চিকিৎসকের সাহায্যে স্বেচ্ছামৃত্যু
২৮ জুন ২০১১...যারা এভাবে বাঁচতে চাননা, তাদের বেলায় কী হবে?
জার্মানি সহ ইউরোপের নানা দেশে বহু মরণাপন্ন রোগীকেও নানা ভাবে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়৷ অনেক সময় কৃত্রিম উপায়ে খাবার দিয়ে হলেও৷ তবে এভাবে বেঁচে থাকতে চাননা বহু রোগী৷ জীবনকে মনে করেন অর্থহীন৷ এক্ষেত্রে মৃত্যুকেই শ্রেয় মনে করেন তাঁরা৷ কোনো চিকিৎসক কী রোগীর মরণেচ্ছায় সাহায্য করতে পারেন? বাঁচিয়ে রাখার যন্ত্রপাতিগুলি খুলে নিতে পারেন? কিংবা আরেক ধাপ এগিয়ে গিয়ে সক্রিয়ভাবে আত্নহত্যায় সহায়তা করা কী আইনত সম্ভব? নৈতিক দিক দিয়ে এটা বেশ কঠিন প্রশ্ন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে ও অ্যামেরিকার এক এক অঙ্গরাজ্যে আইনকানুন এক এক ধরনের৷ জার্মানিতে মরণাপন্ন রোগীদের আত্মহত্যায় সাহায্য করা আইনের দিক দিয়ে সিদ্ধ নয়৷ চিকিৎসক পরিষদেরও প্রবল আপত্তি রয়েছে এতে৷ আসলে বিষয়টির পক্ষে বা বিপক্ষে সুস্পষ্ট অবস্থান নেওয়া সহজ নয়৷ মরণাপন্ন রোগী নিঃশ্বাস নিচ্ছেন হয়ত যন্ত্রের সাহায্যে৷ তাঁর জীবনের আর কোন আশা নেই৷ ডাক্তাররা তখন রোগীর নিকট জনের সঙ্গে পরামর্শ করেন৷ জানিয়ে দেন অবস্থা৷ কিন্তু যন্ত্র খুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে একমাত্র রোগীর আপনজনেরা৷
চিকিৎসকের স্বীকারোক্তি
সম্প্রতি এক চিকিৎসক আত্মহত্যায় সাহায্যের কথা প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন৷ যার ফলে বিষয়টি নিয়ে এক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে জার্মানিতে৷ জার্মান টেলিভিশনের এক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে ডাঃ উভে ক্রিশ্টিয়ান আর্নল্ড জানিয়েছেন যে, তিনি বহু রোগীকে আত্মহত্যায় সাহায্য করেছেন৷ একটি প্লাস্টিক ব্যাগ থেকে ছোট এক কৌটা বের করে দেখান তিনি, যাতে রয়েছে সাদা পাউডার৷ ৮০টি ট্যাবলেট গুড়ো করে পাউডার তৈরি করা হয়েছে৷ এই পরিমাণ ওষুধ খেলে মৃত্যু হয় মানুষের৷
শোনা যাক ডাঃ আর্নোল্ড'এর সঙ্গে এক সাংবাদিকের কথোপকথন:
সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনি কী যে সব মানুষ যন্ত্রণায় ভুগছে, তাদের স্বেচ্ছামৃত্যুতে সাহায্য করেন? উত্তরে ডাঃ আর্নোল্ড বলেন, হ্যাঁ৷ প্রশ্ন: কোন ধরনের অবস্থায় এটা করে থাকেন? ডাঃ আর্নোল্ডের উত্তর: ‘‘এটা নিশ্চিত হতে হবে যে, অসুখের কারণে কষ্টটা আর সহ্য করতে পারছেন না রোগী৷''
২০০ মানুষকে সাহায্য করেছেন ডঃ আর্নোল্ড স্বেচ্ছায় জীবননাশে৷ জার্মানিতে আগে কোনো চিকিৎসক প্রকাশ্যে আত্মহত্যায় সাহায্যের কথা বলেননি৷ চিকিৎসক পরিষদ এর ঘোর বিরোধী৷ কোনো ডাক্তার এ কাজ করলে তাঁর লাইসেন্স চলে যেতে পারে৷ জার্মান চিকিৎসক পরিষদের নতুন পরিচালক ফ্রাঙ্ক উলরিশ মন্টগোমেরি আত্মহত্যায় সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বলেন, ‘‘রোগীরা নিজেরাই এটা করতে পারেন৷ এতে তাদের অধিকার আছে৷ আমি তার সমালোচনা করতে চাইনা৷ কিন্তু কোনো ডাক্তারের কাছ থেকে এই ধরনের একটা বাজে কাজে সাহায্য পাওয়ার অধিকার তাদের নেই৷''
চিকিত্সকের সাহায্য না পেলে যা হতে পারে
চিকিৎসা বিষয়ক আইনজ্ঞ ভল্ফগাং পুটস আত্মহননে সহায়তাদান নিষিদ্ধকরণের তীব্র সমালোচনা করেন৷ এর ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নেতিবাচক ফলাফল দেখা দিতে পারে বলে মনে করেন এই আইনবিদ৷ পুটস বলেন, ‘‘সমস্যা হল, অনেক রোগীই শুধু যে সন্দেহজনক প্রতিষ্ঠানের কবলে পড়তে পারেন তাই নয়, গোপনেও বিষাক্ত ওষুধ জোগাড় করতে পারেন৷ এর ফলে এমন সব মানুষও নিজের জীবন নাশ করে ফেলতে পারেন, যাদের হয়তো সুস্থ হতে সাহায্য করা যেত৷ অর্থাৎ এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণটা হারিয়ে যেতে পারে৷ এটাই হল দুঃখজনক৷''
আরেক চিকিৎসকও টিভির ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে স্বীকার করেছেন যে, তিনিও মরণাপন্ন রোগীদের আত্মনাশে সহায়তা করেছেন৷ ১০ বার তিনি এই কাজটা করেছেন৷ নিজের প্রেসক্রিপশন দিয়ে ওষুধ জোগাড় করে মৃত্যু পর্যন্ত রোগীর কাছে থাকেন তিনি৷ এই ডাক্তার জানান, ‘‘এই ওষুধ খাওয়ার পর রোগী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হলে আমি পাশের ঘরে চলে যাই৷ কিন্তু মাঝে মাঝে এসে দেখি এখনও রোগী ঘুমাচ্ছেন নাকি মারা গেছেন৷''
চিকিৎসক পরিষদের নিষেধ সত্ত্বেও এই ধরনের কাজ করে যাবেন বলে জানান এই ডাক্তার৷ আত্মহত্যায় সাহায্য করা, আইনগত দিক দিয়ে খুবই অস্পষ্ট এক বিষয়৷ ডা. মন্টগোমেরি অবশ্য ব্যাপারটি স্বীকার করতে নারাজ৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমার জানা নেই যে, ডাক্তাররা মৃত্যুতে সহায়তা দেওয়ার জন্য কোথাও না কোথাও যাচ্ছেন৷ আমি এরকম কোনো ঘটনা শুনিনি৷''
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক