রাস্তা সংস্কারে টোল
১৮ আগস্ট ২০১৩জার্মানির অনেক হাইওয়ে বা মহাসড়ক এবং সেতু দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন৷ রাষ্ট্রীয় এসব অবকাঠামো সংস্কারে খরচ পড়বে কয়েক বিলিয়ন ইউরো৷
বাভারিয়া অঞ্চলে খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রীদের সহযোগী দল সিএসইউ এই টাকা টোল বা পথশুল্কের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে আগ্রহী৷ এই শুল্ক দেবেন গাড়ি চালকরা৷ তবে সিএসইউ দলের প্রধান হর্স্ট সেহোফার জার্মানিতে বসবাসকারী গাড়ি চালকদের এই শুল্কের আওতামুক্ত রাখতে চান৷ অর্থাৎ শুধুমাত্র সীমানা পেরিয়ে আসা ড্রাইভারদের উপর এই শুল্ক কার্যকরের প্রস্তাব তাঁর৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অধিকাংশ দেশের মহাসড়ক ব্যবহার করলে টোল দিতে হয়৷ আর এই টোল আদায়ের পদ্ধতি মূলত দু'টি৷ একটি হচ্ছে ‘ভিনিয়েট' বা টোল স্টিকার৷ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শুল্ক পরিশোধ করে এই ছোট স্টিকার গাড়িতে লাগিয়ে নেয়া যায়৷ অস্ট্রিয়াতে এভাবে শুল্ক আদায় করা হয়৷ সে দেশে একজন চালককে বছরে আশি ইউরোর মতো পথশুল্ক দিতে হয়৷ আর দ্বিতীয় উপায় হচ্ছে, যতটুকু ব্যবহার ততটুকু শুল্ক৷ এক্ষেত্রে মহাসড়ক ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে টোল প্লাজায় শুল্ক পরিশোধ করেন চালক৷ ইটালি এবং ফ্রান্সে এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে৷
টাকা ঠিকভাবে কাজে লাগছে না
বিশ্বের অনেক দেশে মহাসড়কের মালিক বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান৷ কিন্তু জার্মানির ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন৷ এদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা মুলত সরকারের তত্ত্বাবধানে রয়েছে৷ শুধু জার্মানির উত্তরে অবস্থিত ভার্নভ টানেলের মতো কিছু স্থাপনা বেসরকারি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷
ফলে জার্মানির মহাসড়ক, সেতু, রেলপথ এবং জলপথ ব্যবস্থাপনা এবং সংস্কারের দায়িত্ব সরকারের৷ আর জার্মানির চালকরা কর প্রদান করেন৷ তাই পথশুল্ক বিরোধীদের বক্তব্য হচ্ছে, সড়ক ব্যবস্থা সংস্কারের ক্ষেত্রে এই করের টাকা ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছে না সরকার৷
জার্মান এডিএসি অটোমোবাইল ক্লাব এর কর্মকর্তা অটো সালমান এই বিষয়ে বলেন, ‘‘জার্মান গাড়ি চালকরা প্রতি বছর ৭১ বিলিয়ন ইউরো কর প্রদান করেন৷ কিন্তু মহাসড়ক নির্মাণ এবং সংস্কারে বছরে খরচ করা হয় মাত্র ১৯ বিলিয়ন ইউরো৷'' অটো মনে করেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে অর্থের কোনো ঘাটতি নেই, ঘাটতি আছে সঠিকভাবে অর্থ ব্যবহারের রাজনৈতিক সদিচ্ছায়৷''
জার্মান সংসদের পরিবহন কমিটির চেয়ারম্যান আন্টন হোফরাইটার মনে করেন, চালকদের উপর পথশুল্ক আরোপ করাটা অন্যায় হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘শুল্ক আদায়ের একমাত্র যে পদ্ধতিটি দ্রুত এবং স্বচ্ছভাবে আরোপ করা যায়, সেটি হচ্ছে ‘ভিনিয়েট' পদ্ধতি৷ কিন্তু পরিবেশ এবং সমাজ বিবেচনায় এই পদ্ধতি অনেক দুর্বল৷ কেননা এতে যিনি কম কিংবা ছোট গাড়ি চালান তিনি বেশি বা বড় গাড়ি যারা চালান, তাদের মতো একই হারে পথশুল্ক প্রদান করবেন৷''
শুল্ক সিস্টেম কি অর্থবহ?
তবে জার্মানিতে ইতিমধ্যে একটি পদ্ধতি চালু রয়েছে, যা এই সমস্যার সমাধান করতে পারে৷ ২০০৫ সালে ট্রাকের জন্য একটি পথশুল্ক ব্যবস্থা চালু হয় এদেশে৷ এতে একটি ট্রাক কতটা পথ পাড়ি দিয়েছে, সেটি আকারে কত বড় এবং কতটা পরিবেশবান্ধব, সে সব কিছু বিবেচনা করেই শুল্ক নির্ধারণ করা হয়৷ এই ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে এখন অবধি ত্রিশ বিলিয়ন ইউরো রাজস্ব আদায় করেছে জার্মানি৷
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ছোট গাড়ির উপর শুল্ক আরোপ করে আসলে কত টাকা আয় করা যাবে? পথশুল্ক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এজেস এর সহায়তায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই খাত থেকে বছরে চার বিলিয়ন ইউরো আয় সম্ভব৷ তবে যদি শুধুমাত্র দেশের বাইরে থেকে আসা চালকদের উপর টোল আরোপ করা হয়, তাহলে আয় হতে পারে সাতশো মিলিয়ন ইউরো৷ জার্মান এডিএসি অবশ্য এ ক্ষেত্রে ভিন্ন তথ্য দিচ্ছে৷ তাদের হিসেবে বছরে আয় হবে ২২৫ মিলিয়ন ইউরো৷
শুধুমাত্র সীমানা পেরিয়ে আসা বিদেশিদের উপর শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে আইনি জটিলতাও রয়েছে৷ সবুজ দলের নেতা হোফরাইটার মনে করেন, এটা জার্মান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়৷
ডুইসবুর্গ-এসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাফিক গবেষক মিশায়েল শ্রেকেনব্যার্গ-ও এই বিষয়ে একমত৷ তবে তিনি মনে করেন, পথশুল্ক আদায়ের বিকল্পও নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিশেষ করে ‘ফেডারেল' সড়কগুলো প্রায় ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে গেছে৷ সেতুগুলো ক্ষেত্রবিশেষে ১০ থেকে ২০ বছর আগেই সংস্কার করা উচিত ছিল৷''
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘জার্মানির প্রায় অর্ধেক সেতু সংস্কার করা প্রয়োজন৷ ২০ শতাংশ মহাসড়ক এবং ৬০ শতাংশ ‘ফেডারেল' সড়কের ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য৷ আর এসব সংস্কারের খরচ জোগাতে পথশুল্ক আরোপ ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই৷''