আরিফা রহমান রুমা৷ তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত এবং দলের নীতি নির্ধারনী অনেক কাজ করেন৷ কিন্তু তাঁকে দল মনোনয়ন দেয়নি৷ নারীদের কেন মনোনয়ন দিতে দলগুলোর অনীহা– এমন  প্রশ্নের জবাবে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নির্বাচনি ব্যয়ের সীমা বেঁধে দিয়েছে৷ কিন্তু প্রার্থীরা নির্বাচনে অনেক বেশি টাকা খরচ করেন৷ ধরেই নেয়া হয় যে, নারীরা এত টাকা খরচ করতে পারবে না, তাঁরা অসচ্ছল৷ এছাড়া নারীরা পেশিশক্তিরও ব্যবহার করতে পারবে না৷ তারা ধরেই নেয় নির্বাচনে জিততে অনেক টাকা, পেশিশক্তি লাগে৷''

তিনি জানান, ‘‘২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৮ টি আসনে ১৯ জন নারীকে মনোনয়ন দিয়েছিল৷ আর এবার ১৭টি আসনে ১৮ জনকে মনোনয়ন দিয়েছে৷ তাই বলাই যায়, এবার নারী মনোনয়ন আওয়ামী লীগে কমেছে৷''

ঢাকা-৮ (মতিঝিল-রমনা-পল্টন) আসন থেকে এবার বিএনপি'র মনোনয়ন চেয়েছিলেন সাবেক ছাত্রদল নেত্রী শিরিন সুলতানা৷ তিনি এখন বিএনপি'রও কেন্দ্রীয় নেতা৷ ৯০-এর গণআন্দোলনে তিনি সামনের সারিতে থেকে  নেতৃত্ব দিয়েছেন৷ এর আগে ২০০৮ সালে তিনি সরাসরি নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন৷ কিন্তু এবার বিএনপি তাকে মনোনয়ন দেয়নি৷ তিনিও নারীদের মনোনয়ন দেয়ায় রাজনৈতিক দলগুলো অনীহার কারণ হিসেবে কালো টাকা ও পেশি শক্তিকে চিহ্নিত করেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলো নারীদের মনোনয়ন দিতে ভয় পায়৷ তারা মনে করে, নারীরা জিততে পারবেন না৷ কারণ, নির্বাচনে জিততে কালো টাকা লাগে, পেশিশক্তি লাগে৷ নারীদের তা নেই৷ নারীরা অনেক দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালন করলেও রাজনৈতিক দলগুলো এই ক্ষেত্রে পিছিয়ে যায়৷''

‘‘রাজনৈতিক দলগুলো নারীদের মনোনয়ন দিতে ভয় পায়’

তিনি বলেন, ‘‘সংসদে যদি শতকরা ৭৫ ভাগই ব্যবসায়ী হন, তাহলে নারী কেন, যে কোনো সৎ রাজনীতিবিদের জন্যই মনোনয়ন পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে৷ নারী রাজনীতিবিদদের জন্য তো তা আরো কঠিন হয়৷''

মানবাধিকার কর্মী ও নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলোই নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে আন্তরিক নয়৷ তাদের দলের নেতৃত্বে ৩০ ভাগ নারী রাখার বাধ্যবাধকতা আছে৷ তাহলে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দেয়ার ব্যাপারে এটা তারা কেন মানবে না? বাংলাদেশে নারীরা সক্রিয় রাজনীতিতে আছেন, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ কিন্তু নির্বানের প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নে তাদের বঞ্চিত করা হয়৷''

তিনি বলেন, ‘‘নারীদের মনোনয়ন দেয়ার প্রশ্ন এলে টাকা-পয়সা আর পেশিশক্তির প্রশ্ন আসে৷ তবে আরো একটা খারাপ দিক হলো গত কয়েক টার্ম নির্বাচন হচ্ছে জোটগতভাবে৷ প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল এখন নারীদের আসনগুলো জোটের শরিকদের মধ্যে ভাগ করে দিচ্ছে৷ এটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী, খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রীও নারী৷ শেখ হাসিনা রাজনৈতিক দক্ষতা অর্জন করেছেন৷ খালেদা জিয়াও করেছেন৷ কিন্তু তাঁরা রাজনীতিতে এসেছেন কিন্তু পরিবারের কারণে৷ একজন তাঁর পিতার উত্তরসূরী হয়েছেন, আরেকজন তাঁর স্বামীর৷ নারীর ক্ষমতায়ন যে হচ্ছে না, তা নয়৷ তবে সেটা সার্বিকভাবে নয়৷ তাই আমরা দেখি, সরাসরি নির্বাচনে অংশ নেয়া ও পাশ করে আসা নারীর সংখ্যা নগণ্য৷ আর এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সবার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে৷'

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য