কূটনীতিকদের তাগিদ
১৪ জানুয়ারি ২০১৪সোমবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে এই বৈঠক হয়৷ বৈঠকে বর্তমান সময়ে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির হাল তাঁদের কাছে তুলে ধরে বিএনপি৷ কূটনীতিকরা সংঘাত, সহিংসতা বন্ধ করে সংলাপে বসার জন্য সরকার ও বিরোধী দল উভয়কেই উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দেন৷ তাঁরা বলেন, নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন হয়নি, তাই গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ খুঁজে বের করতে হবে৷
বৈঠক শেষে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা বলেন, গত ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র হতাশ৷ এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ মতামত প্রকাশের সুযোগ পায়নি৷ যুক্তরাষ্ট্র এখনো আশা করে যে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো শিগগিরই একটি সমঝোতায় আসতে পারবে৷ তিনি বলেন, বিএনপি হরতাল ও অবরোধের মতো সহিংস কর্মসূচি স্থগিত করেছে৷ এখন সরকারের উচিত হবে বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দেয়া এবং নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিয়ে সংলাপের পরিবেশ তৈরি করা৷ তাঁর মতে, সহায়ক পরিবেশ হচ্ছে – বিরোধী দলের কার্যালয় খুলে দেয়া, তাদের নেতৃবৃন্দকে মুক্তি দেয়া এবং তাঁদেরকে অবাধে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেয়া৷ তবে বিএনপিকেও সরকারের দেয়া সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে৷
বৈঠকে অংশ নেয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হানা বলেন, যে কোনো মূল্যে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে৷ সংলাপ হচ্ছে সংকট সমাধানের একমাত্র পথ৷ এ সময় উপস্থিত ক্যানাডিয়ান হাইকমিশনার হিডার ক্রুডেন পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন৷ তিনি সাংবাদিকদের বলেন, হরতাল-অবরোধ স্থগিত করায় আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে৷ সহিংসতা বন্ধ করে সরকার এবং বিএনপি আলোচনায় বসতে পারে৷ তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ যদি চায়, তবে সব দলের অংশগ্রহণে আরেকটি নির্বাচন হতে পারে৷
পরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা চায় বিএনপি৷ আলোচনার জন্য সব সময় প্রস্তুত বিএনপি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা রাষ্ট্রদূতদের এখানে দাওয়াত দিয়েছি, এখানে সব বিষয়ে আলোচনাও হয়েছে৷ নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে৷ প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে নির্বাচনের বিষয়ে রাষ্ট্রদূত-কূটনীতিকদের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়া হয়৷ ৫ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের দিনসহ ওই সময়ে নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের ভোটার অনুপস্থিতি, ভোট জালিয়ারি, ব্যালেট পেপার ছিনতাইসহ বিভিন্ন ভিডিও তথ্যচিত্র কূটনীতিকদের সামনে উপস্থাপন করা হয়৷ বিএনপির পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের প্রতিবেদনটি সরবারহও করা হয়৷ বৈঠকে বিএনপির পক্ষে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারর্সনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহ উদ্দিন আহমদ, সাংবাদিক শফিক রেহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বোরহান উদ্দিন খান উপস্থিত ছিলেন৷
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে জার্মান, ব্রাজিল, সুইডেন, দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ড, ইটালি, ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কাসহ ২৪টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং ভারত ও পাকিস্তানসহ ১০টি দেশের দূতাবাসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন৷
এদিকে সোমবার দ্বিতীয়বারের মতো স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ ‘বন্ধ' হয়নি বরং তা আরো ‘বেগবান' হয়েছে৷ অবশ্য সংলাপের সাফল্যের ক্ষেত্রে ‘বাইরের শক্তি'-ও যে গুরুত্বপূর্ণ – প্রকাশ্যেই তা স্বীকার করেন সৈয়দ আশরাফ৷ তিনি বলেন, রাজনীতি নিয়ে আলাপ-আলোচনা সব সময় চলে, এখনো চলছে এবং ভবিষ্যতেও চলবে৷ আলোচনার দ্বার বন্ধ হলে সমস্যা হয়৷
তাই তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বিএনপি সংলাপে আসবে এবং এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা হওয়া সম্ভব৷ বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, নির্বাচন বর্জনের কালচার স্থায়ী হয়ে গেলে সব দল মিলে জীবনে আর নির্বাচন হবে না৷