শৃঙ্খলা-স্বস্তি ফেরানোই প্রধান চ্যালেঞ্জ
৭ আগস্ট ২০২৪বিশিষ্টজন ও শিক্ষাবিদরা এমন অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, শিক্ষার্থীরা যেটা চেয়েছে সেটা মেনেই রাষ্ট্র কাঠামোতে সংস্কার করতে হবে৷ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই সেটা করতে হবে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নতুন যে সরকারটি গঠন হতে যাচ্ছে, সেই সরকারের প্রথম কাজ হবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা৷ দেশে এখন যে হামলা, লুটতরাজ হচ্ছে, সেগুলো যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ করা৷ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হবে৷ পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি যে কাজগুলো করতে হবে, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতে হবে৷ প্রধানমন্ত্রী যে একচ্ছত্র ক্ষমতা ভোগ করেন, সেটা কমাতে হবে৷ আবার পার্লামেন্টে কোনো এমপি দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিলে তার সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায়৷ এটা তো বাকস্বাধীনতা হলো না৷ দলের কোনো সিদ্ধান্তে কোনো এমপি একমত নাও হতে পারেন, ফলে তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে৷ এমন অনেক কিছুই করতে হবে৷ যে কাজগুলো এই অন্তর্বর্তী সরকার হয়ত পারবে না, পরবর্তী সংসদে এগুলো করতে হবে৷''
বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ হতে পারে বলে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান৷ বুধবার বিকেলে সেনাসদরে বিফ্রিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি৷ সেনাপ্রধান বলেন, ‘‘ড. ইউনূস আগামীকাল দেশে আসবেন৷ আমি তাকে বিমানবন্দরে রিসিভ করবো৷ আশা করি আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) রাত ৮টায় অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ অনুষ্ঠিত হবে৷ এ সরকারে ১৫ জন সদস্য থাকতে পারেন৷'' পুলিশ সক্রিয় হলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলেও মনে করেন তিনি৷
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেশে এখন শৃঙ্খলা ফেরানোই প্রথম কাজ৷ মানুষকে আশ্বস্ত করতে হবে, দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো হবে এবং গণতন্ত্র ফিরে আসবে৷ নতুন সরকারের প্রথম কাজ হবে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে বসে তাদের কথা শুনতে হবে৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সংস্কার করে মাঠে নামাতে হবে৷ এটা করতে হয়ত একটু কষ্ট হবে৷ এই বাহিনীর শীর্ষপদে পরিবর্তন আনতে হবে৷ এখন যে কাজটা বাচ্চারা করছে, সেটা তাদের করতে হবে৷ আমার বাসা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে, ফলে আমার বাসা বাচ্চারা পাহারা দিচ্ছে৷ মানুষের স্বস্তি নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এর সঙ্গে ট্যাগ করে দিতে হবে৷ বাচ্চারা যে কথাটা বলছে, রাষ্ট্র কাঠামো আগে সংস্কার করতে হবে৷ আমি তাদের সঙ্গে একমত৷''
এদিকে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই ফ্রান্স থেকে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীর উদ্দেশ্যে আহবান জানিয়ে বলেছেন, ‘‘আমরা নতুন বিজয়ের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করবো৷ কোনো ভুলে যেন আমাদের এ বিজয় হাতছাড়া না হয়৷ আমি সাহসী ছাত্রদের অভিনন্দন জানাই, যারা আমাদের দ্বিতীয় বিজয় দিবস বাস্তবে রূপ দিতে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং অভিনন্দন জানাই দেশের আপামর জনসাধারণকে যারা ছাত্রদের এ আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন৷ আমি সবাইকে বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে এবং সব ধরনের সহিংসতা ও স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পদ বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি৷ দলমত নির্বিশেষে সবাইকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করছি৷ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দেশটি আমাদের রক্ষা করতে হবে৷''
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রথমেই কিন্তু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে৷ কারণ দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন বেশ নাজুক৷ প্রথমেই তাদের মানুষের বাড়িতে হামলা, লুটপাট থামাতে হবে৷ এই কাজটা কিন্তু এখনও শুরু হয়নি৷ এরপর তারা নানা ধরনের উদ্যোগ নেবে৷ কিন্তু তাদের মনে রাখতে হবে, তারা একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন তাদের উপহার দিতে হবে৷ সেই নির্বাচন করতে তাদের যে ধরনের কাজ করা দরকার সেটা তাদের আগে করতে হবে৷ এরপর নানা ধরনের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে সংস্কার আনা দরকার, সেই কাজগুলো করতে হবে৷''
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে৷ কিছু জিনিস নষ্ট হয়ে গেছে৷ যেমন সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, গণভবন ও ধানমন্ডি ৩২ নম্বর৷ এগুলো তো শেখ হাসিনার কিছু না৷ এগুলো রাষ্ট্রীয় সম্পদ৷ বহু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল সেখানে ছিল৷ এগুলো তচনছ হয়ে গেছে৷ ফলে যা গেছে তা তো গেছেই৷ এখন আর কিছু যেন নষ্ট না হয় সেদিকে নতুন সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে৷ এরপর তারা নানা ধরনের উদ্যোগ নেবেন সেটা ঠিক আছে৷ প্রথমেই মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফেরাতে হবে৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে পুনর্গঠন করে কাজে নামাতে হবে৷ তাদের কাজে না নামানো পর্যন্ত মানুষের মধ্যে কিন্তু স্বস্তি আসবে না৷''