1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গা সংকট মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিচ্ছে

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে সংকটে রয়েছে শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীরা৷ সংকট নিরসনে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন৷ ত্রাণ বিতরণেও সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের৷

https://p.dw.com/p/2k8hJ
ছবি: Reuters/D. Siddiqui

জাতিসংঘের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২৫শে আগস্টের পর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে মোট চার লাখ ১০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছেন ৷ এদের মধ্যে শিশু দুই লাখ ৪০ হাজার, এক বছরের কম বয়সি শিশু ৩৬ হাজার, অন্তঃসত্ত্বা এবং প্রসূতি নারী ৫২ হাজার৷ জাতিসংঘ থেকে জরুরি সহায়তা চাওয়া হয়েছে ৭ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার৷ বাংলাদেশ সরকার, বিদেশি রাষ্ট্র, ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক ত্রাণ সহায়তা চলছে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে৷

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে নারী এবং শিশুই বেশি৷ টেকনাফে খবর সংগ্রহের জন্য অবস্থানরত সাংবাদিক আমানুর রহমান রনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘রোহিঙ্গাদের মধ্যে এখনো ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যায়নি৷ টেকনাফ থেকে সড়কের দু'পাশে হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছেন৷ তারা ত্রাণের কোনো গাড়ি দেখলেই ছুটে যাচ্ছেন৷ ঝাঁপিয়ে পড়ছেন৷ একারণে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে৷ আর ত্রাণের ক্ষেত্রে কার কি প্রয়োজন তার কোনো হিসাব নাই৷ সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন সংস্থা তাদের ইচ্ছেমত ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন৷ কিন্তু খাবার ছাড়াও বেশি প্রয়োজন শিশু খাদ্য, কাপড়চোপড়, চিকিৎসা৷''

‘এক জায়গায় নিয়ে ত্রাণ বিতরণ সম্ভব হচ্ছে না’

আমানুর আরও জানান, ‘‘শিশুরা সবচেয়ে কষ্টে আছে৷ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দুশ'রও বেশি শিশু মারা গেছে৷ অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের অবস্থা সংকটাপন্ন৷ তাদের চিকিৎসার জন্য ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না৷ আর সেনিটেশন এবং খাবার পানির সংকট প্রচণ্ড৷ মাত্র ৩০টি নলকূপ দিয়ে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে৷'' রোহিঙ্গাদের এক জায়গায় নেয়াই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান তিনি৷ বলেন, তাদের এক জায়গায় নেয়া না গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে৷

কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘অন্তত ২০ হাজার অন্তঃসত্ত্বা নারী চিহ্নিত করতে পেরেছি৷ আমরা চেষ্টা করছি তাদের নিরাপদে প্রসব করাতে৷ শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে৷ একজন এইচআইভি পজেটিভ পুরুষও পেয়েছি৷ এছাড়া ডায়রিয়া, নিউমোনিয়সহ নানাধরণের রোগে তারা আক্রান্ত হচ্ছে৷''

‘ডায়রিয়া, নিউমোনিয়সহ নানাধরণের রোগে তারা আক্রান্ত হচ্ছে’

রোহিঙ্গাদের জন্য ক্যাম্প এলাকায় ৩২টি মেডিক্যাল টিম পালা করে কাজ করছে বলে জানান তিনি৷ বেসরকারি পর্যায়েও মেডিক্যাল টিম আছে৷ এর বাইরে উপজেলা, ইউনিয়ন এবং কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিকেও তারা চিকিৎসা পাচ্ছে৷

জেলা প্রশাসন চাইছে কুতুপালং-এর কাছে বালুখালি এলাকায় সব শরণার্থীদের নিতে৷ আমানুর জানালেন সেটা সম্ভব হচ্ছে না৷ এখনো দুইটি নিবন্ধিত এবং ১৪টি অনিবন্ধিত ক্যাম্প ছাড়াও টেকনাফ, উখিয়া এলাকায় রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে আছেন৷ ত্রাণের আশায়ই মূলত তারা মহাসড়কে পাশে অপেক্ষা করছেন৷ আর তাদের জন্য থাকার প্রকৃতপক্ষে এখনো কোনো ব্যবস্থা হয়নি বলে জানালেন আমানুর৷

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহিদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এ পর্যন্ত ঠিক কত ত্রাণ সহায়তা এসেছে তা বলা সম্ভব নয়৷ সরকারের পক্ষ থেকে খাবার রান্না করে রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে৷ এর বাইরে ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও ত্রাণ বিতরণ চলছে৷''

‘সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শিশু খাদ্য, কাপড়চোপড়, চিকিৎসা’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এক জায়গায় নিয়ে ত্রাণ বিতরণ সম্ভব হচ্ছে না৷ কারণ যেখানে তাদের নিতে চাই সেই বালুখালি যাওয়ার রাস্তা নেই৷ তাই তিনটি রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে৷ আমরা এখন ত্রাণ বিতরণের জন্য ১২টি স্পট নির্ধারণ করে দিয়েছি৷ জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ওই ১২টি স্পটে ত্রাণ বিতরণ করা যাবে৷''

আমানুর জানিয়েছেন, ‘‘রোহিঙ্গারা এমন সব দুর্গম এলকায় আশ্রয় নিয়েছেন যেখানে এখনো কোনো ত্রাণ যায়নি৷ বনের ভেতরও সন্তান প্রসবের ঘটনা ঘটেছে৷''

এ প্রসঙ্গে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য