তবু পাকিস্তানকে ভারতের সন্দেহ
৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ভারতের কূটনৈতিক চাপে বা সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের তাপে পাকিস্তানের সামরিক ও অসামরিক প্রশাসন লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) এবং জামাত-উদ-দাওয়া (জেইউডি) জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রধান হাফিজ সাঈদ ও আরও চারজনকে নিবর্তনমূলক আটক আইনে গৃহবন্দি করে রাখেনি কিংবা তাঁদের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি৷ সব কিছুই করা হয়েছে আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের ধমকে৷ কার্যত পাকিস্তানের কাছের বন্ধু চীনসহ আন্তর্জাতিক চাপে৷ কাজেই ভারতের উল্লসিত হবার কারণ নেই৷ পাকিস্তানের সন্ত্রাস-বিরোধী পদক্ষেপের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও সংশয় রয়ে গেছে দিল্লির মনে৷ জইসে মহম্মদ জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রধান মাসুদ আজহারকে রেহাই দেওয়া হয়েছে কেন?
দ্বিতীয়ত, ২০০৮ সালে ২৬/১১-এর মুম্বাই সন্ত্রাসী হামলার পর এর মূল হোতা হাফিজের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবার জন্য ক্রমাগত বলে এসেছে ভারত এবং তথ্যপ্রমাণও তুলে দিয়েছে পাকিস্তানের হাতে, কিন্তু কাজ হয়নি৷ কিছুদিন আটক থাকার পর দিব্যি ছাড়া পেয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে৷ একবার নয়, একাধিকবার৷ আর ভারতের বিরুদ্ধে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলায় মদত দিয়ে গেছে৷ তা সে পাঠানকোট বিমান ঘাঁটি হোক বা জম্মু-কাশ্মীরের উরি সেক্টরে হোক৷ এবারেও তার ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হয় না৷ কাজেই এতে ভারতের উত্ফুল্ল হবার তেমন কারণ নেই৷ এ বিষয়ে পাকিস্তানের যদি সত্যিই আন্তরিক সদিচ্ছা থাকে, তাহলে পাকিস্তানের মাটি থেকে জঙ্গি ঘাঁটিগুলি উত্খাত করছে না কেন? ভারতের পররাষ্ট্র বিভাগের মুখপাত্র বিকাশ স্বরুপ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে দিল্লির নীতি ‘ওয়েট অ্যান্ড সি'৷ ঘটনার গতি প্রকৃতির দিকে লক্ষ্য রাখা৷''
প্রশ্ন যেটা উঠেছে তা হলো, হঠাৎ ইসলামাবাদের অবস্থান ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাবার কারণ কী ? কূটনৈতিক এবং পর্যবেক্ষক মহলের মতে, প্রথমত ট্রাম্পকে খুশি করা৷ সদর্থক বার্তা দিয়ে বলতে চায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তান ট্রাম্প সরকারকে সব রকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত৷
কারণ, এ মাসেই বসছে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে অর্থ জোগানের পথ বন্ধ করতে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স, সংক্ষেপে এফএটিএফ-এর পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বৈঠক৷ হাফিজের জঙ্গি গোষ্ঠী জামাত-উদ-দাওয়ার জন্য জেহাদি তহবিলে অর্থ সংগ্রহ শাখা ফালাহ-ই-ইনসানিয়াত ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে এশিয়া-প্যাসিফিক গ্রুপে যে রিপোর্ট পেশ করা হয়, তাতে আরও বেশি নার্ভাস পাকিস্তান৷
রিপোর্টে পাকিস্তানকে জঙ্গি কার্যকলাপের জন্য বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ বলা হয়৷ আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে পাকিস্তানকে সাবধান করা হয়, এর বিহিত করতে সন্ত্রাসী কাণ্ডকারখানা চালাতে অর্থ জোগানদার সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে পাকিস্তান অবিলম্বে যদি উপযুক্ত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে যে সাতটি মুসলিম মৌলবাদী দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ভিসা নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন ট্রাম্প, তার সঙ্গে যুক্ত হবে পাকিস্তানের নামও৷ কালো তালিকার অন্তর্ভুক্ত হবে পাকিস্তান৷ এতে দারুণভাবে মার খাবে পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি৷ তার উপর ট্রাম্পের নতুন অভিবাসন নীতি বোঝার ওপর শাকের আঁটি৷ ট্রাম্প প্রশাসন থেকে এমন অভিযোগ উঠেছে, পাকিস্তানের মদত না পেলে ওসামা বিন লাদেনের মতো একজন সন্ত্রাসবাদী কিভাবে ছয় বছর পাকিস্তানে সপরিবারে এবং বহাল তবিয়তে লুকিয়ে থাকতে পারে?
অন্যদিকে ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের দুজন অ্যাথলিটকে অ্যামেরিকার স্নো-শ্যু প্রতিযোগিতায় যোগ দেবার জন্য আমেরিকায় যাবার ভিসা মঞ্জুর করেনি নতুনদিল্লির মার্কিন দূতাবাস৷ যদিও আমন্ত্রণপত্র এবং অন্যান্য বৈধ কাগজপত্র ছিল তাঁদের কাছে৷ তারপরও ভিসা মঞ্জুর না করার কারণ জানতে চাওয়া হলে মার্কিন ভিসা অফিস থেকে বলা হয়, এদের দুজনের ক্ষেত্রে নতুন ভিসানীতি প্রযোজ্য বিশেষ কারণে৷ তবে সব ভারতীয়ের ক্ষেত্রে তা নয়৷ আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা জারির ভয়ে পাকিস্তান ক্রমশই নতজানু হচ্ছে এই অভিযোগে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা শরিফ সরকারের তীব্র নিন্দা করেছে৷ সাঈদের সমর্থকদের অভিযোগ, ভারতে মোদীর দক্ষিণপন্থী বিজেপি সরকারকে হাতে রাখতে ইসলামাবাদের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে ট্রাম্প৷