সাগর-রুনি হত্যার পাঁচ বছর
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি৷ হত্যাকাণ্ডের সময় বাসায় ছিল তাদের একমাত্র শিশু সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘ৷ ঘটনার পরপরই তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেন৷ কিন্তু ৪৮ ঘণ্টাতো দূরের কথা পাঁচ বছরেও এই হত্যাকাণ্ডের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নাই৷ কাউকে চিহ্নিত বা গ্রেপ্তারও করতে পারেনি পুলিশ৷ ঘটনার পর সন্দেহভাজন হিসেবে বাসার দারোয়ানসহ কয়েকজনকে তখন আটক করা হয়েছিল৷ সেই পর্যন্তই শেষ৷ আর মামলাটি আদালতের নির্দেশে এখন র্যাব তদন্ত করছে৷
গত ৮ ফেব্রয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে এই মামলার তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা ছিল র্যাব-এর৷ কিন্তু তারা প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হয়েছে৷ তাই আগামী ২১ মার্চ আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালতে তলব এবং তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে৷ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে র্যাব এপর্যন্ত ৪৬ বার সময় নিল৷
বাংলাদেশ ফেডালের সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব মো. ওমর ফারুক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা হতাশ হলেও আশা ছাড়িনি এখনো৷ এমনও দেখা যায় কোনো কোনো মামলায় ৪০ বছর পরও অপরাধী চিহ্নিত হয়৷ সেই হিসেবে আমরা আন্দোলন করে যাব৷ কেউ যদি মনে করে থাকে কয়েক বছর পর আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যাবে, তা কিন্তু নয়৷''
তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ বছর পার হয়ে গেছে৷ তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই৷ তদন্তকারীরা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন৷ ২১ মার্চ আদালত প্রতিবেদন দেয়া সময় বেধে দিয়েছেন৷ দেখি তারা প্রতিবেদন দেন কিনা৷ আমরা আন্দোলনে আছি, আন্দোলনেই থাকবো৷ সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলনেই থাকবো৷''
এদিকে বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ‘‘এই মামলার তদন্তের সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে আমার কিছু জানা নাই'' বললেও শনিবার তিনি তাঁর অবস্থান থেকে সরে এসেছেন৷ শনিবার তিনি নড়াইলে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ডের তদন্ত রিপোর্ট খুব শিগগিরই আলোর মুখ দেখবে৷ এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত প্রকৃত খুনীদের খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ আশা করি, খুব দ্রুতই তাদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হব৷''
এর প্রেক্ষিতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন বাদশা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একদিন আগের কথায় আমরা হতাশ হলেও শনিবারের কথায় আমরা আবার আশার আলো দেখছি৷ তিনি প্রকৃত খুনীদের বের করার জোর চেষ্টার কথা বলেছেন৷ আমরাদেরও একটিই দাবি, সাগর-রুনির হত্যাকারীদের আটক এবং আইনের আওতায় আনা৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমরা দিনের হিসাব করিনা৷ আমরা আমাদের সহকর্মী হত্যার বিচার চাই৷ যতদিন বিচার না হবে ততদিন আমরা বিচার চাইব৷ আন্দোলনে থাকবো৷ ২১ মার্চ আদালত সাগর-রুনি হত্যা নিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছে৷ আমারা ওই দিনই প্রতিবেদন দেখতে চাই৷ নতুন করে যেন সময় ক্ষেপন করা না হয়৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘২২ মার্চ সাংবাদিক ইউনিয়সের সব অংশ, প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি যৌথ সভা ডেকেছে৷ যদি ২১ মার্চ তদন্তকারীরা কোনো অগ্রগতি প্রতিবেদন না দেয় তাহলে ২২ মার্চ সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি দেবে৷'' এদিকে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের এএসপি মহিউদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা ২১ মার্চ তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দেয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি৷ আদালতের আদেশ পাওয়ার পর সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছি৷ আশা করি এবার প্রতিবেদন দিতে পারব৷''