আবারো পুটিনই প্রেসিডেন্ট?
১৮ মার্চ ২০১৮রবিবার সকাল থেকে ভোট চলছে৷ স্থানীয় সময় রাত আটটায় রাশিয়ার সর্বপশ্চিমের এলাকা কলিনগ্রাদে ভোটগ্রহণ শেষ হবে৷
এরই মধ্যে ভোটগ্রহণে বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ এসেছে৷ গলোজ নামের একটি পর্যবেক্ষক দল বলেছে যে, সারা দেশেই বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছে তারা৷ কোথাও কোথাও ব্যালট বাক্সগুলোকে পর্যবেক্ষণ ক্যামেরার চোখের বাইরে রাখা হয়েছে৷ শেষ মুহূর্তে ভোটার তালিকাতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে৷
এদিকে, জরিপ বলছে, চতুর্থবারের মতো ছয় বছর মেয়াদে ক্রেমলিন অফিসের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷ তবে সেজন্য সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করতে হবে৷
চলতি সপ্তাহে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় সরকারি জনমত যাচাইকারী সংস্থা সারা দেশে জরিপ চালানোর পর জানিয়েছে, ৬৯ শতাংশ উত্তরদাতা পুটিনকে ভোট দেবেন৷ এর আগে গতবছরের শেষদিকে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় স্বাধীন জনমত যাচাইকারী সংস্থা ‘লেভাদা সেন্টার' পুটিনের প্রতি ৭৩ শতাংশের সমর্থন থাকার কথা জানিয়েছিল৷ গত কয়েক বছর ধরে পুটিনের প্রতি সমর্থনের পরিমাণ প্রায় ৭০ শতাংশের মতো ছিল৷
ফলে রবিবারের নির্বাচনে পুটিনের জয় একরকম নিশ্চিত বলেই ধরে নিয়েছে বার্তা সংস্থাগুলো৷ তবে পাশাপাশি পুটিনের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সম্পর্কেও খবর প্রকাশিত হচ্ছে৷ মূলত তিনজনকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে৷ এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হলেন রিয়েলিটি শো'র তারকা ও সাংবাদিক কেসেনিয়া সবচাক৷ ৩৬ বছর বয়সি সবচাক পুটিনের রাজনৈতিক গুরু বলে পরিচিত আনাতোলি সবচাকের মেয়ে৷ তাই সবচাক ক্রেমলিনেরই মনোনীত প্রার্থী বলে মনে করছেন অনেকে৷ তবে সবচাক সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন৷
রাশিয়ার সবচেয়ে বড় বিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনির প্রতিও তিনি সমর্থন জানিয়েছেন৷ নাভালনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না, কারণ তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে৷ যদিও নাভালনি এই অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন৷
জরিপ বলছে, নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পাবেন পাভেল গ্রুডিনিন৷ তিনি কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান৷ গত নির্বাচনে এই দলের তৎকালীন প্রধান জেনাডি জুগানোভ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিলেন৷
পুটিনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো আরেকজন উল্লেখযোগ্য প্রার্থী হলেন ভ্লাদিমির ঝিরিনোভস্কি৷ পপুলিস্ট নীতির কারণে তাঁকে অনেকসময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে৷ গত নির্বাচনে তিনি চতুর্থ হয়েছিলেন৷
পুটিনের জনপ্রিয়তার কারণ
১৯৯৯ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন ভ্লাদিমির পুটিন৷ তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলিৎসিন তাঁকে এই পদে এনেছিলেন৷ এর কয়েকমাস পর ইয়েলিৎসিন পদত্যাগ করলে অস্থায়ীভাবে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পেয়েছিলেন পুটিন৷ এরপর ২০০০ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট হন তিনি৷ রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মেয়াদ সেই সময় ছিল চার বছর করে৷ ফলে দুই মেয়াদে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন পুটিন৷ এরপর তাঁর রাজনৈতিক সঙ্গী দিমিত্রি মেদভেদেভ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন৷
পুটিন সেই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন৷ ঐ সময়ই প্রেসিডেন্টের মেয়াদ বাড়িয়ে ছয় বছর করা হয়৷ ২০১২ সালে পুটিন আবার প্রেসিডেন্ট হন৷ এবং এবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি দায়িত্বে থাকবেন৷ এখন পর্যন্ত রাশিয়ার সংবিধানে যে নিয়ম আছে, তাতে ঐ সময়ের পর আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারবেন না পুটিন৷
অর্থাৎ প্রায় বিশ বছর ধরে রাশিয়ার রাজনীতির প্রধান হয়ে আছেন পুটিন৷ মস্কোভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইয়েন্স সিগার্ট ডয়চে ভেলেকে বলেন, পুটিন রাশিয়ার রাজনীতিকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন যে, কোনো বিরোধী পক্ষ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি৷
এছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার ভেঙে পড়া অর্থনীতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে পুটিনের আমলে৷ যদিও পুটিনের অর্থনৈতিক নীতির কারণে সেটি হয়েছে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷ কেননা বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর একটি দেশ৷ ফলে একসময় দেশটি এমনিতেই উন্নতি করতে পারত৷ ‘‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তাঁর পক্ষে গেছে৷ সেটিই তাঁর ক্ষমতার ভিত্তি৷ নব্বই পূর্ববর্তী সময়ে আবারও হয়ত ফিরে যেতে হতে পারে এমন আশংকা আছে অনেকের মনে,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন সিগার্ট৷
জেডএইচ/ডিজি (ডিপিএ, ডিডাব্লিউ)