হতাশ বিদেশি কূটনীতিকরা
১০ নভেম্বর ২০১৩যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছে৷ ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রাবার্ট গিবসন শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মাঝে গঠনমূলক সংলাপের পরিবর্তে আমাদের অব্যাহতভাবে সংঘাতমূলক কার্যক্রম দেখতে হচ্ছে৷ এটি আমাকে হতাশ করেছে৷ কারণ বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করে দুই দলের সংলাপের মাধ্যমে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে সক্ষম হবে৷'' প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পাঁচ শীর্ষস্থানীয় নেতা গ্রেফতার হওয়ার পর বৃটিশ হাইকমিশনার তাঁর এই উদ্বেগের কথা জানালেন৷
এদিকে, ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা ভারত সফরের পর এখন তাঁর নিজের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন৷ তবে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের বর্তমান সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন দৈনিক ইত্তেফাকের বিশেষ প্রতিনিধি মাঈনুল আলম৷ তিনি বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র সব দলকে সংঘাতের পথ পরিহার করে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথে আসার আহ্বান জানিয়েছেন৷''
এই কূটনৈতিক সংবাদদাতা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিক্রয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ তারা বাংলাদেশে কোন সংঘাত দেখতে চায় না৷ মাঈনুল আলম বলেন, ভারতের রাষ্ট্রদূত এখন ঢাকায় রয়েছেন৷ তাই বর্তমান পরস্থিতিতে ভারতও তার অবস্থান দ্রুতই জানাবে বলে মনে করেন তিনি৷
কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা জানান, দু'য়েকদিনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং চীন তাদের অবস্থান স্পষ্ট করবে৷ বাংলাদেশের বর্তমান চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এসব দেশের কূটনীতিকরাও আগে থেকেই তাদের সক্রিয় মতামত জানিয়ে আসছিলেন৷ ধারণা করা হয়, অভ্যন্তরীণ চাপ ছাড়াও বিদেশি কূটনীতিকদের তত্পরতার কারণেই শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে ফোনালাপ সম্ভব হয়েছিল৷
জানা গেছে, শীর্ষ পাঁচ নেতাকে গ্রেফতারের পর বিএনপির অধিকাংশ নেতা আত্মগোপনে থাকলেও তারা বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন৷ আর সরকারের সঙ্গে কূটনীতিকরা যোগাযোগ করে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন৷ তবে এই ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের৷ আগামী নির্বাচন এবং বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত একটি অবস্থানে আসবে কিনা তা দেখার রয়েছে৷ স্বয়ং ওবামা প্রশাসন চাইছে ভারতকে তার অবস্থান পরিস্কার করে বাগে আনতে৷ কারণ এই দু'টি দেশেরই বাংলাদেশে নানা স্বার্থ রয়েছে৷ তারা মনে করে, বাংলাদেশে জঙ্গি এবং মৌলবাদের উত্থান তাদের নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর৷
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘ প্রথম থেকেই চেষ্টা করছে বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক সমঝোতার৷ জাতিসংঘ মহাসচিব দুই নেত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন৷ এছাড়া মহাসচিবের বিশেষ দূত ঢাকায় এসেও দুই নেত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন৷ কিন্তু দুই নেত্রীর ফোনালাপের পর পরিস্থিতি ভাল হওয়ার আশা থাকলেও হয়েছে উল্টো৷ তাই কূটনৈতিক মহলে হতাশা নামাই স্বাভাবিক৷
ইত্তেফাকের সাংবাদিক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক মাঈনুল আলম জানান, ‘‘বাংলাদেশে সবদলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নানভাবেই সক্রিয় আছেন বিদেশি কূটনীতিকরা৷ তাদের এই তত্পরতা থামেনি৷''
বিরোধী পাঁচ নেতাকে আটকের পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে কূটনীতিকরা হতাশা প্রকাশ করলেও সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তারা তাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন বলেই মনে করেন আলম৷ তাঁর মতে, তাদের সেই প্রচেষ্টা অল্প সময়ের মধ্যেই আরো স্পষ্ট হবে৷
এদিকে, ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদও বর্তমান পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অজানা ভবিষ্যত্ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷