ক্যানসার দিবস
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১২ইউআইসিসি বিশ্ব ক্যানসার দিবসের সমন্বয় করে থাকে প্রতিবছর৷ যাতে ৮৬ টি দেশের ৩০০-র মত সংগঠন অংশ গ্রহণ করে৷ এর মধ্যে রয়েছে জার্মান ক্যানসার সমিতি, জার্মান ক্যানসার সাহায্য সংস্থা, জার্মান ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্র ইত্যাদি৷ দিনটিকে ঘিরে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়৷ এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি৷
সারা বিশ্বে প্রতি বছর ১ কোটি ২০ লক্ষেরও (১২ মিলিয়ন) বেশি মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়৷ মারা যায় সাড়ে সাত লক্ষের বেশি৷ এই মারণ ব্যাধিকে আয়ত্তে আনার জন্য চিকিত্সক ও গবেষকরা অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ পুরুষরা ফুসফুস, শ্বাসনালির ক্যানসারে মারা যান বেশি৷ মেয়েদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্তনের ক্যানসার৷ বিশেষজ্ঞদের আশংকা ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতি বছর ২ কোটি ৬০ লক্ষ (২৬ মিলিয়ন) মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হবে, মারা যাবে ১ কোটি ৭০ লক্ষ৷
মারণব্যাধি হিসাবে ক্যানসারের স্থান দ্বিতীয়
জার্মানিতে যে সব রোগে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় মানুষ মারা যায় তার মধ্যে ক্যানসারের স্থান দ্বিতীয়৷ হৃদরোগের পরেই৷ প্রতি চার জনে একজনই মারা যায়৷ ২০১০ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২ লক্ষ ১৮ হাজার ৮৮৯ জন মৃত্যু বরণ করেন৷ বেশির ভাগ ফুসফুস ও শ্বাসনালির ক্যানসারে৷ ৪৩ হাজার মানুষ মারা যান এই ক্যানসারে৷ এরপরই ছিল স্তনের ক্যানসারে মৃত্যু৷ ১৭ হাজার ৫৭৩ জন মারা যান এই রোগে৷ তৃতীয় স্থানে ছিল মলাশয়ের ক্যানসার৷ ১৭ হাজার ১৬১ জনের জীবন কেড়ে নেয় এই ক্যানসার৷
অনেক ক্যানসার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে নিরাময় সম্ভব৷ যেমন স্তন, জরায়ু, থাইরয়েড, প্রস্টেট ক্যানসার ইত্যাদি৷ কিছু ক্যানসার উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়৷ এর মধ্যে পড়ে ফুসফুস, স্বরযন্ত্র, মূত্রথলি, অস্থি'র ক্যানসার৷ এছাড়া প্রশমন বা প্যালিয়েটিভ চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক রোগীর যন্ত্রণা লাঘব করা সম্ভব৷
হাইডেলব্যার্গের ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্র জানায়, ভবিষ্যতে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে সবচেয়ে বেশি৷ এখন ধূমপান রয়েছে প্রথম স্থানে৷ গবেষক হেরমান ব্রেনার বলেন, গত কয়েক বছরে স্থূলাকার মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে, তাই ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও বাড়বে৷ বিশেষ করে কিডনি, মলাশয় ও স্তনের ক্যানসারের ক্ষেত্রে এই আশংকা রয়েছে৷
জার্মান ফেডারেল দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১০ সালে ক্যানসারে মারা যাওয়া মানুষের মধ্যে ২৩ শতাংশের বয়স ছিল ৬৫ বছরের কম৷ ছোট ছেলে মেয়েদের অধিকাংশই মারা যায় ব্লাড ক্যানসার ও মস্তিষ্কের টিউমারে৷
ক্যানসার নিরোধে কর্মসূচি
২০১০ সালে জার্মান ক্যানসার সাহায্য সংস্থার তত্কালীন প্রেসিডেন্ট নোবেল পুরস্কারজয়ী হারাল্ড সুর হাউজেন ক্যানসার দিবস উপলক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী মানুষের চিন্তাধারায় পরিবর্তন আনার এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন৷ এই গবেষক মনে করেন, মা বাবারা যদি স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের মাধ্যমে বাচ্চাদের সামনে একটা আদর্শ স্থাপন করতে পারেন, তাহলে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসবে৷ এবছরও ক্যানসার দিবস উপলক্ষ্যে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেয়া হচ্ছে৷ ইউআইসিসি-র উদ্যোগে অনলাইনে এক স্বাক্ষর কর্মসূচির ব্যবস্থা করা হয়েছে, যার লক্ষ্য ২০২০ সালের মধ্যে ক্যানসারকে নিয়ন্ত্রণে আনা৷ এক বিবৃতিতে বিশ্বের যে কোনো স্থানের মানুষের নাম সই করার আহ্বান জানানো হয়েছে৷ যত মানুষ এগিয়ে আসবে, ততই কার্যকর হবে এই কর্মসূচি৷ বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাজনীতিকরা প্রণোদিত হবেন ক্যানসার দমনে নানা পদক্ষেপ নিতে৷ ওজন কমানো, ধূমপান ত্যাগ করা, লিভার ও জরায়ুর ক্যানসার রোধে টিকার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে৷ এছাড়া বলা হয়েছে প্রতিটি মানুষেরই ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করার, সুচিকিত্সা ও ব্যথানিরোধক থেরাপি পাওয়ার অধিকার রয়েছে৷
বাংলাদেশেও পালিত হল দিবসটি
বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ৷ প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ রোগী ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে ২ লক্ষ৷ ক্যান্সারে মৃত্যুর ২০ ভাগ ঘটে ধূমপানের কারণে৷ ধূমপান ও তামাক সেবন থেকে বিরত থাকলে ৪০ ভাগ ক্যানসার হ্রাস করা যেত৷
জ্ঞান ও সুচিকিৎসার অভাবে এ রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে৷ ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে রোগী অনুপাতে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও চিকিত্সক নেই৷ ১২ লাখ ক্যানসার রোগীর জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন ১০০-র কিছু বেশি৷
বিশ্ব ক্যানসার দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, দিগন্ত মেমোরিয়াল ক্যান্সার ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহছানিয়া মিশন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা ধরনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে৷ এর মধ্যে ছিল আলোচনাসভা, পথসভা, বিনামূল্যে চিকিত্সা দেয়া, সচেতনতা জাগানোর কর্মসূচি ইত্যাদি৷
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক