1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যোগেন্দ্র ও সুজিতের শ্রাদ্ধ করলেন শামসুদ্দিন ও আনোয়ার

২৬ এপ্রিল ২০২২

অনন্য নজির সৃষ্টি করলেন হুগলির শামসুদ্দিন ও আনোয়ার। স্বজনহীন হিন্দু বন্ধুর শ্রাদ্ধ করলেন শামসুদ্দিন। আনোয়ার শ্রাদ্ধ করলেন পিতৃসম এক হিন্দুর। 

https://p.dw.com/p/4ARRN
যোগেন্দ্রর শ্রাদ্ধ করছেন শামসুদ্দিন।
যোগেন্দ্রর শ্রাদ্ধ করছেন শামসুদ্দিন। ছবি: Sudhakrishna Mukherjee/DW

কলকাতার লাগোয়া জেলা হলো হুগলি। সেখানে ত্রিবেণী ও শ্রীরামপুরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের নজির গড়লেন শামসুদ্দিন ও আনোয়ার।

শামসুদ্দিনের বন্ধু যোগেন্দ্র প্রসাদ রানিগঞ্জ বাস স্ট্যান্ডে কাজ করতেন। থাকতেন বাসস্ট্যান্ডের শ্রমিক বিশ্রামাগারে। তার সহায়-সম্বল, আত্মীয়-স্বজন কেউ ছিল না।

সম্প্রতি কিছুদিন রোগে ভোগার পর ৫৫ বছর বয়সি যোগেন্দ্র মারা যান। হিন্দুদের শেষকৃত্যের রীতি অনুসারে মৃতের মুখাগ্নি করতে হয় বা মৃতদেহের মুখে আগুন ছোঁয়াতে হয় তার স্বজনকে। তারপর তার শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান করতে হয়। এই দুইটি কাজই শামসুদ্দিন ও তার বন্ধুরা করেছেন। শামসুদ্দিনের বাড়ি রানিগঞ্জের গির্জাপাড়ায়।

শামসুদ্দিন ও তার সঙ্গীরা মিলে দামোদর নদের ধারে যোগেন্দ্রর শেষকৃত্য করেন। তার দশদিন পর যোগেন্দ্রর শ্রাদ্ধও করেন শামসুদ্দিন। তখন মাথা ন্যাড়া করে, হিন্দু রীতি মেনে পিণ্ড দিয়ে শ্রাদ্ধের যাবতীয় আচার অনুষ্ঠান করতে দ্বিধাবোধ করেননি শামসুদ্দিন।

বাস স্ট্যান্ডের বাসমালিকরা ও স্থানীয় মানুষ অর্থসাহায্য করেন। তা দিয়েই শ্রাদ্ধে একশ জন মানুষকে খাওয়ানো হয় এবং শ্রাদ্ধানুষ্ঠানও করা হয়।

শ্রাদ্ধ করার জন্য মস্তকমুন্ডন করছেন শামসুদ্দিন।
শ্রাদ্ধ করার জন্য মস্তকমুন্ডন করছেন শামসুদ্দিন। ছবি: Sudhakrishna Mukherjee/DW

শামসুদ্দিনের বক্তব্য

আনন্দবাজারকে শামসুদ্দিন জানিয়েছেন, ''আমার পরিচয় আমি একজন মানুষ। আর এই কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি গর্ববোধ করছি।'' তার মতে, ''ধর্ম নিয়ে কেউ জন্মায় না। জন্মানোর পর জানতে পারে সে কোন ধর্মের।''

রানিগঞ্জের বাসিন্দা অনিল গড়াই আনন্দবাজারকে বলেছেন, ''রাজনৈতিক দলাদলি ও ধর্ম নিয়ে উন্মাদনের সময়ে শামসুদ্দিন যে বার্তা দিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে শিক্ষনীয়। এই বার্তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়া দরকার।''

আনোয়ারের দৃষ্টান্ত

হুগলির শ্রীরামপুরের ঘটনা। দিল্লিতে চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর শ্রীরামপুরে থাকতেন বিজ্ঞানী সুজিত হালদার। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী শিপ্রা। কয়েক বছর আগে সুজিত হালদারের প্রস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ে। করোনার সময় যখন তার চিকিৎসার জন্য কাউকে পাচ্ছিলেন না, তখন মার্বেল মিস্ত্রি আনোয়ার আলি এগিয়ে আসে। গত ২৮ মার্চ সুজিত হালদার মারা যান।

সংবাদ প্রতিদিন জানাচ্ছে, সুজিত হালদার আনোয়ারকে ছেলের মতে দেখতেন। তার ইচ্ছে ছিল, আনোয়ার তার মুখাগ্নি ও শ্রাদ্ধ করুক। সেই ইচ্ছে পূরণ করেছে আনোয়ার। তিনি রোজা পালনের পাশাপাশি সুজিত হালদারের মুখাগ্নি ও শ্রাদ্ধ করেছেন। সেই সময় মাংসও খাননি।

সংবাদ প্রতিদিনকে আনোয়ার বলেছেন, ''বিশ্বে যদি মানুষের মঙ্গলের জন্য কোনো কাজ করা হয়, তাতে ধর্ম কখনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। কোনো ধর্মের অসম্মান না করে মানবধর্ম পালন করেছি মাত্র।''

জিএইচ/এসজি(আনন্দবাজার, সংবাদ প্রতিদিন)