হরমোন টেস্টোস্টেরনের আধিক্যে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস
৭ নভেম্বর ২০১১অ্যামেরিকান কলেজ অফ কার্ডিওলোজি'র বৈজ্ঞানিক সাময়িকীতে প্রকাশ করা হয়েছে পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাসের খবর৷ এতে বলা হয়েছে, সুইডেনের ৭০ থেকে ৮০ বছর বয়সি প্রায় আড়াই হাজার মানুষের উপর গবেষণা চালিয়ে এই ফলাফল পাওয়া গেছে৷ তাদের মধ্যে উচ্চ মাত্রার টেস্টোস্টেরন হরমোন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা কম মাত্রার এই হরমোন বিশিষ্ট মানুষদের চেয়ে অনেক বেশি বছর হৃদরোগ কিংবা স্ট্রোকের ছোবল থেকে রক্ষা পেয়েছে৷
অবশ্য এটি ঘটেছে প্রাকৃতিকভাবে এই হরমোনের মাত্রা বেশি থাকায়৷ কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে বাইরে থেকে এই হরমোন গ্রহণের মাধ্যমে একই ফল পাওয়া যাবে কি না - সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷ ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাসের জন্য এখনও এককভাবে টেস্টোস্টেরনকে কৃতিত্ব দেওয়া যাচ্ছে না৷ সুইডেনের গোটেবর্গ শহরের সালগ্রেন্সকা বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের চিকিৎসা বিজ্ঞানী আসা টিভেস্টেন এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা যেটা বলতে পারি তা হলো, বয়স্ক মানুষদের মধ্যে যাদের দেহে উচ্চ মাত্রার টেস্টোস্টেরন রয়েছে, তারা হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে অনেক বেশি নিরাপদ৷ আর এই হরমোনের মাত্রা যাদের দেহে কম তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি৷''
অপরাপর গবেষণায় জানা গেছে যে, অতিরিক্ত মোটা হওয়া তথা ওবেসিটি-সহ দেহে যে কোনো ধরণের মারাত্মক রোগের কারণে এই হরমোনের পরিমাণ কমে যায়৷ তবে সাম্প্রতিক এই গবেষণায় দেখা গেছে, টেস্টোস্টেরন হরমোনের হ্রাসের পেছনে আরো কিছু কারণ৷ এর মধ্যে রয়েছে মানুষের ওজন, রক্ত চাপ, বহুমূত্র রোগ এবং কম বয়সেই হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঘটনা৷ দেহে টেস্টোস্টেরনের মাত্রার উপর ভিত্তি করে এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মোট চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ এদের মধ্যে সবচেয়ে কম মাত্রার টেস্টোস্টেরন বিশিষ্ট ৬০৪ জনের মধ্যে ২১ শতাংশ প্রায় পাঁচ বছর ধরে হৃদরোগ, মারাত্মক বুকের ব্যথা এবং স্ট্রোকের শিকার হয়৷ অন্যদিকে, সবচেয়ে বেশি মাত্রায় এই হরমোন বিশিষ্ট ৬০৬ জনের মধ্যে ১৬ শতাংশ হৃদরোগের শিকার হয়৷ এই ভাগের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্য তিনটি ভাগের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম হৃদরোগের ঝুঁকি লক্ষ্য করেছেন বিজ্ঞানীরা৷
উচ্চ মাত্রার টেস্টোস্টেরনের ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাসের পেছনে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, বেশি পরিমাণে এই হরমোন থাকার অর্থই হচ্ছে দেহে চর্বির পরিমাণ কম থাকা এবং সুস্থ পেশীর আধিক্য৷ তবে বোস্টন নারী হাসপাতালের রোগ প্রতিরোধ বিভাগের প্রধান জোয়ান ম্যানসন মনে করছেন, এই গবেষণালব্ধ ফল এটা নিশ্চিত করে না যে, হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাসের ক্ষেত্রে এককভাবে টেস্টোস্টেরনের ভূমিকা রয়েছে৷ বরং এক্ষেত্রে আরও কোনো উপাদানের ভূমিকা থাকতে পারে৷ তাঁর মতে, ‘‘টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম থাকাটা দেহে অপর কোনো উপাদানের ঘাটতি নির্দেশক হতে পারে৷ আর তার কারণেই হয়তো হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়৷''
তাই ম্যানসনের দাবি, হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাসে টেস্টোস্টেরনের ভূমিকা নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরীক্ষা করে দেখতে হবে, বয়স্ক মানুষের দেহে টেস্টোস্টেরন প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে একই ফল পাওয়া যাচ্ছে কিনা৷ সেটা নিশ্চিত হওয়ার আগে বয়স্ক মানুষদের এখনই টেস্টোস্টেরন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির মাধ্যমে এই হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধির চেষ্টা করা উচিৎ হবে না বলেই মন্তব্য করেন ম্যানসন৷ কারণ টেস্টোস্টেরন প্রতিস্থাপন কোলেস্টেরল এবং রক্তে চিনির মাত্রা বৃদ্ধির মতো মধ্যবর্তী কিছু ঘটার আশঙ্কা থাকে৷ যেমনটি ঘটেছে নারীদের হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি - এইচআরটি'র ক্ষেত্রে৷ ২০০২ সালের আগে অনেক নারী এইচআরটি'র দিকে ঝুঁকেছিল৷ কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত এইচআরটি'র ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার পর দেখা গেছে, এসট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন সমৃদ্ধ বড়ির মাধ্যমে এইচআরটি'র ফলে রক্ত জমাট বাঁধা, হৃদরোগ এবং স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধির প্রবণতা৷ তাই স্বাভাবিক পন্থায় দেহে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেশি থাকলে ভালো, কিন্তু তা না থাকলে এখনই টেস্টোস্টেরন প্রতিস্থাপন না করার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. ম্যানসন৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ