হাঙরের ত্বকের আদলে বিমান, জাহাজ, উইন্ডমিল
৭ জুন ২০১৪হাঙর প্রায় বিনা বাধায় পানির মধ্যে এগিয়ে চলে৷ তাদের ত্বকে যে ক্ষুদ্র ‘রিবলেট' রয়েছে, সেগুলিই এটা নিশ্চিত করে৷ এই আঁশগুলি এমনভাবে সাজানো যে, হাঙরের ত্বক স্রোতের ধাক্কা কমিয়ে আনতে পারে৷
বিজ্ঞানীরা এই কাঠামো প্রযুক্তিগতভাবে অন্যান্য সারফেস বা পৃষ্ঠভাগের উপর প্রয়োগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ হাঙরের ত্বকের আদলে তৈরি সাঁতারের পোশাক পরে অ্যাথলিটরা গত কয়েক বছরে অনেক রেকর্ড ভাঙতে পেরেছেন৷ এই ‘রিবলেট' নৌকা দৌড়ের গতিও বাড়িয়ে দিয়েছে৷ এমনকি বিমানের উপরেও একটি ‘রিবলেট'-এর স্তর পরীক্ষা করা হয়েছে৷ তবে সেই ফয়েল এখনো পুরোপুরি ব্যবহারের উপযোগী হয়নি৷
ব্রেমেন শহরে ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউট এবার এমন এক তরল পদার্থ তৈরি করেছে, যা রংয়ের মতো লাগালে হাঙরের ত্বকের গুণাগুণ নকল করা সম্ভব৷ এই রং অত্যন্ত জটিল মালমশলা দিয়ে তৈরি৷ সূর্যের অতি-বেগুনি রশ্মি, তাপমাত্রার হেরফর এবং চাপ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে এই পদার্থ৷ ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের ইভন ভিলকে বলেন, ‘‘যে কোনো রংয়ের মতো এই রংয়েরও প্রয়োজনীয় গুণাগুণ থাকতে হবে৷ তবে বিমানে লাগাতে হবে বলে তাপমাত্রার বিশাল হেরফের সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে৷ ১০,০০০ মিটার উচ্চতায় সূ্র্যের আলোর অভাব নেই৷ চাই প্রবল ঘর্ষণ প্রতিরোধের ক্ষমতাও, যাতে রিবলেট ও তার গোড়া টেকসই হয়৷''
গবেষকরা এই রং সমানভাবে ছড়িয়ে দিতে বিশেষ এক প্রক্রিয়াও তৈরি করেছেন৷ হাঙরের ত্বকের কাঠামো রংয়ের মধ্যে চেপে বসিয়ে দেওয়া হয়৷ অতি বেগুনি রশ্মি তাকে আরও শক্ত করে তোলে, যাতে তা ছড়িয়ে না যায়৷
চওড়া এক চোঙা স্টেনসিলের মধ্যে রং পুরে দেয়৷ নীচের বাঁ-দিকে সেটি তরল রংয়ের উপর অতি ক্ষুদ্র ‘রিবলেট' খোদাই করে৷ একই সঙ্গে অতি বেগুনি রশ্মির ল্যাম্প রংকে শক্ত করে তোলে৷ ফলে হাঙরের ত্বকের কাঠামো অক্ষত থাকে৷
গবেষকরা ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের নীচে নিয়মিত সেই ‘রিবলেট'-এর কাঠামোর মান পরীক্ষা করেন৷ মাত্র কয়েক মাইক্রো মিটার চওড়া খাঁজ পানিকে উত্তাল হতে দেয় না, ঠিক যেমনটা হাঙরের ত্বকের ক্ষেত্রে ঘটে৷ ফলে জ্বালানির সাশ্রয় ঘটে৷ ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের ড. ফল্কমার স্টেনৎসেল বলেন, ‘‘এমন সারফেসের এয়ারোডায়নামিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, এমন স্তরের মাধ্যমে ঘর্ষণের মাত্রা প্রায় ৭ শতাংশ কমানো সম্ভব৷ ফলে বাস্তবে জাহাজ বা বিমানে এমন স্তর ব্যবহার করলে জ্বালানি বাঁচানো সম্ভব হবে৷''
উইন্ড মিলে এমন স্তর বসালে আরও জ্বালানি সাশ্রয় করা সম্ভব৷ ড. স্টেনৎসেল বলেন, ‘‘আমরা উইন্ড মিলের চ্যানেল পরিমাপ করে দেখেছি৷ বিশেষ স্তর বসানো এবং সাধারণ পাখার মধ্যে তুলনা করেছি৷ তাতে দেখা গেছে, এই স্তর থাকলে ‘গ্রাইড রেশিও' প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে৷ অর্থাৎ একদিকে পাখার ধাক্কা, অন্যদিকে বাতাসের চাপ – এই দুইয়ের মধ্যে সংঘাত কমে যায়৷ ফলে এমন উইন্ড মিলে অনেক বেশি জ্বালানি উৎপাদন করা সম্ভব৷''
যেখানেই বাতাস বা পানির ‘রেজিস্টেন্স'-এর ভূমিকা রয়েছে, সে সব ক্ষেত্রে হাঙরের ত্বকের গুণাগুণসম্পন্ন রং জ্বালানি উৎপাদনের খরচ কমাতে পারে, গোটা প্রক্রিয়ার আরও উন্নতি ঘটাতে পারে৷ তখন কার্বন নির্গমনের মাত্রাও কমে যায়৷