1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লেইলার জোশিজি বনাম ভারতের মোদিজি

২২ আগস্ট ২০১৯

২০১৪ থেকে ভারতের ক্ষমতায় হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি৷ একই সময়ে, দেশে বাড়ছে কিছু রাজনৈতিক টেলিভিশন সিরিজের রমরমা৷

https://p.dw.com/p/3OJyA
Serie Leila auf Netflix
ছবি: picture-alliance/dpa/Everett Collection

২০৪৯ সালের ভারতে জোশিজির ভয়ে সবাই সন্ত্রস্ত৷ জোশিজির হাতে অগাধ ক্ষমতা থাকার ফলে দেশে তিনিই সর্বেসর্বা৷ জোশিজির ভারতে আন্তঃধর্ম বা আন্তঃগোষ্ঠী বিবাহ থেকে যে সন্তানদের জন্ম, তাদের গায়ে ‘মিশ্রিত' ট্যাগ৷ কাল্পনিক ট্যাগ নয়, রীতিমত চামড়ার তলায় ঢুকিয়ে রাখা চিপ৷ জোশিজির ভারতে রাষ্ট্রের চোখ কেউ এড়াতে পারে না৷ সবার চামড়ার তলার চিপ বলে দেয় কোন ধর্ম, কোন জাত, পরিবারে রক্তের ‘মিশ্রণে'র কতটুকু ইতিহাস৷ এসবের ওপর নির্ভর করছে কতটুকু জল, জমি, নিশ্বাস নেবার জন্য অক্সিজেন বা অর্থ পাবে কোনো নাগরিক৷

আপাতদৃষ্টিতে শুনলে মনে হবে ভারতের ভবিষ্যদ্বাণী করছেন কোনো জ্যোতিষী৷ কিন্তু তা নয়, খোদ ২০১৯ সালের ভারতে বসেই ২০৪৯এর ভারত দেখাচ্ছে নেটফ্লিক্সে জনপ্রিয় হওয়া একটি টেলিভিশন সিরিজ ‘লেইলা'৷ প্রয়াগ আকবরের একটি উপন্যাস থেকে নেওয়া এর গল্প৷ ১৪ জুন মুক্তি পাওয়া এই সিরিজ দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল ভারতের এমন চিত্র হয়তো অসম্ভব নয়৷ প্রযুক্তির সাহায্যে দেশের নাগরিকদের ‘ক্যাটেগরাইজ' বা ভাগ করে দেওয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে ভারতে৷ কাগজ মানেই নাগরিক, নতুবা নয়, এর সাথে হাত মিলিয়েছে ‘আধার' কার্ডের মাধ্যমে নাগরিককে ডিজিটাল তথ্যে পরিণত করা৷

তবে এসব দেখে মোটেও চমকাইনি৷ ‘লেইলা'র গল্পে ভারতের আবহাওয়া, জল সংকট ও এর সাথে জাতপ্রথার এক হয়ে যাওয়া দেখে ভারতীয় নাগরিক হিসাবে ভীত হয়েছি৷ বর্তমান ভারতে গোমাংস খাওয়ার গুজব মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলে৷ নীচু জাতের ‘দলিত' হবার ‘অপরাধে' সেতু দিয়ে যাওয়ার অধিকার থাকেনা মৃতদেহেরও৷ ফলে, দড়ি দিয়ে বেঁধে সেতুর নীচেই ফেলে দিতে হয় দলিতের লাশ৷

ফলে, ২০৪৯ সালে এই ভারতেই যে ‘মিশ্রিত' কোনো নতুন বিদ্বেষী গালাগাল হয়ে উঠবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা আছে কি? বাকি রইলো জল, জমি, বাতাস ইত্যাদির ওপর নাগরিকের অধিকারের কথা৷ টুজি স্পেকট্রাম কাণ্ডে আকাশ বেচা নিয়ে কেলেঙ্কারির কথা সবাই জানে৷ ওড়িশায়, ছত্তিশগড়ে যেভাবে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে তাদের থেকে ক্রমাগতভাবে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে জমি, জল, তারপরও এই প্রশ্ন করার প্রয়োজনই বা কতটুকু?

মোদীজির দেশে জোশিজি

ভারতে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বেড়েছে দেশে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীদের তৎপরতা৷ ‘লাভ জিহাদ'এর নামে আন্তঃসম্প্রদায় বিবাহের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে ব্যাপক নীতিপুলিশি৷ শুধু তাই নয়, ‘ঘর ওয়াপসি'র মতো প্রকল্প চেষ্টা চালাচ্ছে ভারতের মাটি থেকে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীদের ‘হিন্দু' ছাতার তলায় একত্রিত করতে৷ ‘অখণ্ড ভারত'র অন্তর্গত যে হিন্দু রাষ্ট্রচিন্তার প্রচার চালিয়ে আসছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ গত কয়েক দশক ধরে, সেই সংঘ পরিবারের আদর্শেই গঠিত বিজেপি৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এই সংঘেরই সাবেক সদস্য৷

ফলে, লেইলা প্রকাশ পাবার পর অনেক আলোচনায় উঠে আসছিল একই কথা- আজকের মোদীজিই আগামীর জোশিজি৷ এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে লেইলা সিরিজের অভিনেত্রী হুমা কুরেশি হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, ‘‘সব স্বৈরাচারীরাই ক্ষমতা হারাতে ভয় পান৷ তাই বাঁধন শক্ত করেন৷''

এবিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই যে ‘লেইলা'র  জোশিজি একজন স্বৈরাচারী৷ গোল পেকে যায় তখন, যখন প্রশ্ন ওঠে মোদীজিই কি জোশিজি? অর্থাৎ, তিনি কি কিছুটা হলেও স্বৈরাচারী?

Shabnam Surita Dana
শবনম সুরিতা, ডয়চে ভেলেছবি: Melissa Bach Yildirim/AU Foto

জোশিজির ভারতে তার বিরুদ্ধে কথা বলার জো নেই৷ মোদীজির ভারতে সংবাদমাধ্যম প্রায় রুদ্ধ হলেও নেটফ্লিক্সের মতো অনলাইন মাধ্যম পুরোপুরি রাষ্ট্রের আওতায় নেই৷ আলোচনা চলছে সেন্সর বোর্ডের ক্ষমতায় শীঘ্রই তা আনার, কিন্তু এখনও তা সম্ভব হয় নি৷ ফলে, জুন মাসে লেইলা মুক্তি পাবার পর এর বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নভাবে সোশাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ সংগঠিত হলেও, সম্প্রচার থামানো যায়নি৷

আপাতত মোদীজির ভারত আর জোশিজির ভারত এক না৷ এখন লেইলা ছাড়াও জনপ্রিয় হয়েছে ‘সেক্রেড গেমস'র মতো সমালোচক টেলিভিশন সিরিজও৷ ভারতীয় নাগরিক হিসাবে আমার এটুকুই আশা, জোশিজি থেকে যাতে শিখতে না শুরু করেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী৷ সেটা হলে আর প্রশ্ন করার কোনো অবকাশ থাকবে না৷ আক্ষরিক অর্থেই৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য