আইএসে যোগ দিচ্ছে রোহিঙ্গারা
২৭ জানুয়ারি ২০১৭বৃহস্পতিবার পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানের শেষ দিনে তিনি পুলিশ সুপারদের এই নির্দেশ দেন৷ অবশ্য কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. এ কে এম ইকবাল হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আইএসে যোগ দিচ্ছে এমনটি নয়, আইজিপি স্যার আমাদের বলেছেন, রোহিঙ্গারা যেন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে না পড়ে – সেদিকে নজর রাখতে হবে৷ পাশাপাশি রোহিঙ্গারা যেখানে আছে সেখানে আমাদের পুলিশের ক্যাম্প আছে, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও সেখানে কাজ করছেন৷ তাদের সব কার্যক্রম মনিটরিং হয়৷ তারা সবসময় আমাদের নজরদারির মধ্যে থাকে৷''
তবে বাংলাদেশের শীর্ষ একটি ইংরেজি দৈনিকের খবর, পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে আইজিপি বলেছেন, ‘‘রোহিঙ্গারা আইএসে যোগ দিচ্ছে৷ এমনকি নব্য জেএমবি, হুজিসহ যত ধরনের জঙ্গি সংগঠন আছে, সেখানে যোগ দিচ্ছে তারা৷''
কক্সবাজারের স্থানীয় সাংবাদিক আবু তাহের ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিকেও কাজ করেন৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি রোহিঙ্গাদের অপরাধের ধরণ ও আইএসে যোগদান প্রসঙ্গে কথা বলেছেন৷ তাঁর মতে, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আইএসের সম্পৃক্ততা নতুন কিছু নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের তো অনেকগুলো গ্রুপ আছে৷ এর মধ্যে নতুন একটি গ্রুপ হয়েছে এএমএম৷ এই গ্রুপের প্রধান এক সময় আইএসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ তিনি আফগানিস্তানে যুদ্ধ করেছেন৷ সিরিয়াতেও ছিলেন৷ তিনি নিজেকে আবু আম্মাস বলে পরিচয় দেন৷ আমরা জানি, তার নাম আতাউল্লাহ৷ তিনি মিয়ানমারের আরাকানেই থাকেন৷ গত ৯ অক্টোবর আরাকানে মিয়ানমার আর্মির উপর যে হামলা হয়, সেটা তিনিই করেছিলেন৷ ইউটিউবে তার স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও আছে৷ বাংলাদেশে যারা এসেছে, তাদের মধ্যেও তার লোক আছে৷''
আবু তাহের আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকেই তারা (আইএস) সদস্য সংগ্রহ করে৷ চুরি-ডাকাতিসহ নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত এই রোহিঙ্গারা৷ বর্তমানে ক্যাম্পে তিন লাখের মতো আর সব মিলিয়ে ৬ লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আছে৷ কক্সবাজার শহরে রিক্সাওয়ালা থেকে শুরু করে মাছ ধরার বোট চালানো পর্যন্ত অনেক কাজই করে তারা৷ বাসা-বাড়িতে কাজ করে তাদের মেয়েরা৷ কক্সবাজার থেকে শুরু করে ঢাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছে রোহিঙ্গা মেয়েরা৷ বর্তমানে কক্সবাজারের বিভিন্ন অপরাধী গ্রুপগুলোর সঙ্গে তো এই রোহিঙ্গারাই জড়িত৷''
রোহিঙ্গাদের জঙ্গি তত্পরতা, ভোটার হওয়া, বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমানো- – এমন অনেক বিষয়ই নিয়েই কথা হলো নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের কার্যক্রমের খোঁজ-খবর তিনি নিয়মিতই রাখেন৷ তাঁর মতে, ‘‘প্রথমত, এখানে যারা আশ্রয়প্রার্থী ছিল, তাদের সবাইকে গণনার মধ্যে আনা হয়নি৷ প্রথম দিকে যারা এসেছিল, তারা নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপে যুক্ত ছিল৷ আমাদের ভোটার লিষ্টে তারা ঢুকেছে৷ সেখান থেকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গিয়ে নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে৷ বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে৷ সেখানে এদের বেশ কিছু সদস্য পুলিশের হাতে গ্রেফতারও হয়েছে৷ এখন কথা হলো, রোহিঙ্গারা যে ধরনের পরিস্থিতিতে আছে, সেখানে তাদের অপরাধে যুক্ত হওয়া সহজ৷''
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘‘শরণার্থী শিবিরের বাইরে যারা আছে, তাদের রিক্রুট করে জঙ্গি কার্যক্রমে নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত সহজ৷ মিয়ানমারে তারা যেভাবে অত্যাচারিত হয়েছে, তাতে তাদের টার্গেট আমাদের দেশ হতে পারে, আবার মিয়ানমারও হতে পারে৷ আমাদের ওই এলাকাটা তো ঝুঁকির মধ্যে আছে৷ পুলিশের মহাপরিদর্শক যেটা বলেছেন, সেটা একেবারেই ঠিক৷ আমিও তাঁর সঙ্গে একমত৷ তাদের যেভাবে নিবন্ধিত করা হচ্ছে, সেখানে অনেক শিথিলতা আছে৷ অনেক সময় স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজনের ছত্রছায়ায় তারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেছে৷ মাছের ঘের, লবনের ঘেরে তাদের সস্তায় ব্যবহার করা হয়৷ এই ধরনের মানুষ যারা রোহিঙ্গাদের উত্সাহিত করছে, তাদের খুঁজে বের করা ও নিবৃত্ত করাই এখন আমাদের প্রধান কাজ৷''