সরকারি কর্মকর্তাদের শিক্ষা এবং লোভের শেষ নেই!
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’৷ প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্কুল শিক্ষার্থীদের রান্না করা সবজি খিচুড়ি বা ডিম খিচুড়ি সরবরাহের কাজে এক হাজার জন সরকারি কর্মকর্তাকে বিদেশে প্রশিক্ষণে পাঠাতে চায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর৷ প্রাইমারি স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামটির জন্য মোট বাজেট ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা৷ এর মধ্যে বিদেশ প্রশিক্ষণের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে৷
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং চলমান দারিদ্র্য পীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক রুহুল আমিনকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্কুলগুলোতে কীভাবে রান্না হয়, কীভাবে শিক্ষার্থীদের বিতরণ করা হয় তা জানতেই পাঁচ বছরে এক হাজার কর্মকর্তার বিদেশ প্রশিক্ষণ প্রস্তাব করা হয়েছে৷ পুষ্টিকর বিস্কুটের পাশাপাশি প্রস্তাবিত কর্মসূচির আওতায় দেশব্যাপী রান্না করা খাবার দেওয়া হবে স্কুলগুলোতে৷ এ জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণের দরকার রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঐ কর্মকর্তা৷ খবর অনুযায়ী, এর আগেও নাকি এই প্রকল্পের অধীনে ভারতে প্রশিক্ষণে গিয়েছেন কর্মকর্তারা৷
শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া ঠেকানো আর পুষ্টিকর খাবারের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশে স্কুল ফিডিং-এর প্রকল্পটি বেশ অভিনব৷ ২০১০ সাল থেকে এটি বাস্তবায়ন করে আসা হচ্ছে, যার সফলতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই৷ বরং দেশে-বিদেশে বিশেষজ্ঞ আর বিভিন্ন সংস্থাগুলো এটিকে অন্য দেশগুলোর জন্যেও উদাহরণ হিসেবে টেনে থাকে৷
স্কুল ফিডিং কর্মসূচি প্রকল্পের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি তাদের জরুরি কর্মসূচির আওতায় ২০০১ সালে যশোরে স্বল্প পরিসরে কার্যক্রমটি চালু করে৷ পরবর্তীতে জরিপে দেখা যায়, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন এলাকায় শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কম ছিল৷ নন ফিডিং উপজেলার তুলনায় বেশি ছিল ভর্তি, উপস্থিতি আর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর হারও৷
তার ভিত্তিতে, ২০১০ সালে সরকার দারিদ্র পীড়িত উপজেলাগুলোতে স্কুল ফিডিং প্রকল্পটি চালু করে৷ সব মিলিয়ে কমসে কম ১০ বছর ধরে সফলতার সঙ্গে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তো ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞে পরিণত হওয়ার কথা৷ তাদের বিদেশ যাওয়ার বদলে বরং অন্য দেশ থেকে তাদের কাছে কেউ শিখতে এলে তাতেও কারো অবাক হওয়ার কথা নয়৷ কিন্তু ঘটছে উল্টোটাই৷ ‘শেখার কোনো শেষ নেই’, এমন ব্রত নিয়েই যেন চলছেন আমাদের সরকারি কর্মকর্তারা৷
শুধু খিচুড়ি রান্না নয়, নানা কিছু শিখতেই তারা বিদেশ যেতে চান৷ গত এক বছরে এমন অনেক খবর বেরিয়েছে গণমাধ্যমে৷ এর মধ্যে গরুর কৃত্রিম প্রজনন দেখতে জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও কানাডায়, পুকুর খনন বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড বা নেদারল্যান্ডসে, বিশ্ববিদ্যালয়ের লিফট কিনতে শিক্ষকদের সুইজারল্যান্ড, স্পেনে যেতে চাওয়া কিংবা আলুর বীজ খুঁজতে ইউরোপ যাওয়ার পরিকল্পনার খবরও বেরিয়েছে৷ আবার একটি বিমান আনতে ৪৫ জনের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া, প্রতিযোগী রেখেই সরকারি কর্মকর্তাদের পুরস্কার আনতে একই দেশে গমণ এমন সব আজব ঘটনাও আছে৷
উন্নত বিশ্বে কী ঘটছে, কোন দেশ কোন নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কিভাবে সফলতা অর্জন করছে কিংবা আমাদের নেই এমন প্রযুক্তি সম্পর্কে হাতে কলমে জানতে প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রয়োজনীতাকে অস্বীকার করা যায় না৷ কিন্তু প্রয়োজন থাকুক বা না থাকুক সরকারি কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা অর্জনের নামে যেকোনো প্রকল্পেই বিদেশ সফরের জন্য কয়েক কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে৷ তার উপর দামি গাড়ি, অফিসের সাজ সরঞ্জামসহ নানা বিলাসী আয়োজনে চলে আসছে জনগণের করের অর্থ শ্রাদ্ধের আয়োজন৷ বিদেশ গমনের অভিজ্ঞতায় মানের দিক থেকে না হলেও প্রকল্প ব্যয়েতো উন্নত দেশকে হার মানাচ্ছি আমরা!