লিবিয়ার ঘটনায় সিরিয়ার জনগণের মনে নতুন আশা
২৭ আগস্ট ২০১১আরব বিশ্বে যে পুনর্জাগরণের সৃষ্টি হয়েছে তার পরিণতিতে একের পর এক একনায়কের পতন দেখছে বিশ্ববাসী৷ দু-একদিন আগে বিদ্রোহীদের হাতে ত্রিপোলির পতনের মধ্য দিয়ে সেই পরাস্ত একনায়কদের সারিতে নাম লেখালেন মুয়াম্মার আল গাদ্দাফি৷ অবশ্য এখনও গোটা লিবিয়ার দখল বিদ্রোহীদের হাতে আসেনি, গাদ্দাফিকে এখনও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়নি৷ তবে গণতন্ত্রকামী মানুষের আশা, ত্রিপোলির পতন থেকে সিরিয়ার বর্তমান প্রশাসন শিক্ষা গ্রহণ করবে, নিজ জনগণের ওপর নিপীড়ণ বন্ধ করবে, ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াবে এবং নতুন সংস্কারের পথ উন্মুক্ত করবে৷
ত্রিপোলিতে গাদ্দাফি বাহিনীর পতনের পর গত বুধবার সিরিয়ার সরকার বিরোধী ওয়েবসাইট দ্য সিরিয়ান রেভোল্যুশান ২০১১ এর বার্তায় লেখা ছিল, ‘‘এর পরের বার আসাদের পালা, এভাবেই স্বৈরশাসকদের পতন হয়৷'' সিরিয়ার সরকার বিরোধী কর্মী ওমর ইদিলবি বর্তমান আসাদ প্রশাসনকে উল্লেখ করেছেন ‘‘কোমায় থাকা প্রশাসন'' বলে৷ তিনি বলেন, আরব দেশগুলোতে যে রাজনীতি মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তা পরিবর্তনের জন্য মানুষ প্রতিনিয়ত বিক্ষোভ করছে৷ শাসকদের এটা বোঝা উচিত, হয় তাদেরকে বর্তমান শাসন ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে হবে নয়তো এভাবে বিদায় নিতে হবে৷ কোন সন্দেহ নেই লিবিয়াতে যা ঘটেছে তা সিরিয়ানদের উদ্দীপ্ত করবে, বলেন ওমর ইদিলবি৷
চলতি বছর আরব বিশ্বে একের পর এক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে যার শুরুটা হয়েছিল জানুয়ারি মাসে টিউনিসিয়াতে৷ সেখানকার স্বৈরশাসক জয়নাল আবদিন বেন আলি দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন৷ এরপর ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মাধ্যমে পতন ঘটে মিশরের একনায়ক হোসনি মুবারকের৷ বিক্ষোভরত জনতার ওপর ব্যাপক দমন পীড়ণ চালানোর পর গত জুন মাসে বিদ্রোহীদের গোলার আঘাতে মারাত্মক আহত হন ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহ৷ চিকিৎসার জন্য তাঁকে সৌদি আরব যেতে হয়৷ সর্বশেষ ত্রিপোলি পতনের মধ্য দিয়ে লিবিয়াতে গাদ্দাফির শাসনেরও অবসান ঘটলো৷ এই সব ঘটনার পর এখন সবার নজর সিরিয়ার দিকে৷
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার তথ্য মতে, গত কয়েক মাসে সরকার বিরোধী বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে সিরিয়ার অন্তত ২২০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে৷ তবে এর মধ্যে সিরীয় সেনাদের প্রাণহানির ঘটনাও দেখা গেছে৷
লিবিয়ার অবকাঠামো
এদিকে গাদ্দাফির পতনের পর লিবিয়াকে আবারও দাঁড় করানোর কঠিন দায়িত্ব এখন সেদেশের ন্যাশনাল ট্রান্জিশন কাউন্সিল বা এনটিসির হাতে৷ যুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশের অবকাঠামো পুনর্গঠন এবং তেল সম্পদকে আবারও চালু করার জন্য তাদের এখন প্রয়োজন অর্থ৷ গাদ্দাফি প্রশাসনের ১০০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ বিদেশে জব্দ করা হয়েছে৷ টিএনসি এখন সেসব অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য চেষ্টা করছে৷ ইতিমধ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ লিবিয়াতে মানবিক সহায়তার জন্য জব্দকৃত দেড় বিলিয়ন অর্থ ছাড় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি দেশ লিবিয়াকে অর্থ সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এখন পর্যন্ত৷ তবে লিবিয়ার অবকাঠামো গড়ে তুলতে অন্তত দশ বছর লাগবে বলে জানিয়েছেন এনটিসির আহমেদ জেহানি৷
উল্লেখ্য, লিবিয়ার অর্থনীতি মূলত তেল রপ্তানি নির্ভর৷ লিবিয়াতে গাদ্দাফি বিরোধী গণবিক্ষোভ শুরু হবার আগে দেশটিতে প্রতিদিন ১.৬ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উত্তোলন করা হতো৷ গত কয়েক মাসে সেই উত্তোলনের পরিমাণ কমে এসেছে দৈনিক এক লাখ ব্যারেলেরও নীচে৷
প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক