‘প্রার্থীদের ব্যয়ের সঠিক হিসাব পেতে বিশেষ ব্যবস্থা দরকার'
৪ ডিসেম্বর ২০১৮ডয়চে ভেলে: বর্তমান নির্বাচন কমিশন সামনে যে নির্বাচনটি করতে যাচ্ছে, সেখানে নির্বাচনি প্রচারণা এবং ব্যয়ের হিসাব নিয়ে যে কথা হচ্ছে, সেটার চ্যালেঞ্জটা যদি বলেন...
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন: এখানে নির্বাচন কমিশনের কোনো ‘মেকানিজম' নেই যে তারা জানবে একজন প্রার্থী কত খরচ করছে৷ প্রার্থী যে হিসাব দিচ্ছে সেটাই তাদের মেনে নিতে হয়৷ এখন পর্যন্ত ব্যয়ের হিসাব বের করার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি৷ আমরা একটা ‘সাজেস্ট' করেছিলাম যে, প্রত্যেক নির্বাচনি এলাকায় এক বা একাধিক মনিটরিং কমিটি বানানো হোক এবং প্রার্থীর এজেন্টকে বলা হোক একটা নির্দিষ্ট সময় প্রতিদিনের হিসাবটা দিক৷ প্রতিদিন কী খরচ হচ্ছে সেটা তাদের জানাতে হবে ওই টিমের কাছে৷ সেই টিম যদি মনে করে যে, এটা ‘চেক' করা দরকার, তাহলে তারা ‘চেক' করবে৷ কাগজের দাম যদি বাজারের দামের চেয়ে বেশি দেয়, তাহলে তো সেটা ‘চেক' করে বের করা সম্ভব৷ প্রত্যেকটা পোস্টারের নাম্বারিং থাকবে এবং প্রেসের নাম থাকবে৷ সেখানে খোঁজ নিয়েও বিষয়টা জানা সম্ভব৷ আসলে এটা ফাইনান্সিয়াল মনিটরিং কমিটি ছাড়া মনিটরিং করা সম্ভব না৷
আপনারা যখন দায়িত্বে ছিলেন তখন এটা কীভাবে করেছিলেন?
আমরা প্রথম দিকে পারিনি, কারণ, মানুষ তখন খুব শঙ্কিত ছিল৷ এখন শুনছি, ১০ লাখ টাকা দিয়ে মনোনয়ন কিনছে৷ আসলে কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে জানি না, এগুলো শুনছি৷ এখন এমন অনেক ব্যবসায়ীই আছেন, যাঁরা টাকা দিয়ে মনোনয়ন কিনছেন৷ তাঁরা নির্বাচনে জয়ের জন্য কত টাকা খরচ করবেন? তখন তিনি ২৫ বা ৩০ লাখ টাকায় খরচ মেটাতে পারবেন না৷ তিনি পাস করার জন্য তখন তো কোটি কোটি টাকা খরচ করবেন৷ যদি ‘ভিজিল্যান্স টিম' মাঠে নামানো হয়, তাহলে এটা মনিটরিং করা সম্ভব৷ তারা যে হিসাব দেবে, ওই মনিটরিংয়ের টিমের হিসাবের সঙ্গে মিলালে তখন কিন্তু আসল খরচের হিসাবটা বের হয়ে আসবে৷
নির্বাচন কমিশন যে ব্যয়ের সীমা ২৫ লাখ টাকা বেঁধে দিয়েছে, এটা তো শুধু কাগজে-কলমেই...
আসলে এটা তো এখন কাগজ-কলমেই আছে৷ এখানে যদি মনিটরিং করা না হয়, তাহলে ২৫ লাখই বা কী আর ২৫ কোটি টাকায়ই বা কী? দেখুন প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচন কমিশন প্রচারণা বন্ধ করতে বলেছে, সেটা কি তারা করতে পেরেছে? বন্ধ করতে পারেনি, পোস্টারও তুলতে পারেনি৷
নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হচ্ছে, ৩০০ আসনে মনিটরিং করার মতো জনবল তাদের নেই...
এঁরা তো সবাই বিজ্ঞ ব্যক্তি৷ এখন তাঁদের হাতে জনবল নেই তো কী হয়েছে? সরকারের হাতে তো আছে৷ এখন যদি একটা জেলায় এডিসি রেভিনিউ-এর নেতৃত্বে আরো তিনজন দিয়ে দেন এবং একটি পরিপত্র জারি করে দেন যে, তারা সব প্রার্থীর এজেন্টকে বলবে, সাতদিন পরে পরে ‘ডিটেইলস' হিসাব করে জানাতে হবে৷ এগুলো আমাদের সব করা ছিল৷ তারা পুরনো নথিপত্র দেখলে এটা বের করতে পারবে৷ এর জন্য আলাদা কোনো জনবলের প্রয়োজন নেই৷ একটা জেলায় ৩০-৩৫ জন ‘ফার্স্ট ক্লাস' অফিসার আছেন৷ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, জেলা এগ্রিকালচার অফিসারসহ তো অনেক অফিসার আছেন৷ কেন তাঁদের কাজে লাগানো হচ্ছে না? একটা ‘টিম' করতে হলে প্রয়োজনে উপজেলা থেকে অফিসার নিয়ে আসেন৷ নির্বাচনে যে ৬ থেকে ১২ লাখ লোক লাগছে, সেটা কি নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব জনবল? তারা তো সরকারের কাছ থেকেই এই জনবল নিচ্ছে৷ তাহলে এখানে সমস্যা কী?
একটু আগে আপনি বলছিলেন যে, নির্বাচন কমিশন সব প্রার্থীকে পোস্টার তুলে ফেলতে বলেছে৷ অথচ আমরা রাস্তায় বের হলেই দেখি অজস্র পোস্টার৷ সেগুলো তো এখনো তোলা হয়নি৷ এ নিয়ে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তেমনটাও শুনিনি...
দেখুন, আপনি যদি ব্যবস্থা না নেন তাহলে তো এগুলো থাকবেই৷ শুধু মুখে ‘ইনস্ট্রাকশন' দিলে তো হবে না৷ আমার ইন্সট্রাকশন-এর কেউ পরোয়া করলো না, সেই ইন্সট্রাকশন দিয়ে কোনো লাভ আছে?
নির্বাচনি প্রচারণায় একটা পরিবর্তন এসেছে আপনি নিশ্চয় খেয়াল করেছেন৷ এলাকায় মাইক দিয়ে বা পোস্টারিং করে প্রচারণার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়াও যুক্ত হয়েছে৷ এগুলো নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কিছু করার আছে কি?
সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কিছু করার আছে বলে আমি মনে করি না৷ এটা শুধু নির্বাচন কমিশন না, সরকারেরও কিছু করার আছে বলে আমি মনে করি না৷ পুরো সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং করা ইলেকশন কমিশনের পক্ষে সম্ভব না৷ তবে ইলেকশন কমিশন যদি ‘আইডেন্টিফাই' করতে পারে যে, কারা অপপ্রচার চালাচ্ছে বা বিভ্রান্তিমূলক কিছু করছে, তখন তারা বিটিআরসিকে বলতে পারে৷
আপনি বলছিলেন, নির্বাচন কমিশন চাইলে এখন রাষ্ট্রের সব টুলসকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কাজ করতে পারে৷ এসব বিষয়ে বিটিআরসিকে তো ইলেকশন কমিশন থেকে নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে, তাই না?
হ্যাঁ, যেতেই পারে৷ কিন্তু তারা যদি না দেন তাহলে আমি-আপনি কী বলতে পারি? তাদের নজরে যদি কিছু আসে, সেগুলোর বিরুদ্ধে তারা অ্যাকশন নেবে, এটাই স্বাভাবিক৷ যদি না নেয়, সেগুলো নিয়ে আমি-আপনি কী করবো বলুন?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্বাচনি প্রচারণার সঙ্গে আমাদের দেশের নির্বাচনি প্রচারণার তফাতটা কী? বিশেষ করে ভারত বা যুক্তরাষ্ট্রের কথা যদি বলেন?
ইন্ডিয়াতে প্রচারণা আমাদের মতোই মোটামুটি৷ কিন্তু তারপরও ভারতে অনেক ‘লিমিটেশন' আছে৷ প্রচার-প্রচারণার সময় সেখানে এভাবে ঘর-বাড়িতে পোস্টার লাগায় না৷ আর ইউরোপে যে ইলেকশন হচ্ছে, আপনি সেটা বুঝবেনই না৷ সারা বছরই তারা প্রচারণা করছে৷ তারা তাদের কাজ দিয়ে প্রচারণা করছে৷ তারা ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার চালাচ্ছে৷ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারণা করছে৷ আমাদের এখানে তো প্রচারণা বলতে মিছিল করতে হবে, লোকজন নিয়ে যেতে হবে, হাজার হাজার মানুষ নিয়ে ‘শো ডাউন' করতে হবে, টাকা-পয়সা খরচ করতে হবে৷ আমাদের দেশের প্রচারণা এখন সোশ্যাল মিডিয়াতেও হচ্ছে৷ এগুলো বাড়তে পারে৷ টেলিফোনের মাধ্যমে প্রচারণা হতে পারে৷ অনেকে সেটা করছে৷ কিন্তু ইউরোপে নির্বাচন কবে হচ্ছে তা বোঝা যায় না৷ আমাদের মতো একদিনের গণতন্ত্রের দেশে সবাই মিলেই এই ধরনের প্রচারণার পথে হাঁটে৷
সামনের নির্বাচনকে কীভাবে আরো সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক করা যায়? আপনার পরামর্শ কী?
ইলেকশন কমিশনকে আন্তরিক হতে হবে এবং সরকারের কাছে তারা যে সহযোগিতা যেভাবে চাইবে সেভাবেই দিতে হবে৷ এখন ইলেকশন কমিশন সেটা চাচ্ছে কিনা সেটা আমি বলতে পারবো না৷ সেটা আপনারাই বলতে পারবেন৷
সাক্ষাৎকারটি কেমন লাগলো জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷