1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিলেটে বন্যায় কৃষিজমি পানির নীচে, খাদ্য সংকটের আশঙ্কা

২১ মে ২০২২

সিলেটে হঠাৎ বন্যায় বোরো ধান, আউশের বীজতলার পাশাপাশি গ্রীষ্মকালীন সবজির ক্ষেতও পানিতে ডুবে গেছে৷ পানির নীচে বিস্তীর্ণ বাদাম ক্ষেত৷ বাড়ি ঘরে ঢুকে পড়েছে পানি৷

https://p.dw.com/p/4Bg5K
Bangladesch | Überschwemmung in Sylhet
ছবি: Mohammad Rafayat Haque Khan

জেলার কৃষি বিভাগ বলছে, বোরো ধান কাটতে না পারলে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে৷ সেখানকার অন্তত দেড় হাজার হেক্টর জমির ধান কাটতে পারেননি কৃষকরা৷

কিন্তু হঠাৎ করেই সিলেটে কেন এই বন্যা? আগে থেকে কি প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ ছিল?

কালবৈশাখী আর উজানের পানিতে বন্যা!

জল গবেষণা ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে এই এলাকায় কালবৈশাখীর কারণে বন্যার আশঙ্কা থাকে৷ এটা যে প্রতি বছর হবে, তা নয়৷ কয়েক বছর পরপর এটা হয়ে থাকে৷ এর সঙ্গে আসাম-মেঘালয়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ শত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে৷ ফলে উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে সিলেটে বন্যা দেখা দিয়েছে৷ সাম্প্রতিক সময় হয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই৷ মৌসুমী বায়ুর কারণে কয়েকদিনের মধ্যে চট্টগ্রামেও আগাম বন্যা হতে পারে৷ এটাও চার বছর পর পর হয়ে থাকে৷ আগে থেকে হয়ত কিছুটা প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারত৷’’

‘কালবৈশাখীর কারণে বন্যার আশঙ্কা থাকে’

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সিলেট অঞ্চলে চারটি নদীর পানি সাতটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ সুরমা-কুশিয়ারা ছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে এবং কিছু স্থানে সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে৷ তবে আগামী দুই দিনের মধ্যে সিলেট জেলার কিছু স্থানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে৷ আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয়, হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা প্রদেশের কিছু স্থানে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে৷’’

আশার কথা হলো, সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে৷ যদিও সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনায় পরিস্থিতির অবনতির দিকে৷

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষিজমি ও মাছের খামার

সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বন্যায় তলিয়ে যাওয়া ফসলের মধ্যে এক হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের বীজতলা, এক হাজার ৭০৬ হেক্টর জমির বোরো ধান এবং এক হাজার ৪০০ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন সবজি রয়েছে৷ বন্যার আগে কৃষকরা আউশের বীজতলা ভালোভাবে প্রস্তুত করেছিলেন৷ কেউ কেউ বীজ লাগানো শুরু করেছিলেন৷ বোরো ধানের বেশির ভাগ কাঁচা ছিল৷ সেগুলো বন্যার পানিতে ডুবে গেছে৷ তাছাড়া এবার আউশের মৌসুম বেশ ভালোভাবে শুরু হয়েছিল৷ কৃষকদের অনেকে বীজতলা তৈরির কাজ শেষ করেছিলেন৷ অনেকে চারা রোপনও শুরু করেছিলেন৷ কিন্তু বন্যায় সব ডুবে গেছে৷ পানির নিচ থেকেও অনেক কৃষক ধান কেটে আনছেন৷ কিন্তু বীজতলার যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা পুষিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে যেতে পারে৷ আবার পানির নীচে যে সবজি আছে সেটা কয়েকদিন গেলে পঁচে যেতে পারে৷ ফলে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে৷’’

প্রবল বৃষ্টির কথা আগে জানাবে রাডার

এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘‘দুই-একদিনের মধ্যে পুরো হিসাবটা পাওয়া যাবে৷ তবে এখন পর্যন্ত আমরা যে হিসাব করেছি তাতে আট থেকে ১০ কোটি টাকার ধান এখন পানির নীচে৷ বীজতলার ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা কঠিন৷ আর বাদাম ও সবজি মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ১০-১২ কোটি টাকার বেশি হবে বলেই আমরা ধারণা করছি৷’’

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত ৩০টি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ ঝুঁকির মুখে আছে অন্য বাঁধগুলোও৷ বিশেষ করে জকিগঞ্জ উপজেলার বাঁধগুলো ২৫ থেকে ৩০ বছরের পুরনো৷ দীর্ঘসময় ধরে সংস্কার না হওয়ায় এগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে৷

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ বলেন, এখন পর্যন্ত সিলেট জেলার ৩০টি স্থানে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ তবে মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই৷ বাঁধ ভাঙার কারণে জকিগঞ্জ পুরোটাই প্লাবিত হয়েছে৷ এ কারণে অন্য উপজেলা আক্রান্ত হবে না৷

সিলেটের মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১১টি উপজেলার আট হাজার ৩২২টি পুকুর, দীঘি ও খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ ভেসে গেছে এক হাজার ৩৩৭ মেট্টিক টন মাছ৷ ক্ষতিগ্রস্ত এসব জলাশয়ের আয়তন ৮৫৪ হেক্টরের বেশি৷ টাকার হিসাবে ছয় কোটি ৭৪ লাখ৷ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাত হাজার ২৫১ জন মৎস্য চাষি ও খামার মালিক৷

‘সিলেট অঞ্চলে চারটি নদীর পানি সাতটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে’

হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়হীণ

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, বন্যায় সিলেটের ১৩ উপজেলাই কমবেশি আক্রান্ত হয়েছে৷ এর মধ্যে ১০ উপজেলার অন্তত ৮৬টি ইউনিয়ন বন্যায় সম্পূর্ণ ও আংশিক প্লাবিত হয়েছে৷

এতে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন জেলার কয়েক লাখ মানুষ৷

জেলায় ৯৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সাত হাজার ৩৪৯ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন৷

জানা গেছে, এসকল মানুষের সহযোগিতায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ২৩৪ মেট্রিক টন চাল, ১৩ লাখ টাকা এবং তিন হাজার ৯৯ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে৷

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য