নোবেলজয়ীদের সঙ্গে আড্ডা
১৪ জুলাই ২০১২জুলাই মাসের ১ থেকে ৬ তারিখ পর্যন্ত বসেছিল লিন্ডাউ সম্মেলনের ৬২তম আসর৷ এবার সম্মেলনের নির্ধারিত বিষয় ছিল পদার্থবিজ্ঞান৷ গত বছরের বিষয় ছিল চিকিৎসাবিজ্ঞান৷ আর আগামী বছরের বিষয় হল রসায়ন৷
২০০৭ সাল থেকে নিয়মিত এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও গবেষকরা৷ সেটা সম্ভব হয়েছে ভিয়েনাপ্রবাসী প্রয়াত বিজ্ঞানী আবদুল ফাত্তাহ'র উদ্যোগের কারণে৷
এবারের আসরে ২৮ জন নোবেলজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী অংশ নিয়েছিলেন৷ আর তরুণ গবেষকের সংখ্যা ছিল ৫৮০ জন৷ বাংলাদেশ থেকে মোট পাঁচজন অংশ নিয়েছিলেন সম্মেলনে৷ এঁরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ, ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের প্রভাষক শিহান সাজিদ ও আয়েশা জামান, একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শাহ মোহাম্মদ বাহাউদ্দীন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. আল হেলাল এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল মান্নান৷
সম্মেলনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা হচ্ছিল শিহান সাজিদের সঙ্গে৷ তিনি বললেন, ‘‘অংশ নেয়া ২৮ জন নোবেলজয়ীর মধ্যে তিন-চারজনের কাজ আমি ভালভাবে দেখার চেষ্টা করতাম৷ লিন্ডাউতে তাঁদের সঙ্গে আমি কথা বলতে পেরেছি৷ উইলিয়াম ফিলিপস নামের এক নোবেলজয়ীর সঙ্গে আমি টানা তিনদিন দুপুরের খাবার খেয়েছি৷ এছাড়া অন্যান্যদের সঙ্গে ছবি তুলেছি৷ প্রত্যেকের সঙ্গেই পাঁচ মিনিট করে হলেও কথা বলেছি৷ তারা আমাদের সঙ্গে এমনভাবে কথা বলেছেন যেন মনে হচ্ছিল তারা আমাদেরকে অনেকদিন ধরে চেনেন৷ পদার্থবিজ্ঞানের নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি আমরা৷''
শুধু নোবেলজয়ী নয়, অন্যান্য দেশ থেকে আসা তরুণ গবেষকদের সঙ্গেও আলোচনার সুযোগ হয়েছে বলে জানালেন সাজিদ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের ঠিকানা বিনিময় করেছি৷ এছাড়া বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকেও অনেকে সম্মেলনে গিয়েছিলেন৷ তাদের সঙ্গেও কথাবার্তা হয়েছে৷''
লিন্ডাউতে যখন সম্মেলন চলছিল তখন সার্নের বিজ্ঞানীরা জেনেভায় হিগস-বোসন কণার মতো একটি কণা আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন৷ বিশ্বের অন্যান্য বিজ্ঞানীদের মতো খুশির রেশটা ছড়িয়ে পড়েছিল লিন্ডাউ সম্মেলনেও৷ সেসময়কার অনুভূতির কথা জানাতে গিয়ে সাজিদ বলেন, ‘‘ঘোষণা পর্বটি সরাসরি দেখানো হয়েছিল লিন্ডাউয়ের সম্মেলন স্থলে৷ সেখানে অনেক কণা পদার্থবিদও উপস্থিত ছিলেন৷ সার্নের ঘোষণার পরপরই তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আনন্দ প্রকাশ করতে থাকেন৷ সেটা ছিল দেখার মতো একটা বিষয়৷''
সাজিদ বলেন, লিন্ডাউ সম্মেলনে অংশ নিতে হলে মনোনয়নের দুটো ধাপ পেরোতে হয়৷ ‘‘প্রথম ধাপে বাংলাদেশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স আগ্রহীদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ পাঁচজনকে মনোনীত করে লিন্ডাউ কাউন্সিলে তাদের নাম পাঠিয়ে থাকে৷ এরপর লিন্ডাউ কাউন্সিল চাইলে পাঁচজনকেই আমন্ত্রণ জানাতে পারে৷ বা একজনকেও পারে৷ সেটা পুরোপরি তাদের ব্যাপার৷ এবার বাংলাদেশ থেকে মনোনীত পাঁচজনকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিল লিন্ডাউ কাউন্সিল৷''
আগামী দু'একমাসের মধ্যেই আগামী বছরের লিন্ডাউ সম্মেলনের জন্য আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানালেন সাজিদ৷ এজন্য লিন্ডাউ কাউন্সিলের ওয়েবসাইট বা বাংলাদেশে এ সংক্রান্ত ওয়েবসাইটের দিকে নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী