1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হাসিনা সুযোগ পেয়েছিলেন, খালেদা পাচ্ছেন না

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৩ জুন ২০১৮

বিএএনপি'র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তাঁর পছন্দের হাসপাতালে পাঠাবে না সরকার৷ অথচ এক সময় শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া দু'জনেই বন্দি অবস্থায় চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল বেছে নেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন৷

https://p.dw.com/p/2zTza
Bangladesch Khaleda Zia
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/A. M. Ahad

ওয়ান ইলেভেনের সময় গ্রেপ্তার হওয়ার পর শেখ হাসিনা স্কয়ার হাসপাতালে ১৫ দিন ভর্তি ছিলেন৷ তখন খালেদা জিয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল ইউনাইটেড হাসপাতাল৷

ওয়ান ইলেভেনের সময় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি প্রিজন ছিলেন মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ তখন দুই নেত্রী শেখ হাসিনা(বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) এবং খালেদা জিয়াকে(সাকেব প্রধানমন্ত্রী) গ্রেপ্তার করার পর তাঁদের সংসদ ভবন এলাকার সাবজেলে রাখা হয়েছিল৷ ওই সময়ে  চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনাকে বেশ কয়েকবার সাব জেল থেকে স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়৷ তাঁকে একবার ১৫ দিন ভর্তিও রাখা হয় স্কয়ার হাসপাতালে৷ অন্যদিতে খালেদা জিয়ার  চিকিৎসার জন্য ইউনাইটেড হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছিল৷ সেখানে চিকিৎসার জন্য নেয়ার অনুমতিও ছিল৷ কিন্তু তখন কারাগারে থাকা অবস্থায় প্রয়োজন হয়নি বলে তাঁকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয়নি৷ প্রয়োজন হলে নেয়া হতো৷ দু'জনকেই তাঁদের পছন্দমতো চিকিৎসা সৃবিধা দেয়া হয় তখন৷''

তিনি বলেন, ‘‘তবে কারাবিধি অনুযায়ী কারাবন্দিদের কারা হাসপাতাল বা অন্য কোনো সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়৷ যদি সরকারি হাসপাতালে সেই চিকিৎসা সুবিধা না থাকে, তাহলে প্রাইভেট হাসপাতালে নেয়া যায়৷ যেমন, ঢাকার বাইরে, যেমন ধরুন যশোর জেনারেল হাসপাতালে এক্সরে মেশিন নষ্ট, সেক্ষেত্রে বাইরের হাসপাতালে এক্সরে করানো হয়৷ তবে কারাবিধি'র চেয়েও বড় কথা হলো সরকারের ইচ্ছা৷ সরকার প্রয়োজন মনে করলে কারাবন্দি যে কাউকে যে কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে পারে৷'' 

শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া দু’জনেই বন্দি অবস্থায় চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল বেছে নেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি  বলেন, ‘‘সরকার যদি নিজের ইচ্ছায় কোনো কারাবন্দিকে প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠায়, তাহলে তার খরচ সরকারই বহন করে৷ কিন্তু কেউ যদি সরকারি হাসপাতালে সুযোগ থাকার পরও কোনো প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নেন, তাহলে তার খরচ তিনি নিজে বা তার পরিবার বহন করবেন৷ এটাই নিয়ম৷''

তিনি আরো জানান, ‘‘বাংলাদেশের কারা হাসপতালগুলোতে চিকিৎসার ব্যবস্থা ভালো না৷ পর্যাপ্ত জনবলও নেই৷ সাধারণভাবে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন পড়লে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-তে চিকিৎসা দেয়া হয়৷''

জানা গেছে, ওয়ান ইলেভেনের সময় খালেদা জিয়ার দুই ছেলে তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা দেয়া হয়৷ পরে তারা চিকিৎসার জন্য জামি নিয়ে দেশের বাইরে চলে যান৷ আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল এবং মোহাম্মদ নাসিম প্রথমে বিএসএমএমইউ-তে এবং পরে ল্যাব এইডে ভর্তি ছিলেন৷

খালেদা জিয়ার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য তাঁর ভাই শামীম ইস্কান্দার মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একটি আবেদন করেন৷ এর আগে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার সুপারিশ করেছেন৷ কিন্তু সরকার খালেদা জিয়াকে তাঁর পছন্দের হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ দেবে না৷ খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদন পাওয়ার পর ওইদিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, খালেদা জিয়া চাইলে তাঁকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল(সিএমএইচ)-এ চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে৷

 বিএসএমএমইউ-তে খালেদার চিকিৎসার জন্য সব প্রস্তত আছে৷ এর আগে একবার খালেদা জিয়াকে ওই হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল৷  মঙ্গলবারও খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউতে আনার চেষ্টা করে কারা কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু খালেদা জিয়া রাজি হননি৷ বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ‘‘এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়া বিএসএমএমইউ অথবা সিএমএইচ কোনো হাসপাতালেই চিকিৎসার জন্য সম্মত হননি৷''

‘একজন ব্যক্তি তার পছন্দ অনুযায়ী চিকিৎসক পছন্দ করতে পারেবন এটা তার হিউম্যান রাইট’

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক নিউরো সার্জন অধ্যাপক সৈয়দ ওয়াহিদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা কারাগারে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার কথা বলেছি৷ আমরা লিখিত সাজেশন দিয়েছি৷ কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা হলো, একজন ব্যক্তি তাঁর পছন্দ অনুযায়ী চিকিৎসা সুবিধা নিতে পারবেন৷ চিকিৎসক পছন্দ করতে পারবেন৷ এটা তাঁর হিউম্যান রাইট৷ সুতরাং, খালেদা জিয়ার অধিকার আছে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার৷ তাঁকে এখন যে সিএমএইচ-এ চিকিৎসার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, সেখানে কী ধরনের চিকিৎসাসুবিধা আছে, তা আমরা জানি না৷ আর ওই হাসপতালে আমরা সাধারণ মানুষ চিকিৎসা নিতে অভ্যস্ত নই৷''
গত শনিবার খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা কারাগারে দেখা করেন৷ দেখা করার পর তাঁরা সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘গত ৫ জুন খালেদা জিয়া কারাগারে মাইল্ড স্ট্রোক করেছিলেন৷'' ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবং খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎক দলের সদস্য ডা. এফএম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘গত ৫ জুন বেলা ১টার দিকে খালেদা জিয়া দাঁড়ানো অবস্থায় হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যান৷ ৫-৭ মিনিট পর তাঁর জ্ঞান ফিরলেও ওই সময়ের কথা কিছুই মনে করতে পারছেন না৷ তাঁর অ্যাটেনডেন্ট যে মেয়েটি ছিল, সে অনেক চেষ্টা করে তুলে বসিয়েছে৷ আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি, তাঁর টিআইএ (ট্রানজিয়েন্ট স্কিমিক অ্যাটাক) হয়েছে৷ এটা মাইল্ড স্ট্রোকের মতো৷''

বুধবার অধ্যাপক সৈয়দ ওয়াহিদুর রহমান জানান, ‘‘এছাড়া তাঁর কিছু ক্রনিক ডিজিজ আছে৷ তাঁর যা পরিস্থিতি, ঠিকমতো চিকিৎসা না হলে আগামী তিন মানের মধ্যে তাঁর স্ট্রোকের আশঙ্কা আছে৷''

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বুধবার বিএনপিকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে ‘রাজনীতি' না করার অনুরোধ জানিয়েছেন৷ তিনি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) হচ্ছে দেশের সবচেয়ে ভালো হাসপাতাল৷ এর চেয়ে ভালো চিকিৎসা আর কোথায় আছে? খালেদা জিয়া একটা বড় দলের চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী৷ যদি তিনি চিকিৎসা চান, তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়য়ের মতো সিএমএইচ-এর বিষয়টা প্রত্যাখ্যান করা উচিত হবে না৷ আর যদি রাজনীতি করেন, তাহলে ভিন্ন কথা৷''

আর বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশররফ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সরকার খালেদা জিয়াকে  ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে না৷ খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সে কথা বাদই দিলাম, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে তিনি যেখানে চিকৎসা করাতে চান, সেখানে চিকিৎসার সুযোগ পান৷ কিন্তু সরকার ইচ্ছা করেই তাঁর চিকিৎসা আটকে দিচ্ছে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য