রেহাই পেলেন মোহাম্মদ সামি?
২৩ মার্চ ২০১৮মূলত স্বামী-র মধ্যে সমস্যা এটি৷ নামী ক্রিকেট খেলোয়াড় মোহাম্মদ সামি’র একটি গোপন মোবাইল ফোনের হদিস পান তাঁর স্ত্রী হাসিন৷ সেই ফোনে তিনি দেখতে পান, সামির সঙ্গে একাধিক মহিলার নিয়মিত ‘চ্যাট’ করার রেকর্ড, যা থেকে বোঝা যায়, ওই মহিলাদের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে সামি'র৷ এরপরই হাসিন গোটা বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন৷ নির্দিষ্ট কয়েকজন মহিলার নাম করে, সামির বিরুদ্ধে ব্যাভিচারের অভিযোগ আনেন৷ সেই সঙ্গে অভিযোগ করেন, ভারতীয় ক্রিকেট দলের সঙ্গে বিদেশ সফরে গেলে সামি নিয়মিত যৌনকর্মীদের সঙ্গ কিনতেন৷ আর তার সঙ্গে আরও গুরুতর একটি সন্দেহ প্রকাশ করেন হাসিন, যে সামি অনেক সময়ই বেশ মোটা অঙ্কের টাকা পেয়েছেন, যার উৎস অজানা৷ ওই টাকা সামি কেন পেয়েছেন, সে নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন হাসিন৷ ইঙ্গিত ছিল পরিষ্কার যে, সামি হয়ত ম্যাচ গড়াপেটার সঙ্গেও জড়িত থাকতে পারেন৷
এই সন্দেহ প্রকাশ করার পর ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক পর্ষদ বিসিসিআই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সামি সম্পর্কে একটি তদন্ত শুরু করে৷ বৃহস্পতিবার সেই তদন্ত কমিটি জানিয়ে দিলো, ম্যাচ গড়াপেটার সঙ্গে সামির জড়িত থাকার সন্দেহ অমূলক৷ তদন্ত শুরু হওয়ার আগে পর্ষদের সঙ্গে সামির চুক্তির ওপর যে সাময়িক স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছিল, তা-ও তুলে নেওয়া হয়৷ ক্রীড়া সাংবাদিক অনির্বাণ মজুমদার এই প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে জানালেন, বিসিসিআই মোহাম্মদ সামিকে সন্দেহমুক্ত ঘোষণা করার অর্থ, ক্রিকেট খেলে যেতে সামির কোনও বাধা রইলো না৷ ভারতীয় টেস্ট এবং এক দিনের ক্রিকেটে তো বটেই, পেশাদার আইপিএল ক্রিকেট লিগেও সামি খেলতে পারবেন৷ কারণ, সামির খেলোয়াড়ি দক্ষতা নিয়ে এখনও কোনও প্রশ্ন নেই৷ যদি না হাসিনের আনা অন্য অভিযোগে সামির কারাদণ্ড, বা অনুরূপ কোনও শাস্তি হয়, সামির খেলে যেতে কোনও অসুবিধে নেই, যা হয়ে গেল অলিম্পিয়ান টেবিল টেনিস খেলোয়াড় সৌম্যজিৎ ঘোষের ক্ষেত্রে৷ বান্ধবীর সঙ্গে প্রতারণা, এমনকি ধর্ষণ এবং জোর করে গর্ভপাত করানোর অভিযোগ উঠেছে সৌম্যজিতের বিরুদ্ধে৷ ভারতীয় টেবিল টেনিসের নিয়ন্ত্রক সংস্থা টিটিএফআই এখন সৌম্যজিৎকে সাসপেন্ড করার কথা ভাবছে৷ সামির আপাতত সেই সমস্যা নেই, জানালেন অনির্বাণ৷
কিন্তু ব্যাভিচারের অভিযোগের ভিত্তিতেই বা সামিকে কী শাস্তি দেওয়া যেতে পারে? ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী, ব্যাভিচারের সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছরের জেল, অথবা জরিমানা, অথবা দুটোই৷ ডয়চে ভেলেকে জানালেন ফৌজদারি আইনজীবী সন্দীপ ভট্টাচার্য৷ কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাভিচার প্রমাণসাপেক্ষ৷ আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, বিবাহ বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, যদি না সেটা ধর্ষণ হয়, তা হলে একমাত্র বিবাহিত মহিলার স্বামীর অগোচরে, বা অনুমতি ছাড়া সম্পর্কই ব্যাভিচার হিসেবে ধরা হবে৷ এমনকি যৌনকর্মীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কও ব্যাভিচারের আওতায় পড়বে না, অন্তত আইনের চোখে৷ এবং শুধু অভিযোগ তুললেই হবে না, সেটা প্রমাণ করতে হবে৷ বান্ধবীদের সঙ্গে চ্যাটের ভিত্তিতে কোনও কিছু ধরে নেওয়াটা আইনের কাছে গ্রাহ্য হবে না৷