স্পেনের সংকট
১১ জুলাই ২০১২ইউরো এলাকার অর্থমন্ত্রীরা মঙ্গলবার ব্রাসেলসে প্রায় সারা রাত ধরে আলোচনা করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ প্রথমত স্পেনের রুগ্ন ব্যাংকগুলির সহায়তার খুঁটিনাটি দিকগুলি স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ চলতি মাসের শেষেই এই লক্ষ্যে প্রায় ৩,০০০ কোটি ইউরো সংগ্রহ করার কাজ শেষ হবে৷ আগামী ২০শে জুলাই অর্থমন্ত্রীরা আবার ব্রাসেলসে মিলিত হয়ে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করবেন৷ তার আগে তাঁরা নিজেদের দেশের সরকার ও সংসদের ছাড়পত্র সংগ্রহ করবেন৷
তবে এর বদলে স্পেনের রুগ্ন ব্যাংকগুলিকে কিছু কড়া শর্ত মেনে চলতে হবে৷ তাছাড়া স্পেনের আর্থিক ক্ষেত্রের উপর নজরদারি আরও বাড়াতে হবে৷ শুধু ব্যাংকিং ক্ষেত্র নয়, বর্তমান সংকটের প্রেক্ষিতে স্পেনকে বাজেট ঘাটতি কমানোর জন্য আরও এক বছর সময় দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে৷ অর্থাৎ ঘাটতির মাত্রা ৩ শতাংশে কমিয়ে আনতে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময় পেয়ে স্পেন ঘর সামলানোর কিছুটা সুযোগ পাবে৷ গ্রিসও বাড়তি সময় চেয়েছে৷ আপাতত সেই অনুরোধ খতিয়ে দেখা হয়েছে৷
এমন স্পষ্ট বার্তার ফলে বেশ কয়েক সপ্তাহ পর পুঁজিবাজার অনেকটা স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছেছে৷ বিশেষ করে বন্ড বাজারে স্পেন ও ইটালির অবস্থানের অনেক উন্নতি হয়েছে৷ তার উপর ইউরোপীয় অর্থমন্ত্রীরা বেশ কিছু কাঠামোগত সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ যেমন ‘ইউরোগ্রুপ' গোষ্ঠীর প্রধান থেকে যাচ্ছেন লুক্সেমবুর্গ'এর প্রধানমন্ত্রী ও বিচক্ষণ নেতা হিসেবে পরিচিত জঁ ক্লোদ ইয়ুঙ্কার, যদিও তিনি এই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন৷
তিনি বলেন, ‘‘আমাকে আবার ইউরোগ্রুপ'এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে৷ চুক্তি অনুযায়ী আমার কার্যকালের মেয়াদ আড়াই বছর৷ তবে আমি এই মেয়াদ পূর্ণ করতে চাই না৷ মেয়াদ শেষ হওয়ার অনেক আগে, সম্ভবত চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে আমি পদত্যাগ করবো এবং আমার সতীর্থদের জানিয়ে দেবো৷''
ইয়ুঙ্কার'কে ছাড়া ইউরোগ্রুপ'এর অস্তিত্ব অনেকে কল্পনাই করতে পারে না৷ জার্মান অর্থমন্ত্রী ভল্ফগাং শয়েবলে'কে তাঁর জায়গায় ভাবা হচ্ছিল বটে, কিন্তু ফ্রান্সের সরকারের আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত শয়েবলে'কে পিছিয়ে আসতে হয়৷
ইউরোপীয় স্থায়ী জরুরি তহবিল – ইএসএম পরিচালনার দায়িত্ব পাচ্ছেন জার্মানির ক্লাউস রেগলিং৷ ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান মারিও দ্রাগি বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাঠামোর মধ্যে ব্যাংকিং ইউনিয়ন সম্পর্কে তিনি বেশ আশাবাদী৷ তবে রাতারাতি নয়, ধাপে ধাপে এই পথে এগোতে হবে৷ দ্রাগির মতে, সবার আগে ব্যাংকিং ব্যবস্থার এক তত্ত্বাবধায়ক কাঠামো প্রয়োজন৷
তবে একটি ঘটনার কারণে এই সব সাফল্যের উপর কিছুটা কালো ছায়া পড়ছে৷ ইউরোপীয় স্থায়ী তহবিল ইএসএম ও বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ফিসক্যাল প্যাক্ট – এই দুই গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো কার্যকর করার ক্ষেত্রে জার্মানির ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷ কিন্তু দু'টি বিষয় নিয়েই জার্মানির সাংবিধানিক আদালতে অভিযোগ জানানো হয়েছে৷ শোনা যাচ্ছে, চলতি মাসের শেষে রায় দেবে আদালত৷ অর্থাৎ ততদিন পর্যন্ত দুটি প্রক্রিয়াই থমকে গেল৷ জার্মান অর্থমন্ত্রী ভল্ফগাং শয়েবলে আদালতের কাছে বিষয়টির দ্রুত নিষ্পত্তির আবেদন জানিয়েছেন৷ অভিযোগকারীদের বক্তব্য, এমন কাঠামো দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে৷ বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে ভবিষ্যতের সরকারগুলির কাজকর্মে গণ্ডি টানা হবে৷
এসবি / ডিজি (এএফপি, রয়টার্স)