হোলির ছুতায় যৌন হয়রানি
১০ মার্চ ২০২০‘বুরা না মানো হোলি হ্যায়'- এই বাক্য ভারতে বছরের একটি বিশেষ সময়ে রাস্তাঘাটে শুনতে পাওয়া যায়৷ ‘রাগ করবেন না, আজ তো হোলি!' কারো গায়ে রঙ মাখানো উৎসব পালনের সার্থকতার জন্য প্রয়োজন, তাই ঘুরেফিরে বিভিন্ন পরিসরে শুনতে পাওয়া যায় এই বাক্য৷ কিন্তু এই একই বাক্য আজ হোলিতে রঙ মাখানোর অছিলায় যৌন হয়রানির প্রেক্ষাপটেও প্রযোজ্য হয়ে উঠেছে৷
বিনা অনুমতিতে যে কোনো নারীকে রঙ মাখানোর নামে তার শরীরে হাত দেওয়া, পরিকল্পিতভাবে দল বেঁধে কোনো নারীকে যৌন হয়রানির শিকার বানানো, এসবই ভারতের বসন্তকালীন বাস্তবতা৷ শুধু তাই নয়, জোর করে ভিনধর্মী নারীর গায়ে রঙ মাখানোর ঘটনাও ঘটেছে ভারতে৷ আপত্তি জানাতে গেলেই শোনা যায় ‘বুরা না মানো,হোলি হ্যায়'! গোটাটাই যেন উৎসব৷
অনুমতি নিতে জানে না যে সমাজ
২০১৯ সালের জনপ্রিয় বাংলা ছবি ‘পরিণীতা'তে ছিল একটি দৃশ্য৷ লাল আবিরের সাথে সিঁদুর মিশিয়ে হোলি খেলার দৃশ্য ছিল সেখানে, যাতে রঙ মাখাচ্ছে ভেবে অজান্তেই নায়কের সাথে নায়িকার ‘বিয়ে' হয়ে যায়৷ এই ছবিটি সমালোচনার মুখোমুখি হলেও পরে এর থেকে অনু্প্রাণিত হয়ে কিছু পুরুষ লুকিয়ে আবিরের সাথে সিঁদুর মিশিয়ে হোলি খেলেছেন এবছর, বলে সোশাল মিডিয়ায় উঠে এসেছে৷ হোলির জমায়েতেও পাওয়া গেছে অসংখ্য খালি সিঁদুরের প্যাকেট৷
অনুমতি ব্যতীত সিঁদুর পরানো আর উৎসব উদযাপনের অজুহাতে জোর করে গায়ে হাত দেওয়া, হয়রানি করা কি আসলে কোথাও গিয়ে আমাদের সমাজে অনুমতির অপ্রয়োজনীয়তাকে বোঝায় না? আসলেই কতটুকু গুরুত্ব দেয় সমাজ নারীর শরীরের ওপর তার নিজের অধিকারকে?
দশকের পর দশক ধরে একই চিত্র
২০১৮ সালে দিল্লীর একটি ঘটনা আরো ভয়াবহ এক বাস্তবের সাথে পরিচয় করিয়ে ছিল আমাদের৷ এক নারীকে উদ্দেশ্য করে রঙভরা বেলুন ছোঁড়া হয়৷ পরে দেখা যায় সেই বেলুনে ছিল পুরুষের বীর্য! সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, ওই ঘটনার পর সেই নারী আর কোনো দিন হোলি খেলবেন না বলেছিলেন৷ এতটাই ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি৷
প্রায় দুই দশক আগে ১৯৯৬ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা জানায় যে ভারতে হোলি পালন করেন এমন নারীদের শতকরা ৬০ শতাংশই উৎসব পালন করতে গিয়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন৷
১৪ বছর পার হলেও এই চিত্র খুব একটা বদলায়নি৷ বরং বিভিন্ন গণমাধ্যমে যেভাবে ‘ক্যাজুয়াল সেক্সিজম' দেখতে পাই আমরা, তা থেকে এই বাস্তবতা বদলানো অদূর ভবিষ্যতে অসম্ভব৷ নারীকে স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসাবে যত দিন না দেখতে শিখবে সমাজ, তার অনুমতি বা মতামতকে যত দিন না গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে মানা হবে, তত দিন নারীর অধিকার নারীর নিজের হাতে থাকবে না৷
উৎসব পালনের বা চলচ্চিত্রে বিনোদনের অজুহাতে তার হয়রানি আর পাঁচটা ঘটনার মতোই স্বাভাবিক মনে হবে৷