‘কৃত্রিম রক্ত’ বাঁচাবে জীবন
১৪ জুন ২০১৪যুক্তরাজ্যের প্রায় চার শতাংশ মানুষের কাছ থেকে প্রতি বছর রক্ত সংগ্রহ করে স্কটিশ ন্যাশনাল ব্লাড ট্রান্সফিউশন সার্ভিস৷ নতুন নতুন দাতা খোঁজার তাগিদ থেকে এ প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা সব সময়ই চেষ্টা করেন, যাতে প্রথমবার রক্ত দিতে আসা দাতাদের কোনো বিরূপ অভিজ্ঞতা না হয়৷ পাশাপাশি কৃত্রিম রক্ত তৈরির উপায় বের করতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রান্সফিউশন সার্ভিসের বিজ্ঞানীরার৷
এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (মেডিকেল) মার্ক টার্নার বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক স্টেম সেল থেকে রক্ত উৎপাদন করা সম্ভব – তত্ত্বীয়ভাবে তা আগেই জানা ছিল৷ কিন্তু এসব কোষের সংখ্যা বৃদ্ধির সীমাবদ্ধতার কারণে এ পদ্ধতিতে বড় পরিসরে রক্ত তৈরি করা সম্ভব হয় না৷
‘‘এখন বিজ্ঞানীরা যেটা করতে পারেন, তা হলো ভ্রুণ বা পূর্ণবয়স্ক কলাতন্ত্র থেকে ‘প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেল' সংগ্রহ করা, যা থেকে অনেক বেশি পরিমাণে স্টেম সেল সংগ্রহ করা যায়৷ এই গবেষণায় সফল হতে আমাদের আরো বহু পথ যেতে হবে৷''
যুক্তরাজ্যের গবেষকরা আপাতত পরীক্ষাগারে লোহিত রক্তকনিকা তৈরির চেষ্টা করছেন, যা হবে পরিমাণে বেশি এবং মানব দেহে প্রবেশ করালে কোনো ঝুঁকি তৈরি হবে না৷
টার্নার বলেন, এ পদ্ধতি খুবই জটিল৷ এ সব কোষের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য পাঁচ থেকে ছয়বার কালচার করতে হয়৷ আর লোহিত কনিকা তৈরি হতে সময় লাগে প্রায় এক মাস৷
‘‘আমাদের এখন এই কৌশলকে পরীক্ষাগার থেকে পুরোপুরি একটি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পরিণত করতে হবে৷ এ কাজে মান নিয়ন্ত্রণ এবং খরচ কম রেখে অন্যান্য শর্ত পূরণ করা বেশ কঠিন৷ ১০ লাখ রক্ত কনিকা তৈরি করতে যদি ১০ লাখ পাউন্ড প্রয়োজন হয়, তাহলে সেই রক্ত কারো কাজে আসবে না৷''
উন্নত দেশগুলোর হাসপাতাল ও ব্লাড ব্যাংকে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় রক্তের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও গরিব দেশগুলোর পরিস্থিতি ভিন্ন৷ বিশ্বে প্রতিদিন যে পরিমাণ রক্ত সংগ্রহ করা হয় তার অর্ধেক গ্রহণ করে বিশ্বের ১৫ শতাংশ মানুষ, যাঁরা আবার বিভিন্ন উন্নত দেশের বাসিন্দা৷
টার্নার বলেন, ‘‘প্রতি বছর বিশ্বে দেড় লাখ নারী সন্তান জন্ম দেয়ার পর রক্তক্ষরণে মারা যান৷ রক্তের সরবরাহ বাড়ানো গেলে এই মায়েদের অনেককেই বাঁচানো সম্ভব হবে৷''
কথার খাতিরে গবেষণাগারে তৈরি রক্তকে ‘কৃত্রিম' বলা হলেও আসলে তা মোটেও কৃত্রিম নয়, কেননা মানুষের কোষ থেকেই এ রক্ত তৈরি হচ্ছে৷ আর গবেষণার কাজে ভ্রুণের ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ত্বকের কোষ থেকে যে প্রক্রিয়ায় রক্ত তৈরির কথা গবেষকরা ভাবছেন, তা নিয়েও কোনো আপত্তি এ পর্যন্ত ওঠেনি৷