1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বামী সারাক্ষণ ঘরে, তাই নির্যাতনের অভিযোগ কম!

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৩ এপ্রিল ২০২০

করোনা মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্বজুড়ে বাড়ছে পারিবারিক সহিংসতা৷ ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়, যদিও পশ্চিমবঙ্গের মতো অনেক জায়গায় অভিযোগ আসছে কম৷ অভিযোগ কম আসার কারণ কী?

https://p.dw.com/p/3bIUN
Symbolbild Misshandlung
ছবি: Colourbox

চিনের উহান থেকে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস৷ সেখানে পরিবারে নির্যাতনের অভিযোগ তিনগুণ বেড়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে অভিযোগের সংখ্যা ৪৭ থেকে ১৬২ হয়েছে৷ ব্রাজিলে বেড়েছে ৪০-৫০ শতাংশ৷ ইতালিতে ফোনে অভিযোগের সংখ্যা কমেছে, কিন্তু ইমেলে অভিযোগ বেড়েছে৷ ভারতে লকডাউন চলাকালীন ক্রমশ বাড়ছে গার্হস্থ্য সহিংসতা৷ জাতীয় মহিলা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২৩ মার্চ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত সহিংসতার ৫৮৭টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে৷ অথচ তার আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত অভিযোগের সংখ্যা ছিল ৩৯৬৷

লকডাউনের ফলে এখন সকলেই ঘরবন্দি৷ স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সঙ্গে বেশি সময় কাটাচ্ছেন৷ এর ফলে হিংসার পরিসর বাড়ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের৷ এর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা দিয়েছেন ভারতের বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারা৷ শচীন টেন্ডুলকার, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, মাধুরী দীক্ষিত, আনুশকা শর্মা, দিয়া মির্জা ভিডিও বার্তায় গার্হস্থ্য হিংসা বন্ধ করার আবেদন জানিয়েছেন৷ তাঁরা জোর দিয়েছেন সহিংসতা বা নির্যাতনের  অভিযোগ জানানোর উপর৷ অনেক ক্ষেত্রেই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে না, নিপীড়িত মহিলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন না বা করার সুযোগ পান না৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি এক অন্য অভিজ্ঞতাকে সামনে এনেছে৷

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘এখানে গার্হস্থ্য সহিংসতার বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়নি। সহিংসতার অভিযোগ জানানোর জন্য আমাদের যে হেল্পলাইন নম্বর রয়েছে সেখানে লকডাউনের সময় অভিযোগ কম এসেছে।'' একই অভিজ্ঞতা দিল্লির স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জাগরী-র। তারাও জানিয়েছে, তাদের হেল্পলাইনে নম্বরে চলতি সময়ে অপেক্ষাকৃত কম অভিযোগ এসেছে। সংখ্যাটা অন্য সময়ের তুলনায় অর্ধেক। এই দু'টি বিপরীত ছবি উঠে আসছে কেন? তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন সমাজকর্মী, অধ্যাপিকা শাশ্বতী ঘোষ। তিনি জানান, ২০০৬ সাল থেকে জাতীয় মহিলা কমিশনের রিপোর্টে নারী নির্যাতনের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের স্থান উপরের দিকে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যে স্বামী তার স্ত্রীর উপর অত্যাচার করে, সে এখন দিনভর বাড়িতে রয়েছে। ফলে নারীদের উপর নির্যাতনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াই স্বাভাবিক। এখন একজন মহিলা অভিযোগ জানানোর সুযোগ পাচ্ছেন না। সকলের সামনে থেকে নির্যাতনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাবেন কী করে? তাকে তো অভিযোগ জানাতে হবে গোপনে।

সমাজকর্মীদের অভিযোগ, এই রাজ্যের সমাজকর্মীদের মতে পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশন কিংবা কলকাতা পুলিশের উইমেন্স সেল এ বিষয়ে ততটা তৎপর নয়৷ তাদের হেল্পলাইন নম্বর রয়েছে৷ কিন্তু, তা বহুল প্রচারিত নয়৷ অথচ জনতার কার্ফিউর দিনই উত্তরপ্রদেশ পুলিশ গার্হস্থ্য হিংসা রোধ করতে বিশেষ প্রচার শুরু করেছে৷ সেখানে মাস্ক পরা মহিলার ছবির সঙ্গে স্লোগান দেওয়া হয়েছে, করোনাকে রোধ করুন, কিন্তু নিজের কন্ঠস্বরকে নয়৷ পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এ ধরনের সক্রিয়তা দেখা গেলে অভিযোগ নিশ্চিতভাবেই বেশি আসতো বলে মত অনেকের৷ লীনা গঙ্গোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, ‘‘মহিলারা নির্যাতনের শিকার হলেও অভিযোগ জানাতে পারছেন না, এটাও অসম্ভব নয়৷ সে কারণে অভিযোগের সংখ্যা কম হতে পারে৷''

একই ছবি দেখা যাচ্ছে শিশু নির্যাতন রোধে চালু হওয়া হেলপ্লাইন-এর ক্ষেত্রে। চাইল্ডলাইন ইন্ডিয়া-র নম্বরে ২০ থেকে ৩১ মার্চের মধ্যে শিশুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ জানিয়ে ৯২ হাজার ফোন এসেছে। অথচ পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেনি। এই রাজ্যের শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে অভিযোগ বৃদ্ধির কোনো ব্যাপার নেই। আগে যা ছিল, এখনো তাই অবস্থা।'' এক্ষেত্রেও অধিকার আন্দোলনের কর্মীদের বক্তব্য, ঘরবন্দি অবস্থায় অভিযোগ জানানোর সুযোগ কমে আসায় লকডাউন পর্বে ফোন বেশি আসছে না। এটা দেখে প্রকৃত পরিস্থিতির আঁচ পাওয়া সম্ভব নয়৷