‘স্টুডেন্টস কেবিনেটের কারণে অন্যের মতকে গুরুত্ব দিতে শিখছি'
১৬ এপ্রিল ২০১৯স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচনের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ করিমউদ্দীন পাবলিক পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ও কেবিনেটের প্রধান সামিউল আলীম সজীব৷
ডয়চে ভেলে: স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচন যেটা হচ্ছে, এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী?
সামিউল আলীম সজীব: এই নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দায়িত্ববোধ, নেতৃত্বদানের ক্ষমতা ইত্যাদি শেখানো হয়৷
তুমি তো প্রধানমন্ত্রী, তোমাদের কাজ আসলে কী?
আমাদের কাজ আসলে ৮টি বিভাগে ভাগ করে দেওয়া আছে৷ এর মধ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ, ক্রীড়া, স্বাস্থ্য, আইসিটি আছে৷ এগুলো যাদের ভাগ করে দেওয়া আছে তারা সেগুলো নিয়ে কাজ করছে৷ যে আইসিটির দায়িত্ব আছে, তার লক্ষ্যটা হলো আমাদের স্কুলের স্টুডেন্টরা যেন আইসিটিতে ভালো হয়৷ আমাদের স্কুলে যে ল্যাব আছে সেটা যেন আমরা ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারি৷ এখানে সবাই পরমতসহিষ্ণু হয়ে কাজ করার জন্য যোগ্যতা অর্জন করে৷
তোমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া কেমন? আর তোমাদের কি ভোটে দাঁড়াতে হয়?
আমি দুঃখিত যে, এবার আমরা নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারিনি৷ ওই সময় আমাদের স্কুলে এসএসসি পরীক্ষা হয়৷ ফলে তখন আমরা নির্বাচনটা করতে পারিনি৷ পরে যখন স্কুলে ক্লাস শুরু হয়, তখন আমরা প্রত্যেক ক্লাস থেকে ভোটগ্রহণ করি৷ অর্থাৎ যেভাবে ভোটগ্রহণ করার কথা, সেভাবে করতে পারিনি৷ কিন্তু আমরা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করেছি৷ আমাদের প্রথম সভায় আমাকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হয়৷ ওইদিনই মন্ত্রিসভার সবাইকে তাদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে৷
ভবিষ্যতে তোমরা কী রাজনীতিতে আসবে?
যেহেতু এখান থেকে নেতৃত্বদানের ক্ষমতা অর্জন করা যায়, তাই ভবিষ্যতে আমরা রাজনীতিতে আসতেও পারি৷ তখন আমরা হয়ত নেতৃত্বদানের ক্ষমতাটা প্রয়োগ করতে পারব৷
কীভাবে রাজনৈতিক চর্চা হয় তোমাদের মন্ত্রিসভায়?
আমরা যেহেতু স্টুডেন্ট তাই আমাদের এখানে তো রাজনীতি নিয়ে চর্চা হয় না৷ শুধু নেতৃত্বদানের ক্ষমতাটা কীভাবে উন্নত করা যায় সেটা আমরা শিখছি৷
জেতার পর নৈতিকতার বিষয়কে কতুটুক প্রাধান্য দেওয়া হয়?
অবশ্যই নৈতিকতার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ কারণ একজন শিক্ষার্থীর কাছে নৈতিকতাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷ নৈতিকতা বলতে আমরা যেটা বুঝি, সত্য কথা বলা, অন্যকে সাহায্য করা ইত্যাদি, সেগুলো আমরা করি৷ পাশাপাশি পরমতসহিষ্ণুতা, বা অন্যের মতকে প্রাধান্য দেওয়া, সেই কাজও আমরা করি৷ নির্বাচনে জয়ী হলেও আমরা আমাদের মত অন্যের উপর চাপিয়ে দেই না৷ অন্যের মতকে গ্রহণ করে সবার মতামত নিয়ে একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব৷ এখান থেকে আমাদের অন্যের মতকে প্রাধান্য দেওয়ার ক্ষমতাটাও বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ এভাবেই আমরা নৈতিকতার চর্চা করছি৷
তোমার সঙ্গে কি কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল?
হ্যাঁ ছিল৷
যে তোমার সঙ্গে ভোটে হেরে গেছে, তার মতকে তুমি কীভাবে মূল্যায়ন করছ?
ভোটে যখন আমি জিতেছি, আর সে হেরে গেছে, তখন হয়ত সে একটু মন খারাপ করেছে৷ কিন্তু সে আমার বন্ধু৷ তার মতকেও আমি অনেক গুরুত্ব দেই৷ আমরা সবার কথা শুনছি, সবার মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছি৷ সেও আমাদের সঙ্গে আছে৷ আমাদের সহযোগিতা করছে৷ আমরা কাউকেই ছোট করে দেখছি না৷ সবাইকে গুরুত্ব দিচ্ছি৷ এই ফিলিংসটা আমাদের মধ্যে আছে৷
নেতৃত্বের সার্বিক গুনগুলো সৃষ্টিতে তোমাদের কোনো পদক্ষেপ আছে?
আমাদের কেবিনেটে তো সভা হয়৷ সেখানে আমরা সব বিষয় নিয়েই আলোচনা করি৷ কীভাবে আমাদের দায়িত্ব আরো ভালোভাবে পালন করতে পারি তা নিয়েও আলোচনা হয়৷ নিজেদের সীমাবদ্ধতা নিয়েও আলোচনা হয়, ইমপ্রুভমেন্ট নিয়েও আলোচনা হয়৷ আমাদের প্রথম সভা হয়েছে৷ সেখানে এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ ভবিষ্যতেও আলোচনা হবে৷
তুমি কবে নির্বাচিত হয়েছ?
একটু আগেই বলছিলাম, এবার আমাদের নির্বাচনটা দেরিতে হয়েছে এসএসসি পরীক্ষার কারণে৷ কয়েকদিন আগেই নির্বাচনটা হয়েছে, এরপর আমরা প্রথম সভা করেছি৷
শিক্ষকরা তোমাদের কীভাবে সাহায্য করে?
শিক্ষকরা আমাদের সহযোগিতা করছে৷ তারা আমাদের কাজগুলো বুঝিয়ে দিচ্ছেন৷ প্রথমে তো আমরা বুঝিনাই যে, কোন ক্ষেত্রে কীভাবে কাজ করব৷ প্রধান শিক্ষক আমাদের সঙ্গে ছিলেন, তিনিই আমাদের সব বুঝিয়ে দিচ্ছেন৷ তিনি সবার কাজ বণ্টন করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন৷
তোমরা যারা দায়িত্ব পালন করছ, তারা কি কোনো বিশেষ সুযোগ সুবিধা পাও?
হয়ত বিশেষ সুযোগ সুবিধার বিধি আছে, থাকতে পারে৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি৷ ভবিষ্যতে পেতে পারি৷ বিষয়টি এখনও আমরা পরিষ্কার না৷
শিক্ষকরা কি তোমাদের সুযোগ সুবিধার কথা বলেছে?
এখনও শুনিনি বা শিক্ষকরাও আমাদের কিছু বলেননি৷
তোমাদের কাজে জবাবদিহিতা কেমন?
আমাদের তো সভা হয়, সেখানে প্রত্যেক প্রতিনিধি তাদের কাজের ফলাফল প্রকাশ করে৷ কে, কতটুকু করতে পেরেছে, কতটুকু পারেনি, সেটা বলে৷ শিক্ষকরা তখন আমাদের ঘাটতিগুলো দেখিয়ে দেন৷ কোনো কিছু না বুঝলে শিক্ষকরা বুঝিয়ে দেন৷ এভাবেই আমরা কাজ করে থাকি৷
মন্ত্রিসভা পরিচালনার ক্ষেত্রে কি এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সংকটে পড়তে হয়েছে?
যেহেতু আমরা অল্পদিন হলো দায়িত্ব নিয়েছি, তাই এখনও কোনো সমস্যা হয়নি৷ যদি সমস্যা হয় তখন তো শিক্ষকরা আমাদের সঙ্গেই আছেন৷ তখন তারাই হয়ত কোনো উপায় বলে দিবেন৷
বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পড়াশোনা কি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে?
পড়াশোনায় বাধা আমরা উপলব্ধি করছি না, আর হয়ত করবও না৷ এমনিতেই আমাদের দায়িত্বের মধ্যে এগুলো পড়ে৷ স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচনটা আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে যে তুমি তোমার দায়িত্বটা ভালোভাবে পালন কর৷ এমনিতেই স্টুডেন্টদের এই দায়িত্বগুলো পালন করা উচিত৷
তোমাদের পরিবার এই বাড়তি দায়িত্বকে কীভাবে দেখছে?
আমি যখন নির্বাচনে দাঁড়াব, তখন আমার পরিবার আমাকে বলেছে, হ্যাঁ, তুমি এই পদে দাঁড়াতে পার৷ স্কুলে নেতৃত্ব দিলে নেতৃত্বদানের ক্ষমতা তোমার এখনই তৈরি হবে৷ পরবর্তীতে তোমার অনেক ভালো হবে৷ আমার পরিবার অনেক সাপোর্ট করেছে৷ তাছাড়া স্কুলে আমরা একটা প্রোগ্রাম করেছিলাম, বিষয়টা ছিল- ‘আমিই আমার নেতা'৷ সেখানে আমরা শিখেছি, নিজের কাজ কীভাবে নিজে করতে হয়, কীভাবে অন্যকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হয় বা অন্যকে কীভাবে সহযোগিতা করতে হয়, সেটাও আমরা শিখেছি৷ ফলে এখানে আমরা সেই শিক্ষা প্রয়োগ করতে পারব৷
সাধারণ শিক্ষার্থীরা তোমাদের এই নেতৃত্বকে কীভাবে দেখছে?
তারা তো আমাদের নেতৃত্বকে গ্রহণ করেছে৷ কারণ তাদের মতের উপর ভিত্তি করেই তো আমরা নির্বাচিত হয়েছি৷ তারা অসন্তুষ্ট নয়, তারাও সন্তুষ্ট৷ তারা আমাদের সাপোর্ট দিচ্ছে৷ আমরাও কাজগুলো ভালোভাবে করার চেষ্টা করছি৷ তাদের সাপোর্ট ছাড়া শুধু নেতাদের দিয়ে কাজগুলো করা সম্ভব না৷
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্কুলের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তুমি কী বলবে?
আমরা তো আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীকে দেখি৷ তিনি তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের কীভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন৷ আমাদের নাগরিকদের কীভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, সেটা তিনি ভাবেন৷ আমি প্রধানমন্ত্রী ঠিক, আমার স্কুলের শিক্ষার্থীদের কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব, কীভাবে তাদের পাশে থাকতে পারি সেগুলো চিন্তা করছি৷ তারাও আমাদের পাশে থাকবে, সেটা আমি প্রত্যাশা করি৷