সিরিয়া কি ইরাকের পথে এগোচ্ছে
২৬ আগস্ট ২০১৩গত সপ্তাহে রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠে রাসায়নিক গ্যাস হামলায় সিরিয়ায় কয়েকশ মানুষ নিহত হওয়ার পর, রোববার সে স্থানটি পরিদর্শনের অনুমতি মেলে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের৷ আজই কোনো এক সময় তাঁরা এই কাজ শুরু করবেন৷
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সহযোগী দেশগুলো বলছে, গত পাঁচ দিনে সরকারবাহিনীর অবিরাম গোলা বর্ষণে গ্যাস হামলার সব তথ্য-প্রমাণ নষ্ট হয়েছে৷ তাই বিশেষজ্ঞ দলটি সেখানে গিয়ে খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না বলে ধারণা তাদের৷ গত ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক এই গ্যাস হামলায় সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়৷ তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় তারা৷
রোববার হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়াগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন৷
বান কি-মুন বললেন, সময় নেই
এদিকে, সোমবার সৌলে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন বলেছেন, অভিযোগ প্রমাণ করার জন্য কেবল সময়েরই অপচয় হবে এবং নষ্ট করার মতো সময় নেই৷ তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷
হামলার অভিযোগ অস্বীকার
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বলছেন, রাসায়নিক গ্যাস হামলার ঘটনা পুরোটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত৷ তার সেনারা এ ধরনের হামলা চালায়নি বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি৷
সোমবার প্রকাশিত রাশিয়ার একটি পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে আসাদ জানান, ঐ স্থানটিতে বিদ্রোহীদের কোনো ঘাঁটি না থাকায় সেখানে সেনাবাহিনীর গ্যাস হামলা চালানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই৷ কেননা সিরীয় সেনাবাহিনীর ঘাঁটি রয়েছে সেখানে৷ তাঁর অভিযোগ, সিরিয়া ইস্যুতে ব্যর্থ হয়েই এই পরিকল্পনা এটেছে যুক্তরাষ্ট্র৷
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে রাশিয়ার সাথে যত চুক্তি হয়েছে, তার সবগুলোই পূরণ করা হবে বলে জানান আসাদ৷ অন্যদিকে, সিরিয়ার তথ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কোনো সামরিক অভিযান চালালে তা আগুনের মধ্যে ঘি ঢালার সামিল হবে এবং তাতে মধ্যপ্রাচ্য পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাবে৷
সিরিয়া এবং তার দোসর
আসাদ সরকারের ঘনিষ্ট সহযোগী দেশ ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে বলেছে, তারা যাতে সিরিয়ার সীমা লঙ্ঘন না করে৷ ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের সরকারের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে, এই অজুহাতে সেখানে আগ্রাসন চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ আর এখন সিরিয়াতেও সেই একই ধরনের অপেচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
সোমবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে রোববার টেলিফোনে জানিয়েছেন যে, সিরিয়ায় সামরিক অভিযান চালালে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে৷
লাভরভ বলেছেন, অতীতে যে ভুল যুক্তরাষ্ট্র করেছে, তার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় এবং এমন কোনো পদক্ষেপ না নেয়, যাতে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হয়৷
জার্মানি এবং ব্রিটেন
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের অফিস জানিয়েছে, রোববার ক্যামেরন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া নিয়ে এ সময় দুই নেতার মধ্যে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছে ক্যামেরনের অফিস৷
তাঁরা দু'জনেই এ ব্যাপারে একমত যে, পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ এবং এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত কোনো সিদ্ধান্তে আসা উচিত৷
ফ্রান্স ও তুরস্ক
সোমবার ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সিরিয়ায় সেনা অভিযানের ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি৷ তবে সব সম্ভাবনাই হাতে রয়েছে এবং আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে৷
এদিকে, তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সিরিয়ায় বিরুদ্ধে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সব সিদ্ধান্তদের প্রতি তাদের সমর্থন আছে৷ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন না হলেও অন্যান্য বিকল্প যে কোনো সিদ্ধান্তেই তারা সমর্থন দেবে৷
এমনকি সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে যদি একটি জোট গঠন করা হয়, সেই জোটে তুরস্ক থাকতে আগ্রহী৷
গত বুধবার রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠে রাসায়নিক গ্যাস হামলা চালানো হয়৷ সিরীয় বিদ্রোহীদের মতে, এ হামলায় শিশুসহ অন্তত ১৩শ মানুষ নিহত হয়েছে৷ অন্যদিকে, চিকিৎসকরা বলছেন, হামলায় ৩৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে৷
এপিবি/ডিজি (এপি/এএফপি/রয়টার্স)