‘৪৮ বছরেও বিচার হবে না'
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজাবাজারের ভাড়া বাসা থাকে নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ৷ সাগর বেসরকারি চ্যানেল মাছরাঙা টিভির বার্তা সম্পাদক ও রুনি এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কাজ করছিলেন৷
গত চার বছরে এই মামলার তদন্ত থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ হয়ে র্যাব-এর হাতে পৌঁছেছে৷ পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ব্যার্থতার কারণে শুরুতেই আদালতের নির্দেশে র্যাব গত সাড়ে তিন বছর ধরে এই মামলার তদন্ত করছে৷ কিন্তু এত দীর্ঘ একটা সময়ে কোনো আসামিকেই চিহ্নিত বা আটক করতে পারেনি ব়্যাব৷ সাগর-রুনিকে কেন খুন করা হয়েছিল, মানে তাঁদের ওপর হামলার ‘মোটিভ'-ও তারা এখনো জানে না৷ ব়্যাব-এর তদন্ত, কবর থেকে দু'জনের লাশ তুলে ‘ভিসেরা' (রাসায়নিক) পরীক্ষা এবং ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে ‘ফরেনসিক' পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণাগারে পাঠানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ৷
র্যাব-এর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো ডিএনএ প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে৷ এর বাইরেো প্রয়োজন অনুযায়ী সব কিছুই করা হচ্ছে৷''
অথচ ঠিক চার বছর আগে হত্যাকাণ্ডের দিনই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিরা গ্রেপ্তার হবে বলে জানিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন৷ সেই প্রতিশ্রুতির কথা মনে করে সাগরের মা সালেহা মুনির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন আমার মনে হচ্ছে ৪৮ ঘণ্টা নয়, ৪৮ বছরেও সাগর-রুনি হত্যার বিচার হবে না৷ এই মামলা নিয়ে নানা নাটক হয়েছে৷ কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি৷ কোনো একটি মহলকে বাঁচাতে মামলার তদন্ত হচ্ছে না৷ আমার মনে হয়, তারা হয়ত অনেক শক্তিশালী৷''
তিনি আরো জানান, ‘‘তদন্তকারীরা তো আর যোগাযোগও করেন না৷ আসলে এই দেশে বিচার হয় না৷ আমি বিচার পাবো না৷ আমি হতাশ, আমি হতাশ, আমি হতাশ...৷''
রুনির ভাই নওশের রোমান এ বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘র্যাব মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করেছে গত অগাস্টে, অথচ আমাদের জানানো হয়নি৷ আমরা খবর পেয়ে যোগাযোগ করলে তিনদিন আগে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা আমাদের বাসায় (রুনির মায়ের বাসা) এসেছিলেন৷ কিন্তু তাঁর কাছে মামলার তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি কোনো অগ্রগতির কথা আমাদের জানাতে পারেননি৷''
নওশের বলেন, ‘‘এই মামলার তদন্তের নামে আমাদের হয়রানিও করা হয়েছে৷ কিন্তু অপরাধীরা আজও ধরা ছোয়ার বাইরেই থেকে গেছে৷ এ মুহূর্তে মামলাটির কোনো তদন্ত হচ্ছে না৷ এটা হিমঘরে পাঠানো হয়েছে৷''
মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-এর সহকারী পুলিশ সুপার ওয়ারেশ আলী সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রে যে আলামত পাঠানো হয়েছিল, তা থেকে কারুর পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া যায়নি৷ ঢাকা থেকে ২১ জন সন্দেহভাজনের ডিএনএ নমুনা আলামতের নমুনার সঙ্গে মেলানোর জন্যও পাঠানো হয়৷ কিন্তু ২১ জনের মধ্যে কারুর নমুনাই আলামতের ডিএনএ-র সঙ্গে মেলেনি৷''
এর জবাবে সাগরের মা সালেহা মুনির এবং রুনির ভাই নওশের রোমান জানান, ‘‘এইসব নাটক করেই তদন্তের নামে সময় কাটানো হয়েছে৷ তাই এখন আমরা বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছি৷''
তাঁদের একটাই প্রশ্ন, ‘‘খুনিরা কি সরকারের চেয়েও শক্তিশালী?''
প্রসঙ্গত, নিহত দম্পতি মৃত্যুর সময় তাঁদের একমাত্র সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘকে রেখে গেছেন৷ নওশের জানান, ‘‘মেঘ এখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে৷ সে এখন অনেক স্বাভাবিক৷''
বন্ধু, আপনার কী মনে হয়? সাহর-রুনির হত্যাকাণ্ডের বিচার কি আদৌ হবে? লিখুন নীচের ঘরে৷