ইউরোপে শরণার্থীদের ঢল
১২ মে ২০১৩আফ্রিকার ভূখণ্ডে এক টুকরো ইউরোপ৷ মরক্কোর এক কোণে সেউটা ও মেলিলইয়া আসলে স্পেনের ছিটমহল৷ অর্থাৎ সেখানে পা রাখা মানে ইউরোপে পা রাখা৷ শরণার্থীরা কোনোরকমে সেখানে একবার পৌঁছাতে চায়৷ তারপর সরাসরি ইউরোপের মূল ভূখণ্ডে পৌঁছে নতুন জীবন শুরু করাই তাদের স্বপ্ন৷ তবে সীমান্ত পেরিয়ে সেউটা ও মেলিলইয়া পর্যন্ত পৌঁছানো এবং তারপর সেখানকার শরণার্থী শিবির থেকে ইউরোপের কোনো দেশে পা রাখা – দুটোই অত্যন্ত কঠিন কাজ৷ প্রচেষ্টা শুরু করার আগে অনেক শরণার্থীরই সে বিষয়ে কোনো ধারণা থাকে না৷
ছয় মিটার উঁচু তিনটি প্রাচীর মরক্কো থেকে স্পেনের এই দুই ছিটমহলকে বিচ্ছিন্ন রেখেছে৷ বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে সেখানে প্রবেশ করতে পারলে স্থান হয় শরণার্থী শিবিরে৷ কিন্তু সেখানে যে কতদিন কাটাতে হবে, সে বিষয়ে তাদের ধারণা কম৷ ফলে তাদের স্বপ্ন শুরুতেই একটা ধাক্কা খায়৷ কখনো কখনো বছর দুয়েকও কাটাতে হয় সেই বিষণ্ণ পরিবেশে৷ কেউ হতাশ হয়ে নিজের দেশে ফিরে যাবার কথা ভাবে, অন্যরা অধৈর্য হয়ে ওঠে৷ ইউরোপে উপার্জন করে দেশে টাকা পাঠানোই ছিল তাদের উদ্দেশ্য৷ কিন্তু শিবিরে বসে থেকে সে সব কিছুই হয় না৷
উত্তর আফ্রিকায় স্পেনের ছিটমহল থেকে ইউরোপে প্রবেশের উপায় কী? যাদেরকে সেউটা ও মেলিলইয়া সীমান্ত থেকে ফেরত পাঠানো হয় না, যারা শিবিরে আশ্রয় পান, তাদের সামনে তিনটি বিভিন্ন পথ খোলা থাকে৷ পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছু শরণার্থীকে সাময়িক পাস দেয়, যা নিয়ে তারা ফেরিতে চেপে মালাগা বা আলমেরিয়া পর্যন্ত যেতে পারে৷ তবে শর্ত হলো, সেখান থেকে তাদের নিজেদের দেশে ফিরতে হবে৷
কিন্তু বেশিরভাগ শরণার্থী প্রতিশ্রুতি ভেঙে সেখান থেকে বেপাত্তা হয়ে যায়৷ দ্বিতীয় দল স্পেনের মূল ভূখণ্ডে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় পায়, যেগুলি আসলে কারাগারের মতো৷ স্পেনের আইন অনুযায়ী শরণার্থীদের ৬০ দিন পর্যন্ত এভাবে আটকে রাখা সম্ভব৷ এই সময়ের মধ্যে তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব না হলে তাদের শিবির থেকে মুক্তি দিতে হয়৷ তৃতীয় পথটি সবচেয়ে আকর্ষণীয়, তবে কঠিনও বটে৷ স্পেনের কর্তৃপক্ষ সামান্য কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি কোনো শরণার্থীকে ছিটমহলে থাকতেই স্বীকৃতি দিয়ে থাকে৷ মানবিক কারণে তাদের স্পেনে বসবাস করার অনুমতি দেওয়া হয়৷
সেউটা ও মেলিলইয়া শিবিরে কোনো শরণার্থী আদৌ পৌঁছতে পারে কি না, তা অনেকটাই নির্ভর করছে মরক্কোর নিরাপত্তা বাহিনীর উপর৷ তাদের নজর এড়িয়ে ছিটমহলের সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব বলা চলে৷ ফলে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সমস্যায় ফেলার ক্ষমতা রাখে৷ মাঝেমধ্যে মরক্কোর সৈন্যরা শরণার্থীদের বিশাল দলকে থামিয়ে দেয়৷ অথচ তার দিন দুয়েক পরেই দেখা যায়, শয়ে শয়ে শরণার্থী কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে ছিটমহলে ঢুকে পড়েছে৷ মরক্কো এই কাজ ঠিকমতো করতে ইইউ-র কাছ থেকে বেশ ভালো অঙ্কের অর্থ আদায় করে থাকে৷