স্বেচ্ছামৃত্যুতে সাহায্য করা
২২ জানুয়ারি ২০১৪নিজের জীবনাবসান ঘটাতে পারে যে কেউ৷ তা আইনত নিষিদ্ধ নয়৷ বিষয়টি অনেক বছর ধরেই রাজনীতিবিদদের মধ্য বিতর্ক চলছে৷ মরণাপন্ন রোগীদের স্বেচ্ছা মৃত্যুতে সাহায্য করছে কিছু সংগঠন একবারে বৈধভাবেই৷
সক্রিয়ভাবে আত্মহত্যায় সাহায্য করা নিষিদ্ধ
বর্তমান আইন অনুযায়ী সক্রিয়ভাবে কাউকে আত্মহত্যায় সাহায্য করা যাবে না৷ কিন্তু চাইলে তাঁকে প্রাণঘাতী ওষুধ দেওয়া যাবে৷ সমালোচকরা মনে করেন, এর ফলে আত্মহত্যায় সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানগুলির কার্যকলাপ সহজ করা হয়৷
জার্মানির নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিডিইউ-এর হ্যার্মান গ্র্যহে ও সংসদের নিম্মকক্ষের ইউনিয়ন ফ্র্যাকশনের প্রধান ফলকার কাউডার স্বেচ্ছামৃত্যুকে নিয়ে বাণিজ্য করার বিরোধী৷ তাঁরা আইন করে বিষয়টি নিষিদ্ধ করার পক্ষপাতী৷ অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকেও এ ব্যাপারে সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে৷ এসপিডি-এর প্রাক্তন সংসদীয় ফ্র্যাকশন প্রধান ম্যুন্টেফেরিং প্রশ্ন করেন, মানুষকে এত সহজেই তাঁর জীবনের ইতি টানতে দেওয়াটা কী নৈতিক দিক দিয়ে সমর্থনযোগ্য?
সবুজ দলের সাংসদ ফল্কার বেক উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বৃদ্ধ ও কঠিন অসুখে আক্রান্তরা অন্যের বোঝা হওয়ার ভয়ে নিজেকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে নেওয়ার একটা চাপ অনুভব করতে পারেন৷ বেক বলেন, মরণাপন্নদের মানসিক দিক দিয়ে আরো সহায়তা দেওয়া উচিত৷
‘এথিক কাউন্সিল' মাথা ঘামাচ্ছে
সংসদের নিম্নকক্ষের উদ্যোগের গঠিত ‘এথিক কাউন্সিল' বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে৷ এতে রয়েছেন বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা৷ তাঁদের মতে এক্ষেত্রে সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত৷ স্বেচ্ছামৃত্যুতে সক্রিয় সহায়তাদান সুইজারল্যান্ড দণ্ডনীয় অপরাধ নয়, যদি তা ব্যবসার লক্ষ্যে না হয়৷ জার্মানি থেকেও কোনো কোনো রোগী সুইজারল্যান্ডে স্বেচ্ছামৃত্যুতে সাহায্য পাওয়ার জন্য যান৷
জার্মানিতে দেড় বছর আগেও স্বেচ্ছামৃত্যুতে সহায়তা দানের ব্যাপারে আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছিল৷ এতে বলা হয়েছিল, বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে আত্মহত্যায় সাহায্য করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ আইন লঙ্ঘন করলে দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা হতে পারে৷ অবশ্য আত্মীয় স্বজনের বেলায় তা প্রযোজ্য হবে না৷ তবে তৎকালীন সরকারের কোয়োলিশন সহযোগী এফডিপি এই উদ্যোগে বাধা দেয়৷
প্রতিবেশী দেশ বিশেষ করে বেনেলুক্সের দেশগুলিতে স্বেচ্ছামৃত্যুতে সহায়তা দান নিষিদ্ধ নয়৷ বরং বিষয়টি আরো বিস্তৃত হচ্ছে৷ রাজনীতিবিদরা সংসদে অনুমোদিত একটা আইনের অপেক্ষায় আছেন৷ প্রক্রিয়াটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে৷
চিকিৎসকরাও এ ব্যাপারে একমত নন
চিকিৎসকরাও এ ব্যাপারে একমত নন৷ বিশেষ করে পরিবারের বাঁধাধরা ডাক্তার বা হাউস ফিজিসিয়ানরা সমস্যায় পড়বেন এতে৷ তাঁরা রোগীদের কাছাকাছি থেকে চেনেন৷ মরণাপন্ন রোগীদের যন্ত্রণামুক্ত মৃত্যুর ব্যবস্থা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁদেরই করতে হয়৷
এ প্রসঙ্গে ইন্টারনিস্ট ড. মিশায়েল ডে রিডার বলেন, ‘‘একজন ডাক্তারের কর্তব্য রোগীদের মঙ্গল দেখাটা৷ লাইফ সাপোর্ট দিয়ে টিকিয়ে রাখা নয়৷'' বার্লিনের এক হাসপাতালে পালিয়াটিভ বা যন্ত্রণা উপশমক কেন্দ্র স্থাপন করেছেন তিনি৷ সেখানে মৃত্যুপথযাত্রী রোগীদের শেষদিনগুলিতে পেশাগত সাহায্য দেওয়া হয়৷ দেওয়া হয় সেবা শুশ্রূষা৷ ডাক্তার ও রোগীদের মধ্যে একটা গভীর আস্থার সম্পর্ক গড়ে ওঠে৷ চিকিৎসকরা পরিমাপ করতে পারেন রোগীদের মৃত্যুর ইচ্ছাটা কত গভীরে এবং এর কোনো বিকল্প রয়েছে কিনা৷
চিকিৎসকদের নিজেদের অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাস থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আত্মহত্যায় সহায়তা করা কতটা প্রয়োজনীয়৷ ‘‘এই ধরনের পরিস্থিতির যে উদ্ভব হয় সে ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে'', বলেন ড. রিডার৷ অন্যদিকে জার্মান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন স্বেচ্ছামৃত্যুতে সহায়তা দেওয়ার বিরোধী৷ পরোক্ষে সহায়তাদান যেমন রোগীর ইচ্ছানুযায়ী লাইফ সাপোর্টের যন্ত্রপাতি খুলে নেওয়া বা বাঁচিয়ে রাখার ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে৷ কিন্তু এর চেয়ে বেশি কিছু করা হলে সমর্থন করবে না সংগঠনটি৷ বেশিরভাগ চিকিৎসকই স্বেচ্ছামৃত্যুতে সাহায্য করার বিরোধী বলে জানান জার্মান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন-এর প্রেসিডন্ট ফ্রাংক উলরিশ মোন্টগোমারি৷